গানে গানে যিনি আজীবন মানুষের মাঝে আনন্দ ছড়িয়েছেন, সেই পপগুরুর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে জনতার ঢল নেমেছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। স্বজন হারানোর ব্যথা নিয়ে সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক কর্মীদের পাশাপাশি অগুনি মানুষ আজম খানের প্রতি অশ্রু-ভেজা চোখে ফুলে ফুলে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
আজম খানের মরদেহ ৬ জুন সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় সিএমএইচের হিমাগার থেকে তার কমলাপুরের বাসভবনে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তার পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে পরিবেশ। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল আজম খানের মরদেহের প্রতি ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে। উত্তর কমলাপুর জসীম উদ্দীন রোডে শিল্পীর বাসভবনের সামনে অনুষ্ঠিত হয় আজম খানের প্রথম নামাজে জানাজা।
সকাল ১০টা বাজার আগেই সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য আজম খানের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে নিয়ে আসা হয়। হাজার হাজার মানুষকে শৃংখলার সঙ্গে শ্রদ্ধা জানাবার সূযোগ তৈরি করে দিতে এ সময় তৎপর হয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতা-কর্মীরা।
সারিবদ্ধভাবে আজম খানকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শিল্পী-শুভানুধ্যায়ীসহ অগুনতি মানুষ। পপসম্রাটের কফিনের সামনে এসে অনেককেই কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। ফুলে ফুলে ঢেকে যায় কফিন। আজম খানের কফিনের পাশে সার্বক্ষণিক অবস্থান করতে দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের সহযোদ্ধা ও নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুকে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আজম খানের কফিনে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পক্ষে তার একান্ত সচিব ফজলুল হক এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার বিশেষ সহকারী আবদুস সোবহান ও ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুজ্জামান শিখর পুস্পস্তবক অর্পন করেন।
রাজনৈতিক নের্তৃবৃন্দের মধ্যে শিল্পীকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন , আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত , স্থানীয় সাংসদ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং আরো অনেকে।
আজম খানকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মেজবাহ উদ্দিন।
শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে আজম খানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আব্দুল জব্বার, ফকির আলমগীর, খুরশীদ আলম, আইয়ুব বাচ্চু, মনির খান, রবি চৌধুরী, হামিন আহমেদ, আগুন, বিপ্লব, সৈয়দ হাসান ইমাম, আতাউর রহমান, আলী যাকের, হানিফ সংকেত, গোলাম কুদ্দুস, টেলি সামাদ, কুদ্দুস বয়াতী এবং আরো অনেকে।
বেলা সাড়ে বারোটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ফুলে ফুলে সজ্জিত একটি গাড়িতে করে আজম খানের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বায়তুল মোকারম জাতীয় মসজিদে। গাড়িরে পেছনে এ সময় ছিল শোকাচ্ছন্ন মানুষের দীর্ঘ মিছিল। বাদজোহর বায়তুল মোকারমে অনুষ্ঠিত শিল্পীর দ্বিতীয় নামাজে জানাজায় অংশ নেন কয়েক হাজার মানুষ। জানাজায় অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই এলাহি চৌধুরী ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবিএম তাজুল ইসলাম।
নামাজে জানাজা শেষে দাফনের জন্য পপগুরুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। সেখানেও শিল্পীর গুণগ্রাহী অসংখ্য মানুষ একত্রিত হয়। বেলা ৩ টায় উপস্থিত জনতার অনুরোধে আজম খানের তৃতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। চিরশয্যায় শোয়ানোর আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজম খানের মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রিয়ভাবে প্রদান করা হয় ‘গার্ড অফ অর্নার’। বেলা ৩টা ৩৫ মিনিটে আজম খানের দাফন সম্পন্ন হয়।
বাংলাদেশের পপসঙ্গীতের পথিকৃত ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আজমখানের কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৯ জুন বৃহস্পতিবার শিল্পীর কমলাপুরের বাসভবনে।
বাংলাদেশ সময় ১৮৫০, জুন ০৬, ২০১১