পৃখিবীর সব মাকে সন্মান জানাতে প্রতিবছর ৮ মে বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় বিশ্ব মা দিবস। একজন মায়ের কাছে সন্তানের চেয়ে বড় সম্পদ যেমন কিছু নেই, তেমনি সন্তানের কাছে মায়ের চেয়ে বড় আর কিছুই হতে পারে না।
বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ও অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদারের একমাত্র ত্রপা মজুমদার। বাবা-মায়ের পথ ধরে ত্রপা মজুমদারও অভিনয়ে এসেছেন। টিভিনাটকে তাকে তুলনামূলক কম দেখা গেলেও মঞ্চে নিয়মিত অভিনয় করছেন। থিয়েটার নাট্যদলের একাধিক প্রযোজনার নির্দেশনাও দিয়েছেন ত্রপা । বিজ্ঞাপনী সংস্থা এক্সপেশনে কর্মরত আছেন।
অভিনয়ে আসা প্রসঙ্গে মা ফেরদৌসী মজুমদারের প্রভাবের কথা জানিয়ে ত্রপা মজুমদার বললেন, বাবা-মা আমাদের পরিবারে যতোটুকু সময় দিতেন তার চেয়ে অনেক বেশি সময় দিতেন থিয়েটারে। মাকে যতোটা কাছে পেয়েছি, বাবাকে তারচেয়েও কম পেয়েছি। থিয়েটারে মায়ের অভিনয় দেখেই মনে মনে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি, আমাকে অভিনয় করতে হবে। মা-বাবা কেউ অবশ্য আমার উপর থিয়েটার বা অভিনয় চাপিয়ে দেন নি। মা হচ্ছে আমার আমার অভিনয় আর থিয়েটারে আসার প্রধান অনুপ্রেরণা।
নিজের মধ্যে মায়ের প্রভাব উল্লেখ করে ত্রপা মজুমদার বলেন,আমি সবসময়ই আমার প্রিয় ‘মা’ কে অনুসরন করেছি। এতো বড় হয়ে উঠার পরও মাকেই অনুসরণ করছি। প্রতিনিয়ত আমি তার কাছ থেকে শিখেছি। সেই ছোটবেলায় যখন থেকে কিছু বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই বুঝেছি মায়ের গুরত্ব। আসলে মায়ের আছে প্রচন্ড ভালবাসার ক্ষমতা। যার ছিটেফোঁটাও আমার মধ্যে নেই। আমার মায়ের ভেতরের সৃষ্টিশীলতাই আসলে আমাকে সৃজনশীল পেশায় আসতে প্রভাবিত করেছে।
মায়ের কাছ থেকে ত্রপা প্রতিনিয়ত শিখছেন এবং নিজেকে আবিস্কার করছেন নতুনভাবে। মা সম্পর্কে বলতে গিয়ে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করলেন ত্রপা মজুমদার। তিনি বললেন, সম্প্রতি পুরানা পল্টনে থিয়েটার স্কুল কার্যালয়ে পান্থ শাহরিয়ারের লেখা ‘বারামখানা’ নাটকের নির্দেশনা দিচ্ছিলাম আমি। সেদিন মহড়াকক্ষে রাত ৮টার সময় বাবাকে নিয়ে হাজির হন আমার মা। আমি এক দৃশ্যের কাজ শেষ করে আরেক দৃশ্যের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। একটু পরে মাতালের একটি দৃশ্যের কাজ শুরু হয়। মাতালের ভূমিকায় যিনি অভিনয় করছেন তার কথা স্পষ্ট হচ্ছিল না এবং এই চরিত্রের অভিনয়কর্মী সহশিল্পীর সংলাপ শেষ না হতেই নিজের সংলাপ বলতে শুরু করলেন। বিষয়টি আমার কাছে ধরা পড়ে নি। কিন্তু মা ঠিকই ধরে ফেললেন।
ত্রপা মজুমদার বলে চললেন, মা তখন একটি বই পড়ছিলেন; কিন্তু অভিনেতার সংলাপ তার কানকে ফাঁকি দিতে পারল না। সঙ্গে সঙ্গেই মা বলে উঠলেন, সহশিল্পীর সংলাপ শেষ করার সময় দিতে হবে এবং মাতালের ভূমিকায় অভিনয় করলেও তোমার কথাগুলো স্পষ্ট হতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে সে কর্মী নিজেকে শুধরে সফলভাবে অভিনয় করলেন। অভিনয় এবং নির্দেশনা সবক্ষেত্রেই মা আমাকে এরকম ছোটখাটো ভুলত্রুটি শুধরে দেন। শুধু আমাকেই নয়, দলের অন্যান্য নাট্যকর্মীও কাজের ব্যাপারে তার কাছ থেকেই বেশি উৎসাহ পায়।
সবশেষে ত্রপা মজুমদার বললেন, এমন একজন গুণী মায়ের সন্তান হওয়া আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। আমি আমার মাকে নিয়ে গর্বিত।
বাংলাদেশ সময় ২০৫০, মে ০৭, ২০১১