ঢাকা: জাতীয় উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে হলে এর ধারা দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে, তাহলেই দেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
শনিবার (০৩ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আয়োজনে ‘জনশুনানি: জাতীয় উন্নয়ন ও স্থানীয় বাস্তবতা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
অধ্যাপক রেহমান সোবহান গত এক যুগে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা ও উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, গত এক দশকে দেশ বেশ উন্নতি করেছে, সেটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে, মাঠ পর্যায় থেকে যে আলোচনা আসছে বা যে সমস্যার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো ঠিক সমাধানের পথ তৈরি হচ্ছে না।
এই অর্থনীতিবিদ প্রান্তিক মানুষের জীবনমান উন্নয়নের বিষয়ে বলেন, সরকারের যেসব ক্ষেত্রে অবদানের কথা মন্ত্রী বলছেন, আর প্রান্তিকের মানুষ আজ যে সমস্যাগুলোর কথা বলছেন, সেগুলো কী করে সমাধান করা যায় সেগুলো নিয়ে অলোচনা হওয়া উচিত। মাঠ থেকে ক্ষুধার্ত মানুষের কাছ থেকে যে শব্দ আসে, সেগুলো তো সমাধান হচ্ছে না।
রেহমান সোবহান আরও বলেন, সাঁওতালদের সমস্যা, চা শ্রমিকদের সমস্যা, গার্মেন্টস শ্রমিকদের সমস্যা এতো বছরেও কেন সমাধান হচ্ছে না? আমি বলতে চাই, সমস্যাগুলো সবই আমরা জানি, তাহলে বছরের পর বছর এসব সমস্যা সমাধান হচ্ছে না কেন? আমাদের অর্থনৈতিক গ্রোথ হচ্ছে, অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু মানুষের যে সমস্যা ছিল সেগুলো যেমন ছিল ঠিক তেমনই আছে, তাই এসব বিষয়ে কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রান্তিক পর্যায়ের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে রেহমান সোবহান বলেন, যেসব সমস্যার কথা উঠছে সেগুলো সব লোকাল গভর্মেন্ট। এই ধরনের শুনানি জেলা পরিষদে হলে ভালো হতো, তাহলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় প্রশাসনের লোকজন অংশগ্রহণ করতে পারতো। তাহলে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।
আধিবাসী ও সংখ্যালঘুদের ভূমি সমস্যার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আদিবাসী বা সংখ্যালঘু সংখ্যায় অনেক ছিল, দিনে দিনে তাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, তাদের ভূমি সমস্যর কোনো সমাধান হচ্ছে না। লোকাল মাস্তানরা তাদের সম্পদ দখল করে ফেলছে, এসব তো সমাধান হওয়া প্রয়োজন। সরকারে আইন আছে, নীতি আছে এবং কমিটমেন্টও আছে, তাহলে এসব সমস্যা কেন সমাধান হচ্ছে না? এসব বিষয়ে মন্ত্রী যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলে আমি মনে করি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা শতভাগ সফল তা বলবো না। তবে আমার সরকারের সফলতা অনেক। আজ থেকে ১৪ বছর আগে আমাদের দল যখন ক্ষমতায় এসেছে তখন মাথাপিছু আয় ছিল ৭০০ ডলার, এখন সেটা দুই হাজার ৮৫৩ ডলার। সবক্ষেত্রেই আমরা উন্নতি করেছি। আমাদের ফরেন রেমিটেন্স বেড়েছে, বেড়েছে রিজার্ভ।
বর্তমান সংকটের কথা উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, এখন সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। এই মন্দা উত্তরণে আমরা কাজ করছি। আমাদের সরকার জনগণের কাছে সব ধরনের সুবিধা পৌঁছে দিতে কাজ কাজ করে যাচ্ছে। দেশের বড় বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে, হচ্ছে। পদ্মা সেতু তৈরির মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনমান ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সামগ্রিকভাবে আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে। প্রান্তিকে চলে যাচ্ছে উন্নয়ন সেবা। সেটাকে আরও বেগবান করার কাজ চলছে।
জনশুনানিতে অংশ নেন সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নুর। তিনি বলেন, আমি নীলফামারীর মানুষ। আমাদের অঞ্চলে একটি কথা প্রচলিত আছে সেটা হলো—‘হাতি ঠেলা যায় কিন্তু কার্তিক ঠেলা যায় না’ এর মানে মংগায় কার্তিক মাসসহ তিনমাস কোনো কাজ থাকতো না। মানুষের হাতে পয়সা থাকতো না। মানুষ না খেতে পেরে মারা যেতো। ২০০৪ সালেও খাবারের অভাবে মানুষ মারা গেছে, এখন মানুষ না খেয়ে মরে না। মংগা শব্দটি জাদুঘরে চলে গেছে। আমরা বলছি প্রাস্তিক পর্যায়ে উন্নয়ন পৌঁছে দেওয়ার কথা।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য পাঠ করেন সিপিডির সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক দেবব্রত ভট্টাচার্য। আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, বদিউল আলম মজুমদার, জাতীয় মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম ও বিএনপির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সোহরাব হোসেন, সিপিডির ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, বাংলদেশ প্রেস কাউন্সিলেরে চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক প্রমুখ
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২২
এসআর/এমজেএফ