চাঁপাইনবাবগঞ্জ: নিজের বয়স ৪০ হবে। ১৫ বছরের অসুস্থ ছেলেকে কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের বিশ্বরোড মোড়ে।
এরপর ঠিকানা জানতে চাইলে রাগতস্বরে বলেন, দেখছেন না বাস-টাস নেই। বিপদে আছি, পারলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। ছেলের হঠাৎ করে পা ভেঙেছে। ডাক্তার বলেছে রাজশাহীতে ভর্তি করাতে। অ্যাম্বুলেন্স পেলাম না, আর বাস টার্মিনালে এসে জানলাম পরিবহন ধর্মঘট। এখন যে কোনো মূল্যে রাজশাহীতে যেতে হবে। আগে এর সমাধান দেন, তারপর প্রশ্ন করেন। পরে অবশ্য তিনি অটোরিকশায় ৩শ টাকা ভাড়ায় ছেলেকে চ্যাংদোলা করে উঠিয়ে রওনা হন। এ অবস্থা শুধু জামিল উদ্দিনের একার নয়, পুরো জেলায় শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সকালে এমনই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধন, মহাসড়কে অবৈধযান বন্ধ ও জ্বালানি তেল এবং যন্ত্রাংশের অস্বাভাবিক মূল্য হ্রাসসহ ১০ দফা দাবিতে রাজশাহী বিভাগে শুরু হওয়া অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের কারণে এ দুরাবস্তা।
শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে সকাল ছয়টা থেকে এই ধর্মঘট শুরু হয়। এসময় আন্তঃজেলা বা দূরপাল্লার কোনো যানবাহন এই জেলা থেকে ছেড়ে যায়নি বা আসেনি। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সেই সঙ্গে বুধবার (৩০ নভেম্বর) রাতেও কোনো ঢাকার কোচ ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি।
এর আগে বুধবার বিকেল পর্যন্ত দূরপাল্লার বাস সব ছেড়ে গেলেও যাত্রীদের নিয়ে আর ফেরেনি। এছাড়া ওইদিন বিকেলে থেকেই আন্তঃজেলা চলাচলকারী পরিবহনগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দুর্ভোগ শুরু হয় যাত্রীদের।
এদিকে, বাস বন্ধ থাকায় কয়েকগুণ বেশি ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছে রিকশা ও অটোরিকশাগুলো। মহাসড়কের অবৈধযানগুলোই এখন কর্মজীবী মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা। বিশেষ করে যারা রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চাকরি করেন, তারা দুর্ভোগে পড়েছেন বুধবার বিকেল থেকেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, তিনি বুধবার বিকেলে অফিস শেষ করে কোনো বাস না পেয়ে এবং পরদিন একই ভোগান্তির ভয়ে হোটেলে উঠেছেন।
শরিফা খাতুন নামে রাজশাহীগামী এক যাত্রী বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সড়ক জুড়ে অটোরিকশা ও সিএনজি চালকদের ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। রাজশাহীতে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে সবাইকে।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর বিএনপির আহ্বায়ক ওবায়দুর রহমান পাঠান বলেন, গণসমাবেশে নেতা-কর্মীদের আসা বাধাগ্রস্ত করতেই পরিকল্পিতভাবে বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে জন্যে নেতাকর্মীদের বিকল্পভাবে সমাবেশে আগেভাগে আসতে বলা হয়েছে। যেভাবে হোকে এ সমাবেশ সফল করা হবে ।
এদিকে জেলা বিএনপি আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া অভিযোগ করেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী পর্যন্ত পুলিশ ৫টি চেকপোষ্ট বসিয়ে তাদের নেতাকর্মীদের হয়রানির পাশাপাশি সাধারন নিরীহ মানুষকেও ছোট ছোট যান থেকে নামিয়ে দিচ্ছে।
ধর্মঘট প্রসঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো: হামিদুর রহমান নান্নু বলেন, দাবি আদায়ে সরকারের সঙ্গে বারবার আলোচনা হলেও কোনো সমাধান না আসায় বাধ্য হয়ে এই ধর্মঘটের ডাক দিতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ধর্মঘটের সঙ্গে বিএনপির মহাসমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ এই ১০ দফা দাবি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে আসছিলেন বাসমালিক-শ্রমিকরা। সরাকারের পক্ষ থেকে এই দাবি না মানার কারণে বাধ্য হয়ে ধর্মঘটের ডাক দিতে হয়েছে বলে জানান এই পরিবহন নেতা।
উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রতিদিনই আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বিভিন্ন রুটে প্রায় সাড়ে তিনশর বেশি বাস চলাচল করে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২২
এমএমজেড