রুপকথার গল্পের সেই বরফসাদা রাজকন্যার কথা হয়তো অনেকেরই মনে আছে। ভোলাভালা রাজকন্যার সৎ মায়ের কূট কৌশল মাথায় ধরে না।
সময়ের পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু সাদা বা ফর্সাকে সবকিছুতে টেনে আনার সেই মানসিকতা আজও রয়ে গেছে। গায়ের চামড়া আরও কত ফর্সা হবে সেই নিয়ে চলে শত চেষ্টা। চলে বিজ্ঞাপন। কি শেখানো হচ্ছে এসব বিজ্ঞাপন থেকে-
এক. ‘পরিপূর্ণ’ ফর্সা বলে একটা কথা চালু হয়েছে। তার মানে ফর্সায় পূর্ণতা, অপূর্ণতার বিষয় রয়েছে। আপনার মলিন, ফ্যাকাশে কিংবা কালো ত্বকের জন্য এই ব্যবস্থা। যেনো ফর্সায়ই মুক্তি। অতএব এখনই ভোঁ-দৌড় দিন কাছের ফার্মেসি, কিংবা টং দোকানটিতে। মিলে যাবে সেই ফর্সা হওয়ার মহৌষধ। কারণ ওরা বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি তার সহজপ্রাপ্যতাও নিশ্চিত করে।
দুই. সেরা নায়িকার কথা শুনে ক্রিম মাখলে আপনি এমনিতেই ফর্সা হয়ে যাবেন। কিন্তু খেয়াল করে দেখেছেন কি ওরা কিন্তু ওদের ফর্সা ত্বকেই ক্রিম মাখে, কারণ তারা আগে থেকেই ফর্সা। আরও অবাক করা কাণ্ড হচ্ছে, ওরা যখন ত্বকে ক্রিম মাখে তখন সেই মহৌষধের মতোই সঙ্গে সঙ্গে কাজ করে। ফর্সা ত্বক হয়ে ওঠে আরও ফর্সা।
তিন. শরীরের ত্বকে এসব ক্রিম ব্যবহার করলে তা সাথে সাথে ত্বকের গভীরে পৌঁছে গিয়ে প্রতিটি কালো স্পট ঘুচিয়ে দেয়, মুখমণ্ডল হয়ে ওঠে ধবধবে সাদা আর তাতে চারিদিক হয়ে ওঠে আলোকিত।
চার. আরও সত্য হচ্ছে এমন ধবধবে সাদা ত্বকের অধিকারী হলেই কেবল আপনার জীবনে আসবে ভালোবাসা। প্রেমিকের দেখাও মেলবে তখন। আর আপনি যদি হন কালো কিংবা মলিন তাহলে আপনার প্রাণের মানুষটি আপনাকে পাশ কাটিয়েই চলে যাবে।
পাঁচ. আর আপনি যদি হন নিখুঁত সুন্দর তাহলে আপনার চাওয়া মতো একটি চাকরিও পেয়ে যাবেন অতি সহজে। তা ছাড়া কোনো অন্যায় দেখলে তার প্রতিবাদও করতে পারবেন। আপনি যেমন বর চান তেমনটাই পাবেন। আর কালো দাগহীন দীর্ঘস্থায়ী আনন্দের জীবনও আপনার মিলবে। আর হতে পারে তাতেই আপনিই দেবেন সোনার ডিম কিংবা সুন্দর ধরণীও আর আপনাকে ধারণ করতে পারবে না, আপনি হয়ে যাবেন স্বর্গের অপ্সরী।
সুতরাং ফর্সা গায়ের রঙ্গে আরও ফর্সার ছাপ আপনার জন্য সবচেয়ে কার্যকর। জীবনটা ঝরঝরা। কোনো কঠোর পরিশ্রমের দরকার নেই। যখন থেকে এই যাদুময় প্রসাধনী আপনি মাখতে শুরু করবেন আপনি প্রায় অতিমানব কিংবা মানবী পর্যায়ের কেউ হয়ে যাবেন। যদি পুরুষ হন হবেন সুপারস্টার শাহরুখ খান। আর নারী হলে আপনিই তখন বিশ্বসম্রাজ্ঞী। কারণ আপনার রুপের ঝলকে থমকে যাবে পথচলা মানুষগুলো কিংবা দেওয়াইল্যা হয়ে যাবে নিশ্চয়!
বাংলাদেশ সময় ১৮৩৬ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৪