ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কমছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে ডাকাতি-ছিনতাই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২২
কমছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে ডাকাতি-ছিনতাই ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: কেরামত আলী একজন ব্যবসায়ী। ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার দড়িগাঁও বাজারে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।

গত ১৩ নভেম্বর দুপুরে তার প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাগে করে ৮৫ লাখ টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন ব্যাংকে। পথিমধ্যে অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন লোক কেরামত আলীর গতিরোধ করে এবং নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয়ে দেয়৷ নির্জন জায়গায় নিয়ে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সব টাকা লুট করে পালিয়ে যায়৷ 

অপরদিকে, গত ১৬ অক্টোবর মো. সাদ্দাম (৩২) নামের এক ব্যক্তিকে র‌্যাবের সদস্য পরিচয় দিয়ে যাত্রাবাড়ী থানাধীন শহীদ ফারুক রোড এলাকা থেকে মোটরসাইকেল যোগে শনির আখড়ায় নিয়ে যায় ইউসুফ নামে এক প্রতারক।  

এ বিষয়ে র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, গত ২৭ নভেম্বর রাতে যাত্রাবাড়ী এলাকায় থেকে র‌্যাবের সার্জেন্ট পরিচয়ধারী প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়। সে এর আগেও এমন বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করেছে বলেও স্থানীয়রা জানিয়েছে।  

তবে আমরা তৎপর রয়েছি, র‌্যাব-ডিবি পুলিশ পরিচয়ধারী অপরাধীদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

ভুক্তভোগী সাদ্দামকে মামলা দেওয়ার ভয়সহ বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। এরপর সাদ্দাম ভয়ে তার আত্মীয়স্বজনদের কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ইউসুফকে ১০ হাজার টাকা দিলে ভুক্তভোগী সাদ্দামকে ছেড়ে দেয়।

রাজধানীতে প্রায়ই র‌্যাব-ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্মের ঘটনা ঘটেই চলেছে৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে কথিত র‌্যাব-ডিবি পরিচয়দানকারী অপরাধী ও প্রতারকদের গ্রেফতারের মাধ্যমে আইনের আওতায় নিয়ে আসছে। তারপরও সাধারণ মানুষ এমন অপরাধীদের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, বেশ কিছু চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও ব্যাংকের গ্রাহকসহ সাধারণ ব্যক্তিদের টার্গেট করে তাদের র‌্যাব-পুলিশ পরিচয় দিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব হাতিয়ে নিচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-ডিবি পরিচয়ে ডাকাত ও ছিনতাই চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হলেও তারা জামিনে বের হয়ে পুনরায় একই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার সাভার, পটুয়াখালী সদর ও রাজধানীর কাজলা এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের এক ব্যবসায়ীর ৮৫ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় একটি চক্রের সোহাগ মাঝি, মো. দেলোয়ার, মো. জয়নাল হোসেন, মো. সোহেল, মো. জনি এবং মো. আজিজ নামে ৬ ডাকাতকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ।

গোয়েন্দার পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ডিবি পুলিশ, সিআইডি, র‌্যাবের পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকসহ আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান করে অপরাধীরা ব্যবসায়ীসহ আর্থিক লেনদেনকারীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। এরপর যেসব জায়গায় সিসি ক্যামেরা নেই এমন নিরিবিলি জায়গায় সুযোগ বুঝে ভুয়া পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীদের গতিরোধ করে। ডাকাতি ছিনতাই করে এরপর সর্বস্ব লুটে ভুক্তভোগীদের মারধর করে ছেড়ে দিত।  নিজেদের আসল ডিবি হিসেবে উপস্থাপন করতে অপরাধীরা হ্যান্ডকাপ, ওয়্যারলেস ও খেলনা পিস্তল ব্যবহার করে থাকে।  

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকসহ বিভিন্ন জায়গায় ছিনতাইকারী অথবা ডাকাত চক্রের সোর্স রয়েছে। তাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও টাকা লেনদের ক্ষেত্রে আরো বেশি সর্তক হতে হবে।

এছাড়াও বেশি টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নিতে হবে বলেও জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২২
এসজেএ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।