বড়পর্দার প্রতি প্রবল আগ্রহ থেকেই লামিয়া সিদ্দিকী মিমো ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী সুপার হিরো হিরোইন প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছিলেন। সহস্রাধিক প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে ধাপের পর ধাপ ডিঙিয়ে তিনি জিতে নেন সুপার হিরোইন খেতাব।
রূপসা নদীর পাড় ঘেঁষা শহর খুলনার মেয়ে লামিয়া সিদ্দিকী মিমো। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন সিনেমার পোকা। সুযোগ পেলেই রাজ্জাক, শাবানা, সালমান শাহ বা মৌসুমীর ছবি দেখতেন। রূপালী পর্দার প্রতি আকর্ষণ তখন থেকেই। কল্পনায় বহুবার স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহ’র নায়িকা সেজেছেন। কিন্তু চাইলেই তো আর নায়িকা হওয়া যায় না। তবে স্বপ্ন দেখতে দোষ কী! স্বপ্ন দেখতে দেখতেই বেড়ে উঠলেন মিমো।
মা জানতেন মেয়ের স্বপ্নের কথা। যদিও এটাকে তিনি পাগলামো বলেই দীর্ঘদিন উড়িয়ে দিয়েছেন। একদিন তিনি মিমোর স্বপ্নপূরণের চাবি নিয়ে সামনে দাঁড়ালেন। মায়ের হাতের পত্রিকায় ছিল সুপার হিরো সুপার হিরোইন প্রতিযোগিতার বিজ্ঞাপন। তার পরের গল্প তো সবারই জানা। নিজের মেধা আর সৌন্দর্যের পরীক্ষা দিতে দিতে শেষপর্যন্ত মিমো চ্যাম্পিয়নের খেতাব ছিনিয়ে নিলেন। শুরু হলো স্বপ্নের পথ ধরে পায়ে পায়ে এগিয়ে চলা।
মিমোর প্রথম সাইন করা ছবির নাম হলো ‘কিং খান’। ঢালিউডের এই সময়ের কিং শাকিব খানের বিপরীতে চলচ্চিত্রাভিনয়ে তার রাজকীয় অভিষেক হয়। মোহাম্মদ হোসেন জেমির পরিচালনায় এ ছবিটি অবশ্য এখন পর্যন্ত মুক্তির মুখ দেখে নি। তার আগেই মুক্তি পায় মনোয়ার হোসেন ডিপজল প্রযোজিত এবং এফআই মানিক পরিচালিত ‘একজবান’ ছবিটি। গত কোরবানীর ঈদে মুক্তি পাওয়া এ ছবিটি ঢালিউডে সুপারহিট ব্যবসা করে। ছবিটিতে মিমোর অভিনয় দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হন। এরপরই তার হাতে আসে আরো তিনটি ছবি। ছবিগুলো হলো- সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘ডন’, মামুন খান পরিচালিত ‘নীলাঞ্জনা’ ও রয়েল বাবু পরিচালিত ‘বাবু সাহেব’। তিনটি ছবিই বর্তমানে নির্মাণাধীন আছে।
শোবিজে কাজ শুরুর প্রথম দিকে টিভিনাটকে অভিনয় করার প্রতি মিমোর তেমন আগ্রহ ছিল না। কাছের মানুষদের অভিযোগ ছিল, সুপার হিরো সুপার হিরোইন ইভেন্ট তো টিভিপর্দাতেই হয়েছে। এখন কেনো তাহলে তোমাকে টিভিতে দেখা যায় না? নাকি টিভিওয়ালারা তোমাকে পাত্তা দেয় না! অথচ খেতাব জয়ের পর পরই বেশ কিছু টিভিনাটকে অভিনয়ের প্রস্তাব মিমো পায়। কাছের মানুষদের কথার জবাব দিতেই তিনি টিভিনাটকে অভিনয় শুরু করেন। টিভিনাটকে অভিনয় করতে এসেই এই মাধ্যমটাও বেশ মনে ধরে যায়। তাই ঠিক করলেন, চলচ্চিত্রের পাশাপাশি টিভিতেও নিয়মিত অভিনয় করবেন।
এ মুহূর্তে সুপার হিরোইন মিমো টিভিনাটক নিয়ে কাটাচ্ছেন ব্যস্ত সময়। এই ঈদে প্রায় দুই ডজন নাটকে তাকে অভিনয় করতে দেখা যাবে। যার মধ্যে দুটি টেলিফিল্ম, অন্যগুলি একক নাটক। মিমো তার ঈদের বিভিন্ন নাটক সম্পর্কে বলেন, একের পর এক এতোগুলো নাটকে কখন যে অভিনয় করে ফেললাম টেরও পাই নি। মজার মজার চরিত্রে এসব নাটকে আমাকে দেখা যাবে। আমার করা প্রতিটি চরিত্রেই বৈচিত্র্য আছে। কমেডি-রোমান্টিক-পারিবারিব সব ধরণেল নাটকেই আমাকে দেখা যাবে। এর মধ্যে ঢাকা ও নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায়ও দুটি নাটক রয়েছে।
আসছে ঈদে মিমো অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘শতরূপে শতবার’, ‘ভালোবাসার ডিরেক্টর’, ‘নদীকন্যা’, ‘ভালোবাসার রং’, ‘ফেলু ভাই’, ‘ইয়াহু ভালোবাসা’, , ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘ভালোবাসায় ফেরা’ ইত্যাদি। এসব নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম, শাহেদ শরীফ খান, অপূর্ব, হাসান মাসুদ, ইরেশ যাকের, সিদ্দিক আহমেদ প্রমুখ অভিনেতার বিপরীতে।
ইদানীং টিভিনাটক নিয়ে মিমো বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়লেও চলচ্চিত্রই তার পছন্দের প্লাটফর্ম বলে জানান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, চলচ্চিত্রই আমার আসল গন্তব্য। চলচ্চিত্রের নায়িকা হওয়ার জন্যই সুপার হিরো সুপার হিরোইন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সবার দোয়া ও ভলোবাসায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। কাজেই চলচ্চিত্রে স্থায়ী আসন গড়ে তোলায় আমার লক্ষ্য। মিমো জানালেন, ঈদের পর পর তার আরো নতুন দুটি ছবিতে সাইন করার কথা আছে।
অভিনয়ের পাশাপাশি মিমো পড়াশোনাও ঠিক রেখেছেন। বর্তমানে তিনি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন।
বাংলাদেশ সময় ২২৩০, আগস্ট ২৩, ২০১১