ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

চলছে রবীন্দ্র সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন

বিনোদন প্রতিবেদক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৪ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১১

এবারের পঁচিশে বৈশাখ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের সার্ধশতবর্ষ পূর্ণ হচ্ছে । বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে এবার রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উদযাপন করছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি ৬ মে শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। ভারতের নয়াদিল্লির বিজ্ঞানভবনে ৭ মে শনিবার রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।

৬ মে শুক্রবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে আয়োজিত  সার্ধশত রবীন্দ্রজন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন। সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মূল মিলনায়তনে  মঞ্চে রবীন্দ্রনাথের আলোকচিত্র, তার আঁকা চিত্রকর্ম ও তার উদ্ধৃতি খচিত ব্যানার আগত অতিথি-দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী-উপদেষ্টা, কূটনীতিকসহ বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।

রবীন্দ্রনাথের নানা কবিতার উদ্ধৃতি সংবলিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঙালি জীবনের নানা ক্ষেত্রে বিশ্বকবির প্রভাব, বিশেষ করে স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে রবীন্দ্রকাব্য ও গানের অবিনাশী প্রভাবের ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, বিশ্বকবি আমাদের মনের আকাশের ধ্রুবতারা। জীবন-সংগ্রামের প্রতিটি ক্রান্তিকালে আমাদের পাশে তিনি আছেন। ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের সেতু হয়ে আছেন বিশ্বকবি।

প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে ভারতের উপরাষ্ট্রপতিকে রবীন্দ্রনাথ ব্যবহৃত বজরার রেপ্লিকা ‘পদ্মাতরী’ তুলে দেন। রবীন্দ্রনাথ স্মরণে গত বছর থেকে চালু হওয় বাংলা একাডেমীর ‘রবীন্দ্রপুরস্কার’ এ বছর ভূষিত হলেন ভাষাসংগ্রামী ও রবীন্দ্রগবেষক আহমদ রফিক এবং সঙ্গীতশিল্পী অজিত রায়। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন বিশিষ্ট নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার।

উদ্বোধনী আলোচনা পর্বের পর বিশ্বকবির কবিতা, গান, নাচসহ বহুমাত্রিক বর্ণিল পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি দর্শক সারিতে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। শুরুতেই সমবেত সঙ্গীত নিয়ে মঞ্চে আসেন জাতীয় রবীন্দ্র সম্মিলন পরিষদের শিল্পীরা। তারা পরিবেশন করে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দরও’ গানটি। হাতে মঙ্গলপ্রদীপ আর আঁজলা ভরা ফুল নিয়ে এই গানের সঙ্গে লায়লা হাসানের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করেন একদল নৃত্যশিল্পী।

অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন দুই দেশের শিল্পীরা। বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী মিতা হক পরিবেশন করেন ‘বরিষ ধারার মাঝে শান্তির বারি’, তপন মাহমুদ পরিবেশন করেন ‘আমার হৃদয় তোমার আপন হাতে দোলে’। ভারতীয় শিল্পী স্বাগতালক্ষ্মী গেয়েছেন ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’। একক আবৃত্তি করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা ওআবৃত্তি শিল্পী আসাদুজ্জামান নূর এবং ভারতের প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সমবেত সঙ্গীত ‘জয় তব বিচিত্র আনন্দ’-এর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।

৬ মে সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালায় রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী ভারত ও বাংলাদেশের যৌথঅনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।   ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুনের রবীন্দ্রবিষয়ক বক্তৃতার  মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর সম্মিলিত কণ্ঠে ‘হে নূতন,দেখা দিক আর-বার’ গানটি পরিবেশন করে ধ্রুবতানের শিল্পীরা। সংগীত পরিবেশনায় অংশ নেন ইফফাত আরা দেওয়ান, মহিউজ্জামান চৌধুরী, সালমা আকবর এবং পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রসংগীতের বিশিষ্ট শিল্পী স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত। এ ছাড়া ছিল নৃত্য ও তথ্যচিত্র বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ: পথ চাওয়াতেই আনন্দ-এর প্রদর্শনী।
এ ছাড়া বিকেলে জাতীয় চিত্রশালায় শুরু হয় কবির চিত্রকর্মের প্রতিলিপি ও বিশিষ্ট শিল্পীদের শিল্পকর্মের  বিশেষ প্রদর্শনী।

