বরিশাল: বরিশালে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে মনিশংকার মুন (১৫) নামে এক স্কুল ছাত্রের মৃতদেহ।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) সকালে নগরের কাউনিয়া ক্লাব রোডস্থ ঘোষ বাড়ি থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত মনিশংকার মুন নগরের উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল। সে বাকেরগঞ্জের কাকরধা দলিল উদ্দিন আহমেদ ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মানষ কুমার রায়ের পালিত ছেলে।
মুনের বাবা অধ্যাপক মানষ কুমার জানান, তার দুই মেয়ে। কোনো ছেলে ছিল না। তাই মুনের এক বছর বয়সে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা থেকে দত্তক নেয়া হয় তাকে। সেই থেকে নিজ সন্তানের মতোই বড় করা হয়েছে। তাকে কখনও বুঝতে দেয়া হয়নি যে, সে দত্তক বা পালিত সন্তান।
মানষ কুমার রায় বলেন, মঙ্গলবার বাসায় ফিরে তার মাকে জানিয়েছে, শিক্ষকরা চুল-দাড়ি কাটতে বলেছেন। তা না হলে পরীক্ষার হলে বসতে দেবে না। এরপর তার মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চুল-দাড়ি কেটে বাসায় ফেরে। সন্ধ্যায় গৃহশিক্ষক পড়িয়ে যাওয়ার পর সে রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজ কক্ষের দরজা আটকে দেয়। এরপর থেকে তাকে ডাকাডাকি করা হলেও কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি।
তাদের ধারণা ছিল, হয়তো রাগ করে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু বুধবার (৩০ নভেম্বর) সকালেও দরজা না খোলায় মুনের এক বন্ধুকে ডেকে এনে ঘরে দেওয়ালের উপরের ফাঁক দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করানো হয়। এরপর তারা দেখতে পান, পড়ার টেবিলের পাশে জানালার গ্রিলের সঙ্গে ঝুলছে মুনের দেহ।
এদিকে, হলে বসতে না দেয়ার বিষয়ে উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক স্যামুয়েল বলেন, অনুমতি পত্র দিয়ে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরীক্ষার হলে কেউ এ ধরনের কথা বলেছে কিনা, জানি না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকরা সবাই বসেছেন বলেও জানান তিনি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়া বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির বিভাগীয় আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, স্কুল থেকে মুনকে চুল ও দাড়ি কাটতে চাপ প্রয়োগ করে। এছাড়াও ঠিকমতো পড়াশুনা করেনি। এ নিয়ে পরিবার থেকে চাপ দেয়া হয়। এর জেরে ক্ষুব্ধ হয়ে হয়তো সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।
অধ্যাপক হাবুল আরও বলেন, শিক্ষক ও অভিভাবকদের উদাসীনতা এবং সন্তানদের আত্মহত্যার প্রবণতা এর জন্য দায়ী। বিষয়গুলো অভিভাবক থেকে শুরু করে স্কুল শিক্ষক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেও ভেবে দেখতে হবে।
সেইসঙ্গে এ থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করতে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, বরিশাল মেট্রোপলিটনের কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হরিদাস নাগ জানান, পালিত সন্তান হওয়ার বিষয়টি মুন জানতে পারে এবং এ নিয়েই বেশি বিষণ্ণতায় ভুগতো সে। যা তার বন্ধুদের সঙ্গেও শেয়ার করেছে। তবে পরিবার তাকে সেরকম দেখতো না কখনও। মুনের পড়াশুনার জন্য তিনজন শিক্ষক রাখা ছিলো, তারপরও সে পড়াশুনায় খারাপ করতে থাকে। এ নিয়ে পরিবার কিছুটা চিন্তিত ছিলো, তারা মুনের সঙ্গে এ নিয়ে কথাও বলে। এছাড়াও মুন মুখে ফ্রেঞ্চকাট দাড়িও রেখেছিলো। যা বিদ্যালয় থেকে কাটতে বললেও শোনেনি সে। সবশেষ মুখের দাড়ি কাটার জন্য শিক্ষকরা পরীক্ষার আগে চাপ দেয়। আর এ সব নিয়েই সে আরও বেশি বিষণ্ণতায় ভুগতে শুরু করে এবং আত্মহননের পথ বেছে নেয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, পড়ার টেবিলের পাশের জানালার গ্রিলের সঙ্গে ঝুলছিল মুনের দেহ। সেখান থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় মুনের পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ দেয়া হয়নি বলেও জানান হরিদাস নাগ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২২
এনএস