গত দশ বছর যাবৎ নিয়মিতভাবে নাট্যসংগঠন স্বপ্নদল পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা কলঙ্কজনক অধ্যায় জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকির বিয়োগান্তক ঘটনা স্মরণে ‘হিরোশিমা দিবস’ পালন করে আসছে। হিরোশিমায় আণবিক বোমা হামলার ৬৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ বছরও আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি পালন করছে স্বপ্নদল।
৬ আগস্ট ‘হিরোশিমা দিবস ২০১১’-এর অনুষ্ঠানমালার প্রথম পর্বে বেলা তিনটা থেকে এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলের লবিতে জাপান-বাংলা পিস্ ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে চলবে জাপানের হিরোশিমা পিস্ মেমোরিয়াল মিউজিয়াম প্রকাশিত হিরোশিমা-নাগাসাকির দুর্লভ আলোকচিত্রভিত্তিক পোস্টার ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী। বিকাল চারটায় প্রদর্শিত হবে হিরোশিমা-নাগাসাকির ঘটনাভিত্তিক যুদ্ধবিরোধী চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে শিশুদের রক্ষার প্রার্থনায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, যুদ্ধপন্ত্রণার প্রতীক জাপানি শিশু সাদাকো সাসাকি স্মরণে এক হাজার কাগজের সারস পাখি তৈরি ও বিতরণ, পিপলস্ থিয়েটার এসোসিয়েশনের শিশুদের পরিবেশনায় জাপানি সঙ্গীত পরিবেশনার পরে থাকবে যুদ্ধবিরোধী বক্তব্য প্রদান। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ গ্র“প থিয়েটার ফেডারেশানের সভাপতি নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জাপান দূতাবাসের কাউন্সিলর মাসাইউকি তাগা, বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, শিল্পকলা একাডেমীর নাট্যকলা বিভাগের পরিচালক সারা আরা মাহমুদ, স্বপ্নদলের প্রধান সম্পাদক জাহিদ রিপন প্রমুখ বক্তব্য উপস্থাপন করবেন।
প্রথম পর্ব শেষে বিরতির পরে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে হিরোশিমা-নাগাসাকির ঘটনানির্ভর স্বপ্নদলের যুদ্ধাপরাধী-যুদ্ধবাজবিরোধী গবেষণাগার প্রযোজনা ‘ত্রিংশ শতাব্দী’-র বিশেষ মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হবে। বাদল সরকার-এর মূলরচনা অবলম্বনে আলোচিত প্রযোজনা ‘ত্রিংশ শতাব্দী’-র রূপান্তর ও নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। এ দিন স্বপ্নদলের ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ প্রযোজনার পঞ্চাশতম মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
যুদ্ধোন্মদনার বিরুদ্ধে শৈল্পিক প্রতিবাদ ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ প্রযোজনার মূল কাহিনি পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা কলঙ্কজনক অধ্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকির আণবিক বোমা বিস্ফোরণের বিষাদময় পরিণতি। এর সমান্তরালে গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বসনিয়া-ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, পাকিস্তান-ভারত, ইরাকে আগ্রাসন, লিবিয়ার যুদ্ধ প্রভৃতি প্রসঙ্গ। ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ প্রযোজনায় নানাবিধ দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে যুদ্ধবাজদের স্বরূপ এবং যুদ্ধের তাৎক্ষণিক ও সুদূরপ্রসারী বীভৎসতার চিত্র উদ্ঘাটিত হয়েছে। মানবসৃষ্ট সভ্যতা ধ্বংসকারী যুদ্ধ-গণহত্যা-অনাচারের বিপরীতে মানুষ হিসেবে আমাদের বর্তমান কর্তব্য অনুধাবন এবং এক্ষেত্রে দর্শককে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মুখোমুখি স্থাপনই ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ প্রযোজনার অভীষ্ট।
‘ত্রিংশ শতাব্দী’ প্রযোজনার গ্রন্থিকরা হলেনÑ মিটুল চৌধুরী, সোনালী রহমান জুলি, আসিফ ইসতিয়ার, ফজলে রাব্বী সুকর্ন, ফারজানা চৌধুরী মিতা, হাসান রেজাউল, শিশির সিকদার, রাকিব হোসেন, আমজাদ শরীফ, আফরিন অনু, সামাদ ভূঞা, আল-আমিন, জিয়াউল হাসান, শাখাওয়াত শ্যামল, এস এম তারেক ও জাহিদ রিপন।
হিরোশিমা দিবস পালন এবং যুদ্ধবিরোধী প্রচারণার পাশাপাশি ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ পযোজনার পঞ্চাশতম প্রদর্শনী উপলক্ষে দর্শককে শ্রদ্ধা জানাতে এ দিন ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ প্রযোজনার প্রদর্শনীসহ সকল অনুষ্ঠান সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বাংলাদশে সময় ১৩৩০,আগস্ট ০৪,২০১১