ঢালিউডে মৌসুমী আর পূর্ণিমার পর সম্ভাবনার দ্যুতি হয়ে এসেছিলেন নিপুণ। ক্যারিয়ারের দুই বছর পূর্ণ হবার আগেই পেয়ে যান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
আমেরিকার গ্রিনকার্ডধারী এই নায়িকা রাশিয়া থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানের ওপর পড়াশোনা শেষ করে আমেরিকাকেই বসবাস শুরু করেছিলেন। দীর্ঘদিন আমেরিকায় কাটানোর পর নিপুণ ২০০৪ সালে দেশে ফিরেন। ছোটবেলা থেকেই সিনেমা দেখার প্রতি ঝোঁক ছিল। রূপালী পর্দার ববিতা-শাবানা তাকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকতো। শখের বশেই ২০০৫ সালে চলচ্চিত্রে নাম লেখালেন। প্রথম ছবি ‘রিকশাওয়ালার প্রেম’। তার বিপরীতে নায়ক ছিলেন আমিন খান। ছবিতে আরো ছিলেন ঢালিউডের সেই সময়ের সুপারস্টার মান্না। তবুও ছবিটি ব্যবসায়িক সাফল্যের দেখা পায় নি। দোষ চাপানো হয় নিপুণের ঘাড়ে। নিপুণের কাঁচা অভিনয়ের কারণেই নাকি ছবিটি চলে নি।
শখের বশে কাজ করতে এসে যখন দোষের ভাগিদার হতে হলো, তখন এর শেষ দেখবেন বলে ঠিক করলেন নিপুণ। মনের মধ্যে ভর করলো জেদ, অভিনয় দিয়েই নিন্দুকদের কথার জবাব দিবেন। পরের বছর মুক্তি পাওয়া নিপুণ অভিনীত ‘পিতার আসন‘ ছবিটি বক্সঅফিসে সুপারহিট হলো। নিপুণের অভিনয় নজর কাড়লোদর্শকদের । যারা তার নিন্দা করেছিলেন তারাও নড়েচড়ে বসলেন। একের পর এক নতুন ছবির প্রস্তাব নিপুণের পিছু নিলো। একে একে মান্না, আমিন খান, ফেরদৌস, রিয়াজ ও শাকিব খানের সঙ্গে একাধিক ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান। কাজ শুরুর দ্বিতীয় বছরেই নিপুন পান কাজের স্বীকৃতি। শাহ আলম কিরণ পরিচালিত ‘সাজঘর‘ ছবিতে অভিনয়ের জন্য তাকে প্রদান করা হয় ২০০৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এই স্বীকৃতি তাকে করে তোলে আত্মবিশ্বাসী। নিপুণ সিদ্ধান্ত নেন,আমেরিকা আর ফিরে যাওয়া নয়। দেশেই থাকবেন এবং চলচ্চিত্রে স্থায়ী হবেন।
নিপুণ এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত ছবিতে অভিনয় করেছেন। ২০০৯ সালে মুক্তি প্রাপ্ত মোহাম্মদ হোসেন পরিচালিত ‘চাঁদের মতো বউ’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করলেন নিপুণ। এ প্রসঙ্গে তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজের স্বীকৃতি পেলে যে কোন কঠিন পথ পাড়ি দেয়া যায়। কাজের প্রতি আরও দায়বদ্ধতা বেড়ে যায়। আমার এই পুরস্কারপ্রাপ্তিটা যেমন নিজের জন্য অনেক আনন্দের, তেমনি বাণিজ্যিক ছবির নির্মাতাদের জন্যও এটি উৎসাহের। কারণ আগে ধারণা ছিল, বাণিজ্যিক ছবিগুলো পুরস্কারের জন্য বিবেচনায় আসে না। কিন্তু আমার এই পুরস্কারই সেই ধারণা ভুল বলে প্রমাণ করেছে। দুবারই আমি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি শতভাগ বানিজ্যিক ছবিতে অভিনয়ের জন্য।
এ বছর নিপুণ অভিনীত বেশকটি ছবি আছে মুক্তির মিছিলে । যার মধ্যে রয়েছে চাষী নজরুল ইসলামের ‘দুই পুরুষ’, আশরাফুর রহমানের ‘তুমি আসবে বলে ভালবাসবে বলে’, শাহীন সুমনের ‘নবাবজাদা’, আসলামের ‘গরিবের দাম অনেক বেশি’ প্রভৃতি। কলকাতার ছবিতেও অভিনয় করেছেন নিপুণ। পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী সংঘমিত্রা চ্যাটার্জি পরিচালিত ‘জন্ম শুধু তোমার জন্য’ নামের এ ছবিতে ওপার বাংলার নায়ক প্রেমগীতের বিপরীতে দেখা যাবে নিপুণকে। ছবিটির অংশবিশেষ শুটিং এখনো বাকি আছে। ‘জন্ম শুধু তোমার জন্য’ ছবিতে বাংলাদেশের অভিনেতা আহমেদ শরীফও আছেন। এছাড়া ‘লগান’ ও ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ ছবির নায়িকা গ্রেসি সিংও অভিনয় করেছেন এ ছবিতে। ূ
নিপুণ কমার্শিয়াল ছবির পাশাপাশি চমৎকার কিছু বক্তব্য প্রধান ছবিতেও অভিনয় করছেন । শাহজাহান চৌধুরী পরিচালিত সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত ছবি ‘আত্মদান’-এ চমৎকার একটি চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে নির্মিত এ ছবিতে নিপুণের বিপরীতে রয়েছেন নিরব। ছবিটি বর্তমানে সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্রের অপেক্ষায় আছে।
সম্প্রতি নিপুণ সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড পরিচালিত নতুন ছবি ‘অন্তর্ধান’-এর শুটিং শেষ করলেন। নায়ক ফেরদৌসের বিপরীতে এ ছবিতে নিপুণকে দেখা যাবে পদ্মাচরের একজন সাধারণ গৃহিণীর চরিত্রে। সর্বনাশা পদ্মার গ্রাসে চরাঞ্চলের সর্বহারা মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ে এ ছবিটি নির্মিত হচ্ছে। নদীর ভাঙনে সবকিছু হারানো পরও একজন অসহায় নারীর ভালোবাসা জিইয়ে রাখার চিত্ররূপ এটি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মাচরে ছবিটির শুটিং হয়েছে। এ ছবিতে অভিনয় প্রসঙ্গে নিপুণ বললেন, ডায়মন্ড ভাইয়ের ‘গঙ্গাযাত্রা’ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। তিনি আমাকে তার নতুন ছবি ‘অন্তর্ধান’-এ অসাধারণ একটি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দিয়েছেন বলে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। প্রচন্ড গরমের মধ্যে পদ্মার পারে কাজ করতে গিয়ে মনে হচ্ছিল, রোদে পুড়ে যাচ্ছি। এ ধরণের পরিবেশে কাজ করা তো দূরে থাক, আমার আগে কখনো যাওয়াই হয় নি। ভালো কাজের জন্য তো একটু কষ্ট করতেই হবে। এই কষ্টের মধ্যেও আছে স্বার্থকতা।
নিপুনকে তার অভিনয় নৈপুণ্য প্রয়োগের সূযোগ করে দিয়েছেন অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড, এ জন্য তিনি তার প্রতি বার বার কৃতজ্ঞতা জানালেন। দর্শকদের উদ্দেশ্যে নিপুণকে কিছু বলতে বলা হলে তিনি বললেন, দর্শকদের প্রতি আমার আহ্বান ছবি দেখতে সিনেমা হলে আসুন। এখনো ভালো ছবি তৈরি হয়। আপনারা সিনেমা হলে এলে ভালো ছবির নির্মাতারা উৎসাহিত হবেন। ভালো ছবি নির্মাণের সংখ্যা বাড়বে।
বাংলাদেশ সময় ১৯০৫, মে ১২, ২০১১