চাঁদপুর: চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের ৫৪ কিলোমিটার এলাকা অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা তৈরি অব্যাহত রয়েছে। মাঝে মাঝে সেখানে উচ্ছেদ অভিযান হলেও কয়েকদিনের মধ্যেই ফের দখল হয়ে যায় স্থানগুলো।
রেলপথের চাঁদপুর অংশে হাজার হাজার অবৈধ দখলদার থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে বাস্তবে কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি এবং নাম তালিকা করে চিহ্নিত করা হয়নি। তবে খুব শিগগিরই অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি বিভাগ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার শাহরাস্তি উপজেলার চিতষী, মেহের, ওয়ারুক, হাজীগঞ্জ, সদরের মধুরোড, শাহতলী, মৈশাদী, শহরের কোর্ট ও চাঁদপুর স্টেশন এলাকায় এখনো ছোট বড় হাজার হাজার স্থাপনা। এর মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের লিজ কিংবা অনুমতি নেয়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। শহরের চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় স্থানীয় কাউন্সিলর রেল লাইনের পাশে জায়গা দখল করে তার কার্যালয় বানিয়েছেন। ওই এলাকা থেকে শুরু করে শহরের কোর্ট স্টেশন পর্যন্ত টিনের এবং পাকা করে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। মসজিদ, মন্দির গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি। মসজিদ নির্মাণের জন্য সম্পত্তি ওয়াকফ আবশ্যক হলেও মানা হচ্ছে না কোনো বিধান। মসজিদকে কেন্দ্র করে শহরের মিশন রোডে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ভাড়া দিচ্ছে অসাধু ব্যক্তিরা।
শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের পূর্ব মাথায় স্থানীয় লোকজন দীর্ঘ মার্কেট নির্মাণ করে গড়ে তুলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সেখানে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, জেলা নির্বাচন অফিস, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) অফিস নির্মিত হওয়ায় রেলওয়ের সম্পত্তি দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। অবৈধভাবে একের পর এক নির্মাণ হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব অবৈধ দখলের সঙ্গে জড়িত আছে রাজনৈতিক পরিচয়ধারী, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোক। তবে তারা প্রকাশ্যে না এসে অন্য লোকদের দিয়ে দখলের কাজগুলো করেন।
সদর উপজেলার মৈশাদী স্টেশন এলাকার বাজার কমিটির সদস্য জসিম উদ্দিন জানান, রেলস্টেশন এলাকায় অবৈধভাবে গড়েওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বহু বছর আগের। তবে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কোনো ধরনের লিজ নেই। যে কারণে কয়েক মাস আগে একবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। কিন্তু ফের সেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে।
শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক ও মিশন রোড এলাকার রেল ক্রসিংয়ে দায়িত্বরত গেটম্যানরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি প্রতিদিন রেলক্রসিং এলাকার আশাপাশের হকারদের কাছ চাঁদা আদায় করেন। জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলেন, মসজিদের জন্য টাকা উঠাই। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ শহর এলাকার হকারদের কাছ থেকে রেলওয়ের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী দৈনিক টাকা তোলেন। তাদেরকে টাকা দিয়ে হকাররা শহরের কোর্ট স্টেশন এলাকায় রেললাইন ঘেঁষে মালামাল বিক্রি করে।
চাঁদপুর রেলওয়ে (জিআরপি) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুরাদ উল্যাহ বাহার বাংলানিউজকে বলেন, কেউ রেলওয়ের কর্মকর্তার নাম করে টাকা নিলে আমাদেরকে জানাবেন। আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব। রেলপথের নিরাপত্তার জন্য আমরাও অনেক সময় হকারদের উচ্ছেদ করি। কয়েকদিন আগেও কোর্ট স্টেশন এলাকায় উচ্ছেদ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুবুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, উচ্ছেদ অভিযান আমাদের পূর্বের কর্মসূচি। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। যেখানে অবৈধ স্থাপনা সেখনে চলবে উচ্ছেদ। গত কয়েক মাস আগে চাঁদপুর সদরের মৈশাদী এলাকায় প্রায় ৩ শতাধিক অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা হয়েছে। শহর এলাকার অবৈধ স্থাপনাগুলোও উচ্ছেদ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা ডিসেম্বর ২, ২০২২
এমএমজেড