বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী প্রয়াত ফিদা মকবুল হোসেনের সঙ্গে বলিউডের চিরসবুজ অভিনেত্রী মাধুরীর ছিল সুন্দর সম্পর্ক। যদিও অনেকে এই সম্পর্কের মধ্যে রহস্যের সন্ধ্যান করেছেন।
গত ৯ জুন লন্ডনে ৯৫ বছর বয়সী ফিদা মকবুল হোসেনের মৃত্যুর পর তার অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীর মতোই মাধুরীও শোকাহত হয়ে পড়েন। ফিদা সম্পর্কে বলতে গিয়ে মাধুরী বলেন, হোসেনের মন সর্বদায় উত্তেজনা ও প্রাণ-চাঞ্চল্যে ভরপুর থাকতো। এই মহান চিত্রকর বলিউডের ছবি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতেন। ভারতীয় সিনেমাকে উর্দ্ধে নিয়ে যাবার জন্য তার ছিল গভীর আকাঙ্খা।
ফিদা হোসেনের সঙ্গে মাধুরী মাত্র একমাস আগে দেখা করেছিলেন। সেসময় ফিদা ভারতে ফিরে আসার প্রতি তার একান্ত ইচ্ছের কথা মাধুরীকে জানান। শিল্পী তাকে বলেন, ভারতের মাটিতে মারা গেলে আমি সুখ পাবো। কিন্তু দু:খজনক হলো, তিনি ভারতে ফিরে আসতে পারেন নি।
মাধুরী ফিদার সঙ্গে দেখা হওয়ার সর্বশেষ স্মৃতি মনে করে বলেন, ভারতীয় সিনেমার শতবর্ষ পূর্তিতে হোসেন ছিলেন পুলকিত। হোসেনের জীবনে অবসর বলে কিছু ছিল না। সবসময়ই তিনি কাজের মধ্যে থাকতেন। নিজেকে যাযাবর বলে ডাকতেন। কোনো শিষ্যের সফলতায় হোসেন উচ্ছাসিত হতেন। তার ধারণা আর জীবনের স্বাদ উপভোগ করার কৌশল দেখে আমার নিজেকে তার চেয়ে পুরনো দিনের মানুষ বলে মনে হতো।
মাধুরী আরো বলেন, এটা বিশ্বাস করা খুবই কঠিন যে হোসেন সাহেব আর আমাদের মাঝে নেই। কাছের হারানোর মতোই আমি ব্যথিত। যদি আমি তার সৃষ্টিকর্মের কিছু অংশের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকি সেটা আমার জন্য ভীষণ গর্বের বিষয়। তিনি আমার জীবনের এমন একজন মানুষ ছিলেন, যিনি আমার জীবনে ভিন্নতার স্বাদ দিয়েছিলেন।
কূটনীতিকরা অনেকেই মনে করেন, হোসেনকে ভারত থেকে জোর করে বিতাড়িত করা হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে মাধুরীর মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে কৌশলে তিনি তা এড়িয়ে যান। মাধুরী বলেন, হোসেন সাবের উপর মিথ্যা অভিযোগ চাপানো হয়েছিল। তিনি ছিলেন শতভাগ মুক্ত মনের মানুষ। সকল ধর্মেই তিনি ছিলেন বিশ্বাসী। ভারতে নিজের ঘরে ফিরতে না পেরে তিনি ভীষণ দুঃখ পেয়েছিলেন। হোসেনের অনুপস্থিতি আজীবন আমাকে কষ্ট দেবে।
মাধুরী বলেন, আমেরিকায় আমার বাড়িতে হোসেন সাহেব ঘরের মানুষের মতোই আপন ছিলেন। এমন কি আমার সন্তানদের কাছেও তিনি ছিলেন প্রিয়। যখন আমি আমার ছেলেকে জানিয়েছি হোসেন সাব আর নেই। সে বলে উঠে, মা উনি কি আসলেই নেই।
‘গজ গমিনি’ ছবির শুটিংয়ের সময়কার ঘটনা উল্লেখ করে মাধুরী বলেন, আমরা শুটিং শুরুর আগে দেখতাম হোসেন সাব সেটে আছেন। শুটিং শেষ করে আর তাকে খুঁজে পেতাম না। কোথায় যেন তিনি হারিয়ে যেতেন। অনেক ক্ষণ পর নিজে থেকেই আবার উদয় হতেন। আমরা তার কাছে জানতে চাইতাম, কই গিয়েছিলেন। উত্তরে তিনি শুধু মিটিমিটি হাসতেন। স্থীর হয়ে তিনি কোথাও দীর্ঘসময় অবস্থান করতে পারতেন না। ‘গজ গমিনি‘ ছবিটির প্রতিটি দৃশ্যই তিনি চিত্রকর হিসেবে ফ্রেমের মতো সাজিয়ে আমার সামনে উপস্থাপন করেছেন। হোসেন সাব আমার সকল সরলতা এবং আকর্ষণ কাজে লাগিয়ে ছবিটিতে নারীত্বের প্রতিকৃতি আবিষ্কার করতে চেয়েছিলেন। আমি জানি না তার চাওয়ার কতটুকু আমি পূর্ণ করতে পেরেছি। তবে তিনি আমাকে নিয়ে নতুন একটি ছবি নির্মাণের চিন্তা করেছিলেন বলে আমি জানতে পেরেছি। এখানেই আমার স্বার্থকতা।
বাংলাদেশ সময় ১৯৫০, জুন ১৩, ২০১১