বৈশাখ মানেই রঙের ছড়াছড়ি। বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম এ দিনটিতে রঙিন সাজে সাজতে কে না চায়? তাই বাংলা বর্ষের প্রথম দিনটিতে নিজেকে আলপনার রঙে রাঙানোর পাশাপাশি বর্ণিল রঙের ছোঁয়ায় রাঙিয়ে নিতে চাই নিজ গৃহকোণটিও।
লোকজ শিল্পের ছোঁয়ায় বর্ষবরণ যেন হয়ে ওঠে আরও প্রাণবন্ত। চলুন জেনে নেয়া যাক আলপনার আঁকিবুকি আলপনায় নিজেকে রাঙাতে বৈশাখের এ দিনটিতে বাইরে বের হলেই পাওয়া যায় উৎসবের অন্যরকম এক আমেজ। বাঙালি হয়ে ওঠার উৎসবে যেন মেতে ওঠে সবাই। সাজের পরিপূর্ণতা আনতে অনেকেই হাতে, গালে, ঘাড়ে আলপনা আঁকেন। আলপনার কথা বলতে গেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার“কলা অনুষদের ছাত্রী সুমাইয়া বলেন, বছরের পর বছর ধরে বাঙালি সংস্কৃতির নিজস্ব উৎসবগুলো রাঙাতে আলপনার ব্যবহার হয়ে আসছে।
আর বিগত বছরগুলোতে বৈশাখ এলেই যেন আলপনা আঁকানোর বিশেষ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে। ছেলেমেয়েরা শাড়ি-পাঞ্জাবি যাই পরুক না কেন বৈশাখী আমেজে গা ভাসাতে আলপনা আঁকানো চাই-ই চাই। কোথায় আঁকবেন পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের জন্য রমনার বটমূলের সুখ্যাতি অনেক আগ থেকেই। তাই বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটিতে সবাই ছোটেন রমনার বটমূলের উদ্দেশে।
রমনার বটমূল ছাড়াও চার“কলা অনুষদের বকুলতলা, টিএসসি, কলাভবন, ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরসহ সর্বত্রই থাকে বৈশাখের নানা আয়োজন। আর এসব জায়গাতেই আলপনা আঁকিয়েদের দেখা মিলবে। বৈশাখী ডিজাইন আমাদের হাজার বছরের গৌরবময় সংস্কৃতি হল পহেলা বৈশাখ উদযাপন। আর আলপনার ডিজাইনে বারবার ফিরে আসে বাঙালি সংস্কৃতির চিরায়ত জিনিসগুলো। এর মধ্যে একতারা, ঢোল, পাখি, লতা, পাতা ইত্যাদি।
অনেকে আবার আলপনা দিয়ে এসো হে বৈশাখ এসো এসো, স্বাগতম বাংলা নববর্ষ এসব লেখেন। আলপনা আঁকতে কেমন খরচ পড়বে এমন প্রশ্নের জবাবে আলপনা আঁকিয়ে নাদিম বলেন, আসলে আলপনা আঁকানোর নির্দিষ্ট কোন পারিশ্রমিক নেই। উৎসবের এ দিনে খুশি হয়ে যা দেয় তাই। তবে ডিজাইন ভেদে ২০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়বে। আলপনার রঙ নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, বৈশাখের রঙ মানেই লাল-সাদা। তবে লাল-সাদার পাশাপাশি এবারের বৈশাখে হলুদ-সবুজ-কমলাও বেশ ভালো চলবে।
আলপনা উঠাবেন কীভাবে পহেলা বৈশাখের দিন আলপনায় যেসব রঙ ব্যবহার করা হয় সেগুলো সাধারণত একদিনের জন্য। তাই আলপনা উঠাতে তেমন কিছুই লাগবে না। সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই উঠে যাবে। আলপনা উঠানোর পর ভালো কোন ক্লিনজিং মিল্ক দিয়ে পরিষ্কার করতে পারেন। কিছু পরামর্শ আলপনা আঁকতে যেহেতু রঙের ব্যবহার হয় তাই একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা রঙে থাকে কেমিক্যাল, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
যাদের ত্বকে র্যাশ ওঠে তাদের আলপনা একটু বুঝেশুনে করা উচিত। আবার যাদের ত্বক অতিরিক্ত সেনসেটিভ তারাও আলপনাকে এড়িয়ে যান। কারণ এতে আপনার চর্মরোগ হতে পারে। একটু সাবধানতা অবলম্বন করে নববর্ষ উদযাপন করুন আলপনার রঙে রাঙিয়ে। আলপনায় রাঙানো গৃহকোণ বাঙালির জাতীয় জীবনে একটি সার্বজনীন উৎসব হল পহেলা বৈশাখ। বৈশাখের প্রথম দিনে সবারই মাঝে থাকে সাজ-সাজ রব অর্থাৎ শুধুই রঙের ছড়াছড়ি। নববর্ষের উৎসবে অনেকেই আবার আলপনার রঙে রাঙিয়ে তোলেন গৃহকোণ কোন উৎসবে আলপনা করতে গেলে অবশ্যই উৎসবের আবহের সঙ্গে মিল রেখে করতে হবে। উৎসবটা যেহেতু পহেলা বৈশাখ তাই লাল-সাদাই হবে শ্রেয়তর। গুলশান নাসরিন চৌধুরী বলেন, লাল-সাদার পাশাপাশি সবুজ, নীল, কমলা রঙ ব্যবহার করতে পারেন।
রঙে একটু বৈচিত্র্য আনতে একটির সঙ্গে আরেকটি রঙ মেশালে ভিন্নতা আসবে। আলপনায় শোভা পেতে পারে লোকজ সংস্কৃতি, কুলা, ঢোল, তবলা, লতা-পাতা, ফুলসহ বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে যায় এমন কিছু। আলপনার শুর“টা হতে পারে প্রবেশপথ থেকেই। ফ্ল্যাটে বা বাড়ি ঢোকার মুখে যদি স্পেস না থাকে তাহলে অর্ধবৃত্তাকার আলপনা করতে পারেন। আর যদি স্পেস থাকে তাহলে সিঁড়ি বা লিফট থেকে নেমে বৃত্তাকার আলপনা করা যেতে পারে। আলপনা যেহেতু কয়েকদিনের জন্য তাই প্লাস্টিক পেইন্ট দিয়ে আলপনা করানোই ভালো হবে। কারণ প্লাস্টিক পেইন্ট তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় আবার ঘষা দিলে উঠে যায়। এছাড়া আইকা/আঠা, রঙের পাউডার সেই সঙ্গে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়েও আলপনা করা যেতে পারে।
বর্তমানে ঘরের মাঝে আলপনা করানোর ক্রেজ তেমন নেই। তবে ঘরের কর্নারগুলো অর্থাৎ যেখানে পা পড়ে না সেসব জায়গায় গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধার লহর দিয়ে আলপনা করা যেতে পারে। বসার ঘরের মেঝেতে হালকা আলপনা করার পড় ফাঁকাস্থান গুলো রঙের সঙ্গে মিল রেখে পাপড়ি ছড়িয়ে দিন।
এবার পরিবেশ আরও মোহনীয় করতে প্রদীপ জ্বালিয়ে দিতে পারেন। দেখবেন আলপনাতেই উৎসবের আমেজে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ঘর।