রাজশাহী: রাজশাহী বিভাগে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) ভোর ৬টা থেকে এই ধর্মঘট শুরু হয়েছে।
যানবাহন না পেয়ে দূর-দূরান্তে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েও পথে পথে যাত্রীরা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশে মহানগরের শিরোইল, ভদ্রা ও রেলগেট বাস টার্মিনালে আসেন যাত্রীরা। কিন্তু বাস না পেয়ে কেউ বিকল্প যানবাহন কেউবা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। অনেককে আবার রাজশাহী রেল স্টেশনে ভিড় করতে দেখা যাচ্ছে।
ধর্মঘটের ফলে চাপ পড়েছে ট্রেনে। তাই বিভিন্ন রুটের ট্রেনের টিকিট এরই মধ্যে হাওয়া গেছে। টিকিট না পেয়ে অনেকে দাঁড়িয়েই রওয়ানা দিচ্ছেন। এছাড়া পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকেই ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রাজশাহীর আন্তঃজেলা রুটের যাত্রীরাও। সিএনজি, হিউম্যান হলার, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন বিকল্প যানবাহনে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে যাত্রীরা জরুরি প্রয়োজনে নিজ গন্তব্যে রওয়ানা দিচ্ছেন।
রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে আজ অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হলো। বুধবার (৩০ নভেম্বর) মধ্যে সড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধসহ ১১ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এই অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তারা।
এদিকে রাজশাহীতে আগামী ৩ ডিসেম্বর বিভাগীয় গণসমাবেশ রয়েছে বিএনপির। এই গণসমাবেশ উপলক্ষে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের আগমন ঘটবে। তাই বিএনপি নেতাদের দাবি, ১১ দফাটা মূল বিষয় নয়, মূলত দেশের অন্যান্য গণসমাবেশের মতো রাজশাহীর গণসমাবেশে মানুষকে আসতে বাধা দিতেই কৌশলে এ পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
এটি সাজানো নাটক উল্লেখ করে বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার বলেন, মূলত পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা সরকারকে এই পরিবহন ধর্মঘটের মাধ্যমে সহযোগিতা করতে চাইছেন। বিএনপির প্রত্যেকটা সমাবেশের আগেই বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় এমন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। তবে এতকিছুর পরও মানুষ কোনো না কোনোভাবে গণসমাবেশে গেছেই এবং শতভাগ সফলও হয়েছে। তাই ধর্মঘট দেওয়া হোক, আর যা-ই দেওয়া হোক না কেন- রাজশাহীতে ৩ ডিসেম্বরের গণসমাবেশে জনস্রোত নামবে। শুধু সমাবেশস্থল মাদ্রাসা মাঠ নয়, পুরো রাজশাহী শহর জনসমুদ্রে পরিণত হবে। কারণ হচ্ছে- ঢাকার বাইরে এটিই হলো বিএনপির শেষ গণসমাবেশ। তাই কোনো বাধাই কাজে আসবে না। বিশাল জনসমুদ্রই প্রমাণ করে দেবে যে এ ধরনের ধর্মঘট ডেকে বিএনপির সমাবেশ কোনোভাবেই ব্যর্থ করা যায় না।
তবে বিএনপির এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহন মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক বলেন, বিএনপির গণসমাবেশ সামনে রেখে এমন সিদ্ধান্তের বিষয়টি অমূলক। তাদের দাবির মধ্যেও এমন কিছু উল্লেখ নেই। তারা মহাসড়ক থেকে নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধসহ এই ১১ দফা দাবিতে আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে কথা বলে আসছেন। বিভিন্ন সময় প্রশাসনকে এ বিষয়ে চিঠিপত্র দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগেও তারা সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবির বিষয়ে কথা বলেছেন। দাবি আদায়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এই কর্মসূচি এবারই প্রথম নয়। গত ২৬ নভেম্বর নাটোরে বিভাগীয় পরিবহন নেতারা বসে আলোচনা করেই ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আজ পর্যন্ত তাদের দাবি পূরণের কোনো আশ্বাস মেলেনি। তাই পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী পরিবহন নেতারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড় বলেও জানান।
এর আগে শনিবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে নাটোর শহরের কানাইখালি এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিভাগীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় তাদের ১১ দফা দাবি আদায়ে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজশাহীর আট জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। নাটোর জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন- রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি সাফকাত মনজুর বিপ্লব।
পরে একই স্থানে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ সংশোধন করা ও মহাসড়ক থেকে নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধসহ ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নে সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়।
এছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়ক থেকে থ্রি হুইলার সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ এবং পরিবহন যন্ত্রাংশের মূল্য কমানোরও দাবি করেন তারা। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তাদের এসব দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে আজ ১ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হবে বলেও সভায় ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২২
এসএস/এএটি