দিনাজপুর: ১৮ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় দিনাজপুর পৌরসভার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবা প্রত্যাশীরা।
এর আগে মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভার।
এদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় বুধবার জন্মনিবন্ধনসহ কোনো সেবাই দেওয়া সম্ভব হয়নি সেবা প্রত্যাশীদের। অপরদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় করোনার ভ্যাকসিনসহ পৌরসভায় রাখা বিভিন্ন ভ্যাকসিন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার আগে পৌর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়নি বলে দাবি করেছেন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মিনারুল ইসলাম খান। তবে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করতে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে কথা হচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে পৌরসভায় গিয়ে শুধুমাত্র কর্মকর্তাদের রুমের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে একটি জেনারেটর চালু রাখতে দেখা যায়। বিদ্যুৎ না থাকায় জন্মসনদসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে কর্মীরাও অলস সময় পার করছেন। সকাল থেকে শত শত মানুষ পৌরসভায় এসে সেবা না পেয়ে ফিরে গেছেন।
এদিকে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে পৌরসভায় বিভিন্ন টিকা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় টিকাগুলো (ভ্যাকসিন) নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পৌরসভার ইপিআই সুপারভাইজার মোমরেস সুলতানা বলেন, গতকাল থেকে বিদ্যুৎ নেই। করোনার আট হাজার ১৩০টি ভ্যাকসিন ও শূন্য থেকে ১১ মাস বয়সী বাচ্চাদের দেওয়ার জন্য কয়েক হাজার ভ্যাকসিন রয়েছে। আমাদের এখানে দু’টি ডিপ ও দু’টি সাধারণ ফ্রিজ রয়েছে। ফ্রিজগুলোতে টিকাগুলো সংরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু গতকাল থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজগুলো বন্ধ হয়ে আছে। এখন আল্লাহর ওপর ভরসা রাখছি।
পৌরসভার হেপাটাইটিস বি টিকা কার্যক্রমের কর্মী নার্গিস বেগম বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় রোগীদের টিকা দিতে পারিনি। অন্ধকারে কোনো কাজ করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় বাথরুমগুলোতেও পানি নেই। এক কথায় আমরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে আছি।
শহরের রামনগর থেকে সেবা নিতে এসে ফিরে গেছেন মিনা আক্তার। তিনি বলেন, আমার বাচ্চার জন্মসনদ নিতে গিয়ে দেখি বিদ্যুৎ নেই। কম্পিউটার না চললে জন্মসনদ দেবে কীভাবে? কখন যে বিদ্যুৎ দেবে আর কখন আমার কাজটা হবে, জানি না। বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করবো কীভাবে? আমরা তো সময়মতো পৌরসভার সব ভ্যাট ট্যাক্স দিই, তাহলে বিল কেন বকেয়া থাকবে?
পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জুলফিকার আলী স্বপন বলেন, আমি কাউন্সিলর হয়েছি দুই বছর হলো। এ দুই বছরে ২৪টি মাসিক সমন্বয় সভা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো মাসিক সমন্বয় সভায় বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার ব্যাপারে জানানো হয়নি। এখন আমরা অন্ধকারে আছি। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য দায়ী একমাত্র মেয়র। মেয়রের বিচার জনগণের ওপর ছেড়ে দিলাম।
দিনাজপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মিনারুল ইসলাম খান বলেন, দিনাজপুর পৌরসভার কাছে বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ১ ও ২-এ মোট ১৮ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। তবে বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ১ এর অফিসটি দিনাজপুর পৌরসভার সম্পত্তি। এ বাবদ প্রথম থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা তাদের কাছে আমরা পাই।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম শাহাদত হোসেন বলেন, পৌরসভার কাছে বিদ্যুৎ বিভাগ ১ ও ২ এর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। কিন্তু তারা কোনো টাকা পরিশোধ করেনি। বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আর আমাদের কাছে পৌরসভা জমি ভাড়া বাবদ যদি কোনো টাকা পেয়ে থাকে, তাহলে আমাদের কাগজপত্র দেখাক। কিন্তু তারা আমাদের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারে না।
এদিকে দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. বোরহন-উল হক বলেন, পৌরসভায় আমাদের টিকা রয়েছে। আইসল্যান্ড রেফ্রিজারেটর থাকলে ৭২ ঘণ্টা টিকা ঠিক থাকে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়টি জানার পর আমরা পৌরসভার কাছে থাকা টিকাগুলো বিকল্প জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করছি।
এদিকে বুধবার পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার রুমটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। মেয়রের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে কল কেটে দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২২
এসআই