বাংলাদেশের নায়িকাদের কেনো যেন মুটিয়ে যাবার প্রবণত বেশি। বিশেষ করে বিয়ের পর তো একেকজন হয়ে যান ফুলে-ফেঁপে কুমড়ো-পটাস।
বিয়ে করে ঘর-সংসারী হওয়ার পর চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে একটু গুটিয়ে নিয়েছিলেন ঢালিউডের এই শীর্ষনায়িকা। ফলে ইন্ডাষ্ট্রির নাম্বার ওয়ান পজিশনটি তার কাছ থেকে ছিনতাই হয়ে যায়। এ সময় খানিকটা মুটিয়েও গিয়েছিলেন তিনি। ক্যারিয়ারের প্রতি আবার পূর্ণিমা দৃষ্টি দেন গত বছরের মাঝামাঝিতে। চলচ্চিত্রে শীর্ষনায়িকা হওয়ার ইদুঁরদৌড়ে টিকে থাকার জন্য দরকার গ্ল্যামার। সবাইকে অবাক করে দিয়ে পূর্ণিমা আগের চেয়েও নিজেকে করে তুলেছেন আকর্ষণীয়। ঢালিউডের মেদসর্বস্ব নায়িকাদের ভিড়ে তিনি কি জানি কি জাদুমন্ত্রে ফিরে পেয়েছেন হারানো সেই ছিপছিপে ফিগার। সবার চোখে বিস্ময়, এ কোন পূর্ণিমা!
এফডিসি কেন্দ্রিক আড্ডায় আজকাল প্রায়ই উঠে আসছে পূর্ণিমা প্রসঙ্গ। সবার মুখেই প্রশংসা, একেই বলে নায়িকা। লাখো দর্শকের মনে ঝড় তোলার মতোই নিজেকে আবার লাবণ্যময় করে তুলেছেন তিনি। সেদিন এফডিসিতে অতি উৎসাহী একজন তো সরাসরি প্রশ্নই করে বসলেন, নিজেকে এতোটা ফিট করে তোলার গোপন রহস্যটা কী? মুটিয়ে যাবার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকা অন্যসব নায়িকাদেরও এই রহস্যটা জানা দরকার। উত্তর দেওয়ার বদলে আলো ছড়িয়ে হাসলেন পূর্ণিমা। ভাবটা এমন; থাক না কিছু রহস্য সবার অজানা, এ কোন পূর্ণিমা।
চলচ্চিত্রের চলতি মন্দাবাজারে গতমাসে পূর্ণিমা অভিনীত পর পর দুটি ছবি ব্যবসায়িক সাফল্যের মুখ দেখেছে। মোহাম্মদ আসলাম পরিচালিত ‘গরীবের মন অনেক বড়’ এবং শাহ আলম কিরণ পরিচালিত ‘মাটির ঠিকানা’ ছবি দুটিতেই পূর্ণিমার উপস্থিতি ছিল উজ্জ্বল-উচ্ছল। এখানে আলাদাভাবে শাকিব খানের বিপরীতে ‘মাটির ঠিকানা’ ছবির কথা উল্লেখ না করলেই নয়। এখনকার ছবিতে শীর্ষনায়ক শাকিব খানের পর্দা উপস্থিতির কাছে নায়িকারা প্রায়ই ম্লান হয়ে যান। কিন্তু ‘মাটির ঠিকানা’ ছবিতে হয়েছে উল্টোটা। এ ছবিতে পূর্ণিমার আলোর কাছেই বরং খানিকটা ম্লান লেগেছে ঢালিউডের শীর্ষ নায়ককে। দর্শকরাও উপভোগ করেছে পূর্ণিমার অভিনয়। প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরিয়ে অনেক দর্শকই তাই বলেছেন, এ কোন পূর্ণিমা।
‘মাটির ঠিকানা’ ছবির সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়েছেন পূর্ণিমা নিজেও। এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এ ছবিতে আমার উপস্থিতি দর্শকদের আনন্দ দিতে পেরেছে জেনে খুব ভালো লেগেছে। এটি সম্পূর্ণ অন্যরকম গল্পের একটি ছবি। শাকিব খানের সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে আমাকে ছবিটিতে অভিনয় করতে হয়েছে। তবে সব সাফল্য নিশ্চয়ই আমার একার নয়। একটির ছবির সাফল্যে পুরো ইউনিটের অবদান থাকে। তিনি বললেন, একযুগেরও বেশি সময় হলো চলচ্চিত্রে অভিনয় করছি। এই লম্বা সময়ে ‘সুভা’, ‘শাস্তি’, ‘মনের মাঝে তুমি’, ‘হৃদয়ের কথা’, ‘নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি’, ‘যোদ্ধা’,
