ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

অতিথি পাখির ক্যাম্পাস

ওয়ালীউল্লাহ মিঠু | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৪
অতিথি পাখির ক্যাম্পাস

নৈস্বর্গিক শোভামণ্ডিত ও শিক্ষার্থীদের কলরব এবং পাখির কলতাণে মুখোরিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহনীয় প্রকৃতির  সবুজ ক্যাম্পাস। পাখির কিচির-মিচির আওয়াজে ঘুম ভাঙে সবার, বলা চলে শীতের সময়ে যেখানে অতিথি পাখির সাথে বসবাসের দূর্লভ সূযোগ মেলে শিক্ষার্থীদের তথা ক্যাম্পাসবাসীর।

রক্তকমল শাপলার মাঝে সেই সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আসা রকমারি প্রজাতির পরিব্রাজক পাখির বাহারি খেলায় মেতে ওঠা আকর্ষণীয়  দৃশ্যে এখানের লেকগুলো জানান দিচ্ছে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এক অনন্য প্রকৃতির গ্রাম বাংলার চিরচেনা সেই প্রাচীন রুপসী গ্রামীণ দুর্লভ এক মনোরম পরিবেশ।

আর এই অনন্য প্রকৃতির বিরল দৃশ্য দেখার জন্য প্রতিদিন শত-শত দেশি-বিদেশি পাখিপ্রেমীরা ভিড় জমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায়। এইতো সেদিন এক ভোরে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মোজিনা এই পাখির ছোঁয়া পেতে হটাৎ করেই জাহাঙ্গীরনগরের আঙিনায় পা রাখেন স্বপরিবারে। অবশ্য তিনি গত বছরও এসেছিলেন পাখির সাথে সাক্ষাৎ করতে।

প্রাকৃতিক  সৌন্দর্যের লীলাভূমি আর বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত সবুজ এই ক্যাম্পাসে হেমন্তের আমেজ পাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে বরাবরের মতই কাঙ্ক্ষিত সেই  অতিথি পাখির জলকেলিতে  মুখর হয়ে উঠতে শুরু করে জলাশয়গুলো। প্রতিদিনই দেখা মিলছে ঝাঁকে ঝাঁকে হাজারো বাহারি অতিথি পাখি।

কনকনে শীতের সকালে সোনামাখা রোদে লেকগুলোতে হাজারো অতিথি পাখির কলকাকলি, সারাদিন খুনসুটি , সারা ক্যাম্পাসের আকাশে মুক্তডানায় ভর করে বাতাসে গাঁ ভাসিয়ে দলবেধে হেলে-দুলে মনের সূখে উড়ে বেড়াচ্ছে। লাল শাপলার মাঝে ধূসর রঙের হরেক প্রজাতির পরিযায়ী পাখি মেলে ধরেছে জাবি ক্যাম্পাসের  প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আগের থেকে বহুগুণে।

পাখি প্রকৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গের মধ্যে অন্যতম। জাবি ক্যাম্পাস যেন এই কথার অনন্য প্রমান।

Migratory Birds at JU Lake JU PR PHOTOএ বছর জাবির জলাশয় গুলোতে প্রায় শতাধিক প্রজাতির অতিথি পাখির আনাগোনা দেখা যাচ্ছে বলে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এদের মধ্যে প্রথমেই সবার নজর কাড়ে সরালি , পচার্ড , ফ্লাইফেচার , গার্গেনি , ছোট লালমুড়ি , বামুনিয়া , হাঁসপাখি , মুরহেন , খজ্ঞণা , নর্দান , পিনটেইল , জলপিপি , নাকতা , চিতাটুপি , ছোট লাল গুড়গুটি , কোম্বডাক এবং ভিনদেশি বকসহ আরোও নাম না জানা হরেক প্রজাতির অতিথি পাখি।

গতবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৩ টি লেকের মধ্যে ৩ টি লেককে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছিল। এর মধ্যে রেজিষ্ট্রার অফিসের সামনের জলাশয়, প্রীতিলতা হলের পিছনের জলাশয় এবং কলা ও মানবিকী অনুষদের পাশের জলাশয়। গঠন করা হয়েছিল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটি। এই অতিথি পাখিদের অবাধ বিচরণে সহায়ক অনেক পদক্ষেপ নেয় জাবি প্রশাসন। যেমন: বিভিন্ন সতর্কতামূলক লেখাসম্বলিত ব্যানার, পোষ্টার , ফেস্টুন, ইত্যাদি।

আতিথি পাখিরা সাধারণত নভেম্বর মাসের শুরুর দিকে আসতে শুরু করে এবং মার্চের শেষের দিকে ফিরে যায় আপন ঠিকানায়।

নগর জীবনের ব্যস্ততা, দূষণ আর কোলাহলমুক্ত নান্দনিক পরিবেশে অতিথি পাখির জন্য এক চিলতে সবুজ প্রাকৃতিক সৌন্দয্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বরাবরের মত এক পরিচিত অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে এবছরও।

বাংলাদেশে আসা অতিথি পাখিদের শতকরা ১২ ভাগই এই সবুজ ক্যাম্পাসের জলাশয়গুলোতে আশ্রয় নেয় বলে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ সূত্রে  জানা গেছে।

সেই ধারাবহিকতায় গত বছরের মত এ বছর আবার সেই চিরচেনা পাখি বান্ধব অভয়ারণ্যে রূপ নিয়েছে জাবি ক্যাম্পাস। প্রতিদিন ভীড় জমাচ্ছে নানান বয়সের দেশি-বিদেশি পাখিপ্রেমী।

আপনিও আসতে পারেন আর হারিয়ে যেতে পারেন কিছুক্ষণের জন্য এই অতিথি পাখির বাহারী রূপের খেলায়। উপভোগ করতে পারেন রক্তকমল শাপলা শোভিত লেকের মাঝে অতিথি পাখির এক অনন্য প্রকৃতির ছোঁয়া। প্রতিদিন ঢাকা থেকে হানিফ, সুপার সহ বিভিন্ন পরিবহনের বাস ঢাকা আরিচা মহাসড়কে চলাচল করছে। চাইলে সহজেই গাবতলী হয়ে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে একটু পরে নেমে চলে আসতে পারেন অতিথি পাখির এই ক্যাম্পাসে।  

লেখক: ওয়ালীউল্লাহ মিঠু
শিক্ষার্থী, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, ৪র্থ বর্ষ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

বন্ধুরা আরও নানা বিষয়ে জানতে ও আপনার মতামত জানাতে https://www.facebook.com/bnlifestyle

লাইফস্টাইল বিভাগে আপনিও ভ্রমণের লেখা পাঠাতে পারেন  [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।