মাত্র ২৭ বছর বয়সের ব্রিটিশ গায়িকা এমি ওয়াইনহাউসকে গত ২৩ জুলাই তার লন্ডনের বাসভবনে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তার মৃত্যুর কারন এখনও জানা যায়নি।
দ্য গ্রাম্যি এ্যাওয়ার্ড বিজয়ী এমি ওয়াইনহাউস সম্প্রতি ড্রাগের প্রতি আশক্তির কারণে সঙ্গীত জগৎ থেকে ছিটকে পড়েছিলেন। অদ্ভুত ধরনের চুলের স্টাইলের কারনে তিনি বেশ আলোচিত। নিজের জীবনের মাদকাশক্তি নিয়ে লেখা গান “রিহ্যাব” হচ্ছে তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে অন্যতম।
লন্ডন এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের একজন মুখপাত্র জানায় শনিবার বিকেল ৩:৫৪ এর দিকে তাদেরকে ফোন করা হয় এবং ৫ মিনিটের মাথায় দুটি এ্যাম্বুলেন্স এমি ওয়াইনহাউসের বাসায় উপস্থিত হয়। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ২৭ বছর বয়সী ওয়াইনহাউস কে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়।
তার বাসার সামনের রাস্তা এখন পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে। ফরেন্সিক অফিসারগন এই মুহূর্তে সেখানে কাজ করছেন।
রাত ৮:৪৫ এর দিকে একটি কালো রঙের প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়।
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড থেকে জানানো হয় এই মুহূর্তে মৃত্যুর কারণ বলা মুশকিল, ডাক্তার এবং ফরেন্সিক অফিসাররা এই মুহূর্তে সেটা অনুসন্ধানে কাজ করছেন।
এমি ওয়াইনহাউসের একজন প্রতিবেশী জানিয়েছেন শনিবার সকালের দিকে তিনি বাসার ভেতর থেকে অনেক চিৎকার চ্যাঁচামেচির শব্দ শুনেছেন।
গত ১৮ জুন সারবিয়াতে একটি কনসার্টে মাতাল অবস্থায় গান গাইতে ওঠার পর আয়োজক কমিটি এমি ওয়াইনহাউসের ইউরোপিয়ান কামব্যাক ট্যুর বাতিল ঘোষণা করে। এরপর তিনি লন্ডনের একটি অ্যাডিকশন ট্রিটমেন্ট ক্লিনিকে এক সপ্তাহ চিকিৎসা নেন। তার মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান ও মাদকাসক্তির ব্যাপারে বাবা মিচ ওয়াইনহাউস অনেক উদ্বিগ্নও ছিলেন। এরইমধ্যে তিনি নিউইয়র্ক থেকে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
এমি ওয়াইনহাউসের রেকর্ড কোম্পানি ইউনিভারসেল তাকে একজন “গড গিফটেড সিঙ্গার, মিউজিশিয়ান এবং আর্টিস্ট” হিসাবে আখ্যা দিয়েছে। তার মৃত্যুতে ইউনিভারসেল তার বন্ধু, পরিবার ও ভক্তদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে।
২০০৬ তে এমি ওয়াইনহাউস তার দ্বিতীয় এ্যালবাম “ব্যাক তো ব্ল্যাক” ও “রিহ্যাব” গানের জন্য পাঁচটি ক্ষেত্রে গ্র্যামি এ্যাওয়ার্ড জিতে নেন।
গত মাসের তার ইউরোপিয়ান কামব্যাক ট্যুরে সারবিয়ার বেল্গ্রাডে প্রায় বিশ হাজার মানুষের উপস্থিতির কনসার্টে এমি মাতাল অবস্থায় গান গাইতে উঠেন। মিউজিকের সাথে তাল রেখে গান গাইতে না পারার কারনে তিনি দর্শকদের রোষানলে পড়েন। অনেক দর্শক কনসার্ট থেকে বের হয়ে চলে আসেন। ৯০ মিনিটের স্লটে ওয়ানহাউস দুই বার স্টেজে উঠে গান গাইবার চেষ্টা করেন। কিন্তু অতিরিক্ত মাতাল থাকার কারনে মাত্র কয়েকটি গানের পরই তাকে দর্শকদের রোষের মুখে নেমে আসতে হয়। এর পরই আয়োজক কমিটি তার বাকি সমস্ত ট্যুর বাতিল ঘোষণা করে, যায় মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ইস্তানবুল, এথেন্স, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, ইতালি, অস্ট্রিয়া ও পোল্যান্ড।
