মা... মাগো, জগতের সবচেয়ে মধুর ডাক। যার জন্য এই জগতের আলো-হাওয়ার মুখ দেখেছি আমরা, তিনি হলেন মা।
মাগো মা ওগো মা, আমারে বানাইলি তুই দিওয়ানা ...
বরেণ্য চলচ্চিত্রনির্মাতা প্রয়াত দিলীপ বিশ্বাসের ‘সমাধি’ ছবির গান এটি। গাজী মাজহারুল আনোয়ার কথায় এবং সত্য সাহার সুরে গানটিতে কন্ঠ দেন শিল্পী খুরশীদ আলম। গানটির কথা ও সুর তৈরি করতে লেগে যায় দু-তিন দিন। পর্দায় এ গানে ঠোঁট মেলাবেন নায়ক রাজ্জাক। কাকরাইলের ইপসা রেকর্ডিং স্টুডিওতে গানটির রেকর্ডিং হয়। গানে কণ্ঠ দেবার সময় খুরশীদ আলম বার বার রুমাল বের করে চোখ মুছছিলেন। রেকর্ডিং হবার পর সুরকার সত্য সাহা অনুভব করেছিলেন, গানটি নিশ্চিত জনপ্রিয়তা পাবে। হয়েছেও তাই। মাকে নিয়ে এটি অন্যতম জনপ্রিয় গান।
মায়ের একধার দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম ...
গানটির শিল্পী ফকির আলমগীর। একদিন মাকে নিয়ে ফরিদপুরে যাচ্ছিলেন ফকির আলমগীর। আরিচা ঘাটে অন্ধ এক বাউল দোতারা বাজিয়ে ভাঙা গানটি গাইছিলেন। গানটির প্রথম লাইন শুনেই ফকির আলমগীরের ভাল লেগে যায়। নিজের সঙ্গে থাকা রেকর্ডারে গানটা ধারণ করে ফেলেন। পরে গানটি নিজের মতো করে বিটিভির একটি অনুষ্ঠানে গেয়ে সবার প্রশংসা পান। নব্বইয়ের দশকে অজিত রায় বিটিভির জন্য গানটি আবার রেকর্ড করেন। পরে গানটি ফকির আলমগীরের ‘সখিনা-২’ অ্যালবামে সংযোজন করা হয়। এমনকি গানটি পরে আরও দুবার রেকর্ড হয়েছে। প্রথমবার আলাউদ্দিন আলীর সংগীতায়োজনে অবরোধ চলচ্চিত্রের এবং ফরিদ আহমেদের সংগীতায়োজনে দ্বিতীয়বার ফকির আলমগীরের ‘সখীপুরের সখিনা’ অ্যালবামে গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়। ফকির আলমগীর ছাড়াও গানটি পরে গেয়েছেন জানে আলম। নির্দিষ্ট কোন ব্যাক্তির নাম না থাকায় গানটিকে সংগ্রহীত ধরে নেয়া হয়েছে।
এমন একটা মা দে না ...
গানটি কথা ও সুর করেছেন ডা. নাসির আহমেদ। গানটির শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ। তখন সবে কলেজে পড়েন ফেরদৌস ওয়াহিদ। একদিন প্রয়াত শিল্পী ফিরোজ সাঁই ফেরদৌস ওয়াহিদকে ডেকে একটা গান করার জন্য বলেন। কিন্তু গানটি রেকর্ড করার মত টাকা ফেরদৌস ওয়াহিদের পকেটে ছিল না। পরে নিজের টিফিনের টাকা এবং স্কুলের চার বন্ধুর টাকায় কাকরাইলের ইপসা রেকর্ডিং স্টুডিওতে গানটি রেকর্ড করেন। এরপর ১৯৭৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিটিভির বিশেষ সংগীতানুষ্ঠানে গানটি প্রচারিত হয়। প্রচারের পরপরই গানটি চারদিকে বেশ সাড়া পড়ে যায়। গানটির বয়স ৩৬ বছর তবুও গানটি গানটি আজও অনেক জনপ্রিয়। আজও ফেরদৌস ওয়াহিদ কোথাও গান গাইতে গেলে শ্রোতারা তার কাছে এ গানটি শুনতে চায়।
রাতের তারা আমায় কি তুই বলতে পারিস ...
এ গানটি লিখেছেন ও সুর করেছেন প্রিন্স মাহমুদ। গানটির শিল্পী জেমস। ১৯৯৭ সালে প্রিন্স মাহমুদের মা মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পর তিনি কিছুদিন গান-বাজনা থেকে দূরে ছিলেন। মাকে হারানোর কষ্ট নিয়েই প্রিন্স মাহমুদ গান করতে বসেন। মাকে নিয়েই তৈরি করেন প্রথম গান। কথায় সুরে ফুটিয়ে তোলেন মাকে হারানোর হাহাকার। গানটি তৈরি করার পর প্রিন্স মাহমুদ চিন্তায় পরে যান, কাকে দিয়ে এটি গাওয়াবেন? হঠাৎ করেই জেমসের কথা মনে পড়ে। জেমসেরও মা নেই। মা হারানোর কষ্ট কি সেটা জেমস জানে। প্রিন্স মাহমুদ জেমসের হাতেই তুলে দিলেন গানটি। রেকর্ডিংয়ে ভীষণ আবেগ দিয়ে গানটি গান জেমস। ১৯৯৯ সালে ‘এখনও দুচোখে বন্যা’ নামের একটা মিক্সড অ্যালবামে গানটি বের হয়। গানটি লুফে নেয় শ্রোতারা। মাকে নিয়ে অন্যতম জনপ্রিয় বাংলাগান এটি।
ওই আকাশের তারায় তারায় ...
গানটির কথা লিখেছেন আসিফ ইকবাল এবং সুর করেছেন শওকত আলী ইমন। গানটির শিল্পী ক্লোজআপ ওয়ান তারকা রাশেদ। পরবর্তীতে সুরকার শওকত আলী ইমনও গানটি গেয়েছেন। গীতিকার আসিফ ইকবালের মা মারা গেছেন অনেক আগে। হঠাৎ একদিন রাতে তিনি মাকে স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্নটি দেখার পর ঘুম ভেঙে হাতের কাছে কাগজ-কলম পেয়ে মাকে ভেবে কয়েকটা লাইন লিখে ফেলেন। গানের লাইনগুলো সুরকার শওকত আলী ইমনকে শোনান। মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে গিটারে লাইনগুলোতে সুর দিয়ে ফেলেন ইমন। ঠিক সেই সময়টায় চলছিল ক্লোজআপ ২০০৬-এর চূড়ান্ত পর্ব। গীতিকার ও সুরকার মিলে গানটি রাশেদকে দিয়ে গাওয়ান। গানটি গাওয়ার পর রাশেদ সবার প্রশংসা পায় এবং এই গানটির মাধ্যমেই সে সুপরিচিত হয়ে উঠে।
বাংলাদেশ সময় ১৪৩০, ৮ মে, ২০১১