‘আকাশ ছোঁয়া ভালবাসা’, ‘মনের সাথে যুদ্ধ’, ‘রাক্ষুসী’, ‘ওরা আমাকে ভাল হতে দিলো না’ সহ অসংখ্য ছবিতে মনপ্রাণ উজাড় করে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি। আবার অনেক ছবিতে অভিনয় করার কিছুই ছিল না। তারপরও পেশাগত কারণে কাজ করতে হয়েছে, এখনও হচ্ছে। তবে ভাল কিছু করার জন্য মনটা ছটফট করে। ভাল চরিত্র শুনলে কাজ করার আগ্রহ বাড়ে। তাইতো এখন এটাকেই গুরুত্ব দিচ্ছি। পূর্ণিমা আরো বললেন, সাফল্য-খ্যাতি আর আর্থিক সমৃদ্ধি সবই আমি পেয়েছি। পেয়েছি দর্শকদের ভালবাসা। এখন চাই অভিনেত্রী হিসেবে স্বীকৃতি। তিনি বলেন, আমি ভাল অভিনয় করি, গ্ল্যামারার্স, নির্ভেজাল, ঝামেলামুক্ত ইত্যাদি কথাগুলো সব সময় শুনি। কিন্তু এখন শুনতে চাই, পূর্ণিমা অনেক উঁচু মানের অভিনেত্রী। ঢালিউডের অন্যতম গ্ল্যামার গার্লের মুখে এ ধরণের কথা শুনে বলতেই হয়, এ কোন পূর্ণিমা !
পূর্ণিমাকে আবার আলোচনার শীর্ষে এনে দিয়েছে পরপর দুটি ছবির সাফল্য। এমন অনেক নির্মাতাই এখন তার কাছে ভিড়তে শুরু করছেন যাদের ধারণা ছিল পূর্ণিমা ফুরিয়ে গেছেন। তিনি যে ফুরিয়ে যান নি এর প্রমাণ হলো, এক ডজনেরও বেশি ছবি আছে এখন পূর্ণিমার হাতে। অবস্থা এমনই যে, আগামী প্রায় একবছর তার কোনো শিডিউল খালি নেই। এসব ছবির মধ্যে রয়েছে ‘রাজা সূর্য খাঁ’, ‘টুবি কন্টিনিউড’, ‘গরিবের দাম অনেক বেশি’, ‘সে আমার মন কেড়েছে’, ‘এই যে দুনিয়া কিসের লাগিয়া’, ‘জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার’, ‘অস্ত্র ছাড় কলম ধর’, ‘আই লাভ ইউ’, ‘ছোট্ট সংসার’, ‘মায়ের বাড়ি’ প্রভৃতি। এগুলোর মধ্যে এফআই মানিক পরিচালিত ‘জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার’ ও মুশফিকুর রহমান গুলজার পরিচালিত ‘আই লাভ ইউ’ ছবি দুটিতে শাকিব খানের বিপরীতে পূর্ণিমাকে দেখা যাবে। অন্য ছবিগুলোতে তার বিপরীতে থাকছেন কাজী মারুফ, ইমন আর নিরবের মতো নতুন প্রজন্মের নায়িকরা। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, সবার সঙ্গেই পূর্ণিমা দারুণ মানিয়ে যান। এই গুণ সবার থাকে না। নিজেকে এমনই এক উচ্চতায় দাঁড় করিয়েছেন। হারানো রাজত্ব ফিরে পেতে তিনি সত্যিই ঘুড়ে দাঁড়িয়েছেন। ক্যারিয়ারের প্রতি এতোটা আন্তরিকতা তার আগে দেখা যায় নি, এ কোন পূর্ণিমা!
ঢালিউডের সমসাময়িক নায়িকাদের মধ্যে বর্তমানে পূর্ণিমাকেই একমাত্র দেখা যাচ্ছে, একই সঙ্গে মডেলিং ও টিভিনাটকে অভিনয় চালিয়ে যেতে। চলচ্চিত্রের অনেক শিল্পীই মনে করেন, ছোটপর্দা অভিনয় করলে বিনাপয়সায় দর্শকরা নায়ক-নায়িকাকে দেখতে পান বলে তাদের দাম কমে যায়। এটা মানতে রাজি নন পূর্ণিমা। ভালো গল্পের ভালো চরিত্র পেলে তাই টিভিনাটকে অভিনয়ে রাজি হয়ে যান। আসছে ঈদেও ব্যতিক্রমী গল্পের একাধিক নাটকে চমক জাগানিয়া চরিত্রে তাকে দেখা যাবে। অভিনয়ে দিন দিন দক্ষ হয়ে উঠা এই পরিপূর্ণ অভিনেত্রীকে দেখে অনেকে বলে উঠতেই পারেন, এ কোন পূর্ণিমা!
বাংলাদেশ সময়
১৭:১০,জুলাই ৯,২০১১