ব্রাহ্মণবাড়িয়া: আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫টি ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। এর জন্য কাটা হয়েছে অর্ধশতাধিক বনজ ও ফলদ গাছ।
উপজেলা থেকে জেলা প্রশাসনের দরজায় ঘুরে অবশেষে পুনঃজরিপে দেখা গেল জমিটি খাস নয়। এরই মধ্যে সরকারের লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন চেয়ারম্যান বিচার চাইছেন পরিমাপকারী চেইনম্যানের। প্রশাসনও সেখানে ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। ইতোমধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব ও ইউএনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুনঃজরিপের নির্দেশ দেন।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, সার্ভেয়ার ওয়াসিম আকরাম, তেলিকান্দি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার, চেইনম্যান আব্দুল গাফফার উপস্থিত থেকে জমি পরিমাপ করছেন। তারা জানান, আগে করা জরিপ ভুল ছিল। চেইনম্যানের ভুলেই ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ চলছিল। দাগ নম্বর ঠিক মত ধরতে না পারায় এ ভুলের সৃষ্টি হয়েছিল।
জানা গেছে, স্থানীয় মো. ছিদ্দিকুর রহমান ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যে ১৬ শতক ডোবা ও ২১ শতক বাড়ি কিনেন। পরে তিনি ডোবা ভরাট করে ঘর নির্মাণ এবং বিভিন্ন ফলদ ও বনজ গাছ রোপণ করেন। সম্প্রতি গত ১৬ নভেম্বর অরুয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন তার ব্যক্তিমালিকানার জায়গায় খাস জমি আছে এমন দাবি করে কোনো পূর্ব নোটিশ না দিয়ে ঘর ভেঙে ফেলে এবং কয়েক লাখ টাকা মূল্যের গাছ কেটে ফেলে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। পরে সিদ্দিকুর রহমান বিষয়টি জেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুনঃজরিপের নিদের্শ দেয় প্রশাসন।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার সার্ভেয়ার ওয়াসিম আকরাম বলেন, আমরা উপরের নিদের্শে জায়গাটি পুনঃরায় পরিমাপ করতে এখানে এসেছি। আগের পরিমাপে কিছু ত্রুটি ছিল।
তবে নিজের দোষ অস্বীকার করে চেইনম্যান আব্দুল গাফফার বলেন, আমি কোনো ভুল করিনি। আমাকে ইউএনও সাহেব বললেন, এই দাগের মধ্যে ৭২ শতক খাস জমি আছে। আমি শুধু সেটুকু পরিমাপ করে দিয়েছি।
অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, দুইজন ইউএনও বসে থেকে জায়গা নির্ধারণ করে দিয়ে গেছে। আমি ও নায়েব উপস্থিত ছিলাম। আমরা নিরুপায়। চেইনম্যান জায়গা মেপে দিয়ে, গাছ কেটে, সম্মানিত ব্যক্তিকে সরকারের জায়গা দখলের তকমা দিয়ে অসম্মানিত করেছে। তার ভুলের কারণে এত ক্ষতি হলো। আমরা তার বিচার চাই। এ ঘটনায় এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি হয়েছিল। সবাই আমাকে দায়ী করেছে। আমি জায়গা দখল বা বুঝিয়ে দেবার কে?
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব মো. রুহুল আমিন বলেন, ভুক্তভোগীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পুনঃজরিপ করে দেখেছি। আগের মাপে ভুল ছিল। আমরা এখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এ বিষয়ে সিদ্দিুকুর রহমানের নাতি ফরিদুল হক বলেন, আমরা আমাদের বসতঘর ভাঙা ও গাছকাটার ক্ষতিপূরণ চাই। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের শাস্তির দাবি জানাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২২
আরএ