ঢাকা: বাংলাদেশের অন্যান্য নারীর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে গড়ে ওঠা নারী পুলিশ সদস্যরা বর্তমান শিশুদের জন্য বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেন, সাতটি মেট্রো পুলিশসহ পার্বত্য রাঙামাটির ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার সহিংসতার শিকার নারী শিশুর চিকিৎসা সহায়তা, আইনি ব্যবস্থা, সাময়িক আশ্রয়দানসহ মন-সামাজিক কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে নিষ্ঠার সঙ্গে জেন্ডার সংবেদনশীল সেবা দিতে নিয়োজিত রয়েছেন নারী পুলিশ সদস্যরা।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত নারী পুলিশের গৌড়বময় যাত্রা ও অর্জন ১৯৭৪-২০২২ শীর্ষক বার্ষিক প্রশিক্ষণ সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের (বিপিডব্লিউএন) উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে স্পেশাল ব্রাঞ্চে পোশাকে সর্বপ্রথম ১৪ জন নারী পুলিশ সদস্য নিয়োগের মাধ্যমে এ যুগান্তরকারী পদক্ষেপ নেন। পরবর্তীতে নানা বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে নারীদের যে পথচলা অব্যাহত থাকে। সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা, দৃঢ়তা, ও সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি জনমুখী পুলিশিং ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ নারীর ক্ষমতায়ন ও দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী নারী ও শিশুর জন্য জেন্ডার সংবেদনশীল সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রথাগত পেশার বাইরে পুলিশসহ বিবিধ ক্ষেত্রে নারীর অংশ নেওয়ার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী পদক্ষেপে নারী পুলিশের সংখ্যা কয়েকটি ধাপে বাড়ানো হয়েছে ১৫ হাজার ৫৬১ জন। যা সামগ্রিক পুলিশ সদস্যের ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। মাঠপর্যায়ের পুলিশি কাজের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নারী পুলিশ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। জেলা পুলিশ, মেট্রো পুলিশসহ বিশেষায়িত নৌ-পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, রেল ও হাইওয়ে পুলিশ এবং শিল্প পুলিশে নারী পুলিশ সদস্যরা কার্যক্রম গতি সঞ্চার করেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ নারী সদস্যরা বর্তমানে নারীর প্রতি তা ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার ও পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের পুশি সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন প্রযুক্তিগত দক্ষতার ধারা নারীর প্রতি সংঘটিত ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধ মোকাবিলাসহ নিরাপদ সাইবার ক্ষেত্র তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে নারী শিশুর নিরাপত্তায় পুলিশের নারী সদস্যরা আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছেন। মামলা তদন্ত, ফরেনসিক, জঙ্গি দমন, গোয়েন্দা কার্যক্রম, বিমান চালনা, ভিভিআইপি প্রটেকশন, ইমিগ্রেশন সর্বোপরি জাতীয় জরুরি সেবা- ৯৯৯ প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমাদের পুলিশের নারী সদস্যরা দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন।
তিনি বলেন, মুজিববর্ষের অঙ্গীকার হিসেবে সমগ্র দেশের থানাগুলোতে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সহায়তা ডেস্কের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। যা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকার সুবিধা বঞ্চিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনন্য মাত্রা যোগ করবে বলে আমার বিশ্বাস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ গ্রহণ, দেশ-বিদেশে উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে নারী পুলিশ পেশাগত দক্ষতার উন্নয়নের পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিউএন) নারী পুলিশের চলার পথকে সুগম করতে যেমন পেশাগত উন্নয়নে অবদান রাখছে তেমনি কমিউনিটির মাঝেও জেন্ডারভিত্তিক অপরাধ বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে। আমি সংগঠনটির সার্বিক সাফল্য কামনা করি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নারী পুলিশের অবদান সম্বলিত প্রকাশনা - Police Women in Blue Helmet: Tales of Success and Pride এ বইটি পড়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নারীর কাজ করার ক্ষেত্রে অধিকতর আগ্রহী ও সংকল্পবদ্ধ হবে। অ্যাডিশনাল আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ফাতেমা বেগমের ‘আমার পুলিশ হওয়া’ গ্রন্থটি চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীদের উদ্বুদ্ধ করবে। বিপিডব্লিউএন এর এ ধরনের অনুপ্রেরণামূলক প্রকাশনার উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমি পুলিশ বাহিনীকে বলবো সামাজিক অপরাধ দমনে প্রযুক্তি নির্ভরতা ও বিজ্ঞান ভিত্তিক অপরাধ ব্যবস্থাপনার যেমন বিকল্প নেই তেমনিভাবে অপরাধকে সমূলে উপড়ে ফেলতে এর উৎস অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। যে ক্ষেত্রে পুলিশের গোয়েন্দা ও কার্যকরী গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা অতি আবশ্যক। আপনাদের অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ ও সৃজনী প্রতিভা দ্বারা নিজেদের কর্মদক্ষতাকে শানিত করবেন ও বাংলাদেশ পুলিশকে গৌরবান্বিত করবেন এ আহ্বান জানাই।
বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ নেটওয়ার্কের (বিপিডব্লিউএন) সভাপতি ও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডিআইজি (প্রটেকশন অ্যান্ড প্রটোকল) আমেনা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২২
এসজেএ/এএটি