যৌথ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দিল্লিতে ৭ থেকে ৯ মে  বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারের নেতৃত্বে ৪৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দিল্লি সফর করছে। বাংলাদেশ থেকে দিল্লির রবীন্দ্র জন্ম সার্ধশত বর্ষের অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশনায় অংশ নিয়েছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, শামা রহমান, লিলি ইসলাম, অদিতি মহসিনসহ আরও অনেকে। বাংলাদেশে রবীন্দ্রসার্ধশততম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠানমালায় অংশ নেওয়ার জন্য ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারির নের্তৃত্বে ৩৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ছাড়াও শতাধিক সদস্যের একটি বড় সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর এসেছে।


কলকাতায়  ৯ মে সোমবার অনুষ্ঠিত হবে দুই বাংলার যৌথ অনুষ্ঠান। কলকাতার বিজ্ঞাননগরী মিলনায়তনের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন, বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনসহ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বিশিষ্টজনেরা। অনুষ্ঠানে কলকাতার শিল্পীদের সঙ্গে অংশ নেবেন বাংলাদেশের শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার, সাদি মহম্মদসহ বিশিষ্ট সংগীত ও নৃত্যশিল্পীরা।


রবীন্দ্র জন্ম সার্ধশতবর্ষের অনুষ্ঠান
৮ মে রোববার

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার : ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হবে ছায়ানটের শিল্পীদের পরিবেশনায় গানের আসর ‘হে নূতন দেখা দিক আর বার`।

চ্যানেল আই (তেজগাঁও) ভবন : দিনব্যাপী `রবি-চ্যানেল আই রবীন্দ্র মেলা`। বেলা ১১টায় উদ্বোধন, চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী : রবীন্দ্রনাথের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকীর বাংলাদেশ ও ভারত যৌথ অনুষ্ঠানমালা। জাতীয় নাট্যশালায় সন্ধ্যা ছয়টায় নৃত্যালোকের পরিবেশনায় নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা এবং সন্ধ্যা সাতটায় ভারতীয় কত্থক কেন্দ্রেও পরিবেশনায় বিষয়ভিত্তিক নাচ। জাতীয় চিত্রশালায় রবীন্দ্রনাথের গল্প, কবিতা ও গানের উপর ১৫০ জন শিল্পীর আঁকা চিত্রকর্ম ও রবীন্দ্র চিত্রলিপির প্রদর্শনী। চলবে ১৫ মে পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত আটটা।
কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার, শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন : দ্বাবিংশ জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব। আয়োজনে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা। সকাল ১০টায় সংগীতানুষ্ঠান। বেলা ১১টায় চলচ্চিত্র ‘চোখের বালি’ প্রদর্শনী। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নাগরিক নাট্যসম্প্রদায় পরিবেশিত নাটক ‘অচলায়তন’। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় গান ও আবৃত্তি।
ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন : ছায়ানটের রবীন্দ্রনাথের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়বিশেষ বক্তৃতা ‘রবীন্দ্রনাথের শিাচিন্তা’। বক্তা আবুল মোমেন। ছায়ানটের শিল্পীদের পরিবেশনায় গান, নৃত্য, পাঠ-আবৃত্তি।  

জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তন : ‘একুশ শতকে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক সেমিনার বিকাল ৫টায়। বাংলাদেশী ও ভারতীয় কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি এবং নাটক সন্ধ্যা ৭টায়।  

শিলাইদহ, শাহজাদপুর, পতিসরসহ কবির স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোতে যৌথ অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ সময় ১৪৫০, মে ০৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।