বরিশাল: বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (শেবাচিম) হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ড নতুন ভবনে (কোভিড হাসপাতাল ভবন) স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু নির্দেশ অনুসারে কাজ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের সচিব ও কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এ কে এম আমিরুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শেবাচিম হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। বিভাগের দেওয়ার নির্দেশ মোতাবেক কোনো কাজ না হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন করেন তারা।
জানা গেছে, হাসপাতালের পুরনো ভবনের পূর্ব পাশে নির্মিত নতুন ভবন পরিদর্শন করেন সরকারি এ আমলাগণ। চার মাস পেরিয়ে গেলেও নির্দেশনা মোতাবেক পুরনো ভবন থেকে নতুন ভবনে হাসপাতাল স্থানান্তর না হওয়ায় এর কারণ জানতে চান হাসপাতাল প্রশাসনের কাছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের এমন প্রশ্নের জবাবে শেবাচিমের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুর ইসলাম জানান, নতুন ভবনে যে সংস্কার প্রয়োজন ছিল তা করা হয়েছে, এখন স্থানান্তর করলেই হবে। কিন্তু মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা সেখানে যেতে চাচ্ছেন না।
পরে তিনি নিজেই বিষয়টি সম্পর্কে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের প্রধান আনোয়ার হোসেন বাবলুর কাছে কারণ জানতে চান। এ সময় তিনি যে যুক্তি দেন, সেটি খোঁড়া বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সচিব। এ সময় একজন চিকিৎসক হিসেবে তিনি (বাবলু) যে পোশাক পরেছেন, সেটি নিয়েও তিরস্কার করেন।
পরবর্তীতে হাসপাতাল পরিচালককে দ্রুত সময়ের মধ্যে মেডিসিন ওয়ার্ড হস্তান্তরের নির্দেশ দেন সচিব। কোনো কাজ বাকি থাকলে সেটিও দ্রুত সেরে ফেলার নির্দেশ দেন।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে হাসপাতালের বিভিন্ন বিসয়ে আলাপ করেন সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। তিনি বলেন, শেবাচিমে জনবলের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে; সেটি দেখা হচ্ছে। আর চিকিৎসকের ঘাটতি বা আনা-নেওয়ার বিষয়টি থাকলে সেটিও দেখা হবে। তবে হাসপাতালে বরাদ্দ থাকা পদে সবাই রয়েছেন বলেই আমি জানি, তারপরও খালি থাকলে সেগুলো পূরণ করে দেওয়া হবে।
মেডিসিন ওয়ার্ড নির্দেশ দেওয়ার পরও স্থানান্তর না হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক কোনো ইস্যু আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিষয় রয়েছে কিনা সেটি বলতে পারবো না। তবে ড্যাব’র (বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন) নেতারা সরকারি চিকিৎসক। তাদের প্রফেশনাল দিকগুলো দেখা প্রয়োজন। তারা যদি কোনো ইগো ধরে রাখে সেটা অন্যায়। রোগীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো আমাদের দায়িত্ব। একটা হাসপাতাল ভবনের মধ্যে গাদাগাদি হয় দেখেই এটা (নতুন ভবন) করা হয়েছিল। সুতরাং এখানে আসবে কি আসবে না এমন বিষয় থাকা উচিত নয়। এটা তো ইন্টারনাল ব্যাপার, আমরা ঠিক করে ফেলবো।
হাসপাতালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অনিয়ম রোধের বিষয়ে তিনি বলেন, চতুর্থ শ্রেণির লোকজন আর আমরা দেব না। তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে হাসপাতাল জিম্মি করে এমন অভিযোগ আমাদের কাছেও রয়েছে। এজন্য আমরা এখন থেকে আউটসোর্সিং করি। আউটসোর্সিং এ দিলে ভালো কাজ করলে থাকতে পারবে নয়তো পরের বছর পাল্টে দেওয়া হবে।
হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এ কে এম আমিরুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কলেজের সভাকক্ষে হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসকসহ স্থানীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেও সচিব মেডিসিন ওয়ার্ড নতুন ভবনে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন এবং পরিচালককে এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে বাকি চিকিৎসকদের পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২২
এসএম/এমজে