১৯৮৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর উত্তর লন্ডনের সাউথ গেট এলাকায় এমি ওয়াইনহাউস জন্মগ্রহন করেন। তার বাবা মিচ ওয়াইনহাউস একজন ট্যাক্সি চালক। তার মা জেনিস ছিলেন একজন ফার্মাসিস্ট। এমি ওয়াইনহাউসের মামারা ছিলেন জ্যাজ মিউজিসিয়ান। ছোটবেলা থেকেই তাই গানের প্রতি এমি ওয়াইনহাউসের আগ্রহ ছিল।
২০০৩ সালে জ্যাজ, পপ, সোল ও হিপ-হপের মিশেলে এমি ওয়াইনহাউস তার প্রথম অ্যালবাম “ফ্রাঙ্ক” এর মাধ্যমে গানের জগতে আসেন। দ্রুত জনপ্রিয় পাওয়া এই এ্যালবাম সে বছর মারকুরি মিউজিক প্রাইজসহ “বেস্ট ফিমেল সোলো আর্টিস্ট” এবং “বেস্ট আরবান অ্যাক্ট” বিভাগে দুটি ব্রিট অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়। তার প্রথম সিঙ্গেল অ্যালবাম “স্ট্রঙ্গার দেন মি” নতুন আর্টিস্ট বিভাগে ইভর নভেল্লও এ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়। “ফ্রাঙ্ক” অ্যালবামটি ডাবল প্লাটিনাম অর্জন করে।
২০০৬ সালে রিলিজ পাওয়া “ব্যাক টু ব্ল্যাক” অ্যালবামটি এমি ওয়াইনহাউস কে বিশ্বব্যাপি খ্যাতি এনে দেয়। এই এ্যালবামটি মিউজিক চার্টে ব্রিটেনে প্রথম ও আমেরিকায় দ্বিতীয় স্থান দখল করে নেয়। এই এ্যালবামের “রিহ্যাব” গানটি তার নিজের জীবনের মাদকাসক্তি নিয়ে রচিত যা সে বছর “বেস্ট কন্টেম্পরারি গান” বিভাগে ইভর নভেল্লও এ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়।
২০০৭ এর মে মাসে আমেরিকার মায়ামিতে এমি তার দীর্ঘ দিনের প্রেমিক ব্ল্যাক ফেল্ডার-সিভিল কে বিয়ে করেন। কিন্তু এমির বিবাহিত জীবন তেমন একটা সুখকর ছিল না। কারন এমির স্বামী ব্ল্যাক ফেল্ডার-সিভিল বেশির ভাগ সময় তার মারপিটের কারনে জেলে থাকতেন আর এমি থাকতেন বেশিশরভাগ সময় মাতাল ও মাদকাসক্ত।
২০০৯ এ এদের দুজনের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। এর পর এমি ওয়াইনহাউস নিজেকে ধিরে ধিরে গুটিয়ে নেন। বড় কোন অনুষ্ঠানে তাকে আর সেভাবে দেখা যায়নি। তবে মদ্যপান ও মাদকাসক্তির কারনে তিনি প্রায় প্রতি মাসেই খবরের কাগজের পাতায় আসতেন।
গত বুধবার লন্ডনের ক্যামডেন এলাকার দ্য রাউন্ড হাউস নামের একটি পাব এ শেষবারের মত তাকে জনসম্মুখে দেখা যায়। সেদিন এমি ওয়াইনহাউস তার পালিত কন্যা ডিওনে ব্রম্ফিল্ডের সাথে গান করেন। ১৫ বছর বয়সী ব্রম্ফিল্ডের সাথে তিনি নাচেন এবং ব্রম্ফিল্ডের গানের সিডি কেনার জন্য দর্শকদেরকে অনুরোধ করেন। তিনি যখন মারা যান ডিওনে ব্রুম্ফিল্ড তখন ওয়েলশের একটি কনসার্টে গান গাইছিলেন। খবর পাওয়ার সাথে সাথে তিনি স্ট্যেজ থেকে নেমে চলে আসেন।
ওয়াইনহাউসের বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী ও ভক্তরা তার বাড়ির সামনে ফুল, মোমবাতি এবং টেডি বেয়ার সহ বিভিন্ন জিনিস রেখে তার প্রতি ভালবাসা জানিয়ে আসছে।