ভাগ্য নয়, জ্ঞান আর মেধা-ই হলো ‘কোটি টাকা’ জেতার এ খেলার প্রধান হাতিয়ার। বিশ্বের ১১০টি দেশের মানুষকে মাতিয়ে দিয়ে মেধা ভিত্তিক তথ্য ও বিনোদনমূলক টিভি রিয়েলেটি শো ‘হু ওয়ান্টস টু বি এ মিলিনিয়ার’ এবার বাংলাদেশে এসেছে অনুষ্ঠানটির বাংলা সংস্করণ ‘কে হতে চায় কোটিপতি’ অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশটিভির আয়োজনে।
এই ধরণের রিয়েলিটি শোর সাফল্য অনেকটা নির্ভর করে উপস্থাপক বা সঞ্চালকের উপর। তাই বিশ্বের সবদেশেই শোবিজের তুমুল জনপ্রিয় সেলিব্রিটিদের এ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনায় নিয়ে আসা হয়। পাশের দেশ ভারতেই ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ উপস্থাপনায় দেখা গেছে, অমিতাভ বচ্চন ও শাহরুখ খানের মতো সুপারস্টারকে। বাংলাদেশে ‘কে হতে চায় কোটিপতি’ উপস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবেন আনিসুল হক। তিনি কোনো সুপারস্টার নন। শোবিজের মানুষ নন। একসময় টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করলেও ব্যবসায়ী সমাজের মুখপাত্র হিসেবেই তার পরিচিতি। কাজটা তার জন্য নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জের। আনিসুল হক বাংলানিউজকে বলেছেন, তার এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের কারণ এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ।
দেশটিভিতে আগামী ২৬ জুন থেকে প্রচার শুরু হচ্ছে ‘কে হতে চায় কোটিপতি’। অনুষ্ঠানটি নিয়ে আনিসুল হক দর্শকদের সামনে আসছেন প্রতি সপ্তাহের রবি, সোম ও মঙ্গলবার রাতের প্রাইমটাইমে। শুরুতেই আনিসুল হক জানালেন, অনুষ্ঠানটি নিয়ে তার ভাবনার কথা। তিনি বলেন, যতদূর জানি ‘হু ওয়ান্টস টু বি এ মিলিনিয়ার’ অনুষ্ঠানটি ছিল এক দীর্ঘ গবেষণার ফসল। এটি একটি বিজ্ঞানসম্মত বুদ্ধিমত্তা পরখের পদ্ধতি। । ১৯৯৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর টেলিভিশনে প্রথম প্রচার হয় এই অনুষ্ঠান এবং দর্শকরা অনুষ্ঠানটিকে লুফে নেয়। তখন থেকে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি বিশ্বেও ১১০টির বেশি দেশে নির্মিত ও প্রদর্শিত হচ্ছে। আমি নিজেও এই রিয়েলিটি শোর ভারতীয় সংস্করণ তো বটেই, ব্রিটিশ ও আমেরিকান সংস্করণে বহু অনুষ্ঠান দেখেছি এবং অনুপ্রাণিত হয়েছি। কিন্তু অনুষ্ঠানটির বাংলাদেশ সংস্করণ তৈরি হবে আর আমারই মুখোমুখি হবেন হটসিটে বসে থাকা প্রতিযোগী, এটা তো ছিল কল্পনার বাইরে।
‘কে হতে চায় কোটিপতি’ অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক হওয়ার প্রস্তাব পান কীভাবে? উত্তরে আনিসুল হক বললেন, আমার প্রিয় অভিনেতা সংসদ সদস্য ও দেশটিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান নূর মাস তিনেক আগেই আমাকে জানিয়ে রেখেছিলেন অনুষ্ঠানটি আমাকে উপস্থাপনা করতে হতে পারে। প্রথমে আমি আপত্তি জানিয়ে বলেছিলাম, আমি তো কোনো সুপারস্টার নই। তবু আয়োজকদের সবাই আমার উপর আস্থা রাখলেন। সপ্তাহ দুয়েক আগে বিষয়টি চুড়ান্ত করা হয়।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনার দায়িত্ব পাওয়ার পর কেমন ছিল আপনার মনের অনুভূতি ? আনিসুল হক বলেন, অবশ্যই চমৎকার। এমন একটি অনুষ্ঠানে কাজ করতে পারাটা নিঃসন্দেহে বিশাল সৌভাগ্যের ব্যাপার। এখানে উপস্থাপনার সুযোগ পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সভাপতি আনিসুল হক সিআইপি খেতাবপ্রাপ্ত দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তা। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প খাতের উন্নয়নে আনিসুল হকের বিশেষ অবদান রয়েছে। তিনি দুই মেয়াদে বাংলাদেশ পোশাক শিল্প প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশের অন্যতম রফতানিকারক শিল্প প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদী গ্রুপের কর্ণধার তিনি। পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের একজন পরিচালকও। স্বাভাবিক কারণেই পেশাগত জীবনে তিনি ভীষণ ব্যস্ত। এই ব্যস্ততার মধ্যেই ‘কে হতে চায় কোটিপতি’-এর উপস্থাপনার দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন। এতে সময় দেয়া নিয়ে তার পেশাগত জীবনে সমস্যা হবে কিন জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, আমরা সবাই যদি নিজ নিজ কাজটা পরিকল্পনা মতো গুছিয়ে করতে পারি। তাহলে দেখা যাবে, কাজ শেষেও হাতে প্রচুর সময় থেকে যাবে। আমি আমার সব কাজই গুছিয়ে করার চেষ্টা করে থাকি। কাজেই এ অনুষ্ঠানে সময় দেওয়া নিয়ে আমার সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
আনিসুল হকের কাছে প্রশ্ন ছিল, অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনার জন্য আপনার প্রস্তুতি কী? উত্তরে তিনি বললেন, টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপনার অভিজ্ঞতা তো আমার আছেই। তবে এটা গেইম শো। কাজেই উপস্থাপনার ধরণটাও অন্যরকম। কাজটা ভালোভাবে করার জন্য নিয়মিত চর্চা করছি। বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হওয়া এই রিয়েলিটি শোর রেকর্ডকৃত বিভিন্ন পর্ব দেখছি। পার্শ্ববর্তী দেশে অমিতাভ বচ্চন এবং শাহরুখ খানের মতো তারকারা এই অনুষ্ঠানের ভারতীয় সংস্করণের উপস্থাপনা করেছেন। তাদের তুলনায় আমি কিছুই না। কিন্তু অনুষ্ঠানটির মান তো বজায় রাখতে হবে। সমপর্যায়ের একটা মান বজায় রাখার জন্য আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। এটি আমার জন্য একধরণের চ্যালেঞ্জ।
আনিসুল হকের উপস্থাপনায় ‘অন্তরালে’ নামে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচার হয়েছে আশির দশকে বিটিভিতে। এরপর তাকে একবার দেখা গেছে, ঈদের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘আনন্দমেলা’ উপস্থাপনায়। দেশের বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে অনুষ্ঠিত বহু টক শোতে তিনি অংশ নিয়েছেন। তার শেষ উপস্থাপনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শেষ টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছিলাম প্রায় ৯ বছর আগে। আগের টেরিস্টোরিয়াল চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের ঈদের বিশেষ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ঈদের ঢোল’-এর আমার উপস্থাপনায় প্রচারিত শেষ টিভি অনুষ্ঠান।
সবমিলিয়ে ‘কে হতে চায় কোটিপতি’-এর আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আনিসুল হকের অভিমত জানতে চাইলে তিনি বললেন, দেশ টিভি খুব যতেœর সঙ্গেই কাজ করছে এই ইভেন্ট নিয়ে। আসলে এটি একটি অনুসরণ ভিত্তিক অনুষ্ঠান। যুক্তরাজ্যের মূল প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের মধ্যে থেকেই অনুষ্ঠানটি করতে হচ্ছে। এখানে কোনো কিছু যোগ করা বা বাদ দেওয়ার সূযোগ নেই। কাজেই সার্বিক ব্যবস্থাপনা তাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে। একটা লাইটের পরিবর্তনও তাদের অনুমতি ছাড়া হচ্ছে না। অনুষ্ঠানটিকে ধারণ করার জন্য ক্যামেরা নিয়ে আসা হচ্ছে ভারত থেকে। কোথায় কি করতে হবে, তার ডিটেইল উল্লেখ আছে চুক্তিতে। এসব দিক ঠিক রেখে সবমিলিয়ে সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাজ ভালোই হচ্ছে।
এদিকে ‘কে হতে চায় কোটিপতি’ কার্যক্রমের শুরুতে গত ১০ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত প্রতিদিন দর্শকদের উদ্দেশ্যে দেশ টিভির পর্দায় ছিল একটি করে প্রশ্ন। রবি মোবাইলের মাধ্যমে উত্তর দিয়ে লক্ষাধিক প্রতিযোগী এতে রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করেন। কম্পিউটারের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বাছাই করা ১ হাজার ২০০ জন প্রতিযোগীকে নিয়ে শুরু হচ্ছে ২৩ মে থেকে অডিশন। তাদের মধ্যে হটসিটে আনিসুল হকের মুখোমুখি বসার সূযোগ পাবেন ১২০জন।
উপস্থাপক আনিসুল হক আগামী ২৯ জুন থেকে আবার সাতদিন দেশ টিভির পর্দায় সাতটি প্রশ্ন নিয়ে হাজির হবেন । এগুলোর উত্তরদাতাদের মধ্য থেকে ৮ হাজার ৪০০ জনকে নিয়ে ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের বাছাই পর্ব। তাদের মধ্য থেকে হটসিটে বসার সুযোগ পাবেন ৮৪ জন। সব মিলিয়ে মোট ২০ হাজার ৪০০ জনের মধ্যে হটসিটে বসার সুযোগ পাবেন ২০৪ জন। ২৩ মে খুলনা ও চট্টগ্রামে, ২৫ মে সিলেট ও রাজশাহীতে এবং ২৭ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে প্রথম পর্যায়ের অডিশন। দ্বিতীয় পর্যায়ের বাছাই পব অনুষ্ঠিত হবে ১৫ ও ২৯ জুলাই।
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, ‘কে হতে চায় কোটিপতি’এর প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পকে উপস্থাপক আনিসুল হককে জানানো হচ্ছে। অনেক সময় তিনি নিজেই আগ্রহী হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময় ১৮৩০, মে ১৯, ২০১১