ফরিদপুর: দীর্ঘ দিনের দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যের পাশাপাশি ইদানীং চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। রোগী কিংবা স্বজন কেউ রেহাই পাচ্ছে না চুরি-ছিনতাইয়ের থেকে।
টিকিট কাউন্টারসহ হাসপাতালটির বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে গত দুই মাসে অন্তত শতাধিক চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও এ ব্যাপারে উদাসীন হাসপাতাল প্রশাসন।
একাধিক রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, বিভিন্ন অজুহাতে সারা রাত বহিরাগতরা টহল দেয় বিভিন্ন ওয়ার্ডে। কেউ এম্বুলেন্স ড্রাইভার আবার কেউ ওষুধের দোকানের প্রতিনিধি পরিচয়ে সার্বক্ষণিক দলবেঁধে ওয়ার্ডের ভেতরে আসা যাওয়া করে। এতে হুমকিতে পড়েছে হাসপাতালের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এরাই সুযোগ বুঝে চুরি কিংবা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে।
কিছুদিন আগে রাতে মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে কামরুল নামে এক রোগীর স্বজনের মোবাইল চুরি হয়। তার কয়েকদিন আগে আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা শিউলী বেগম নামে আরও একজনের মোবাইল চুরি হয়।
ভুক্তভোগী কামরুলের স্বজনরা জানান, সারা রাত জেগে শেষ রাতে আধা ঘণ্টা ঘুমাতে গেলেই উঠে আর মোবাইল পাননি। এরকম আরও কয়েকজনের মোবাইল ও টাকা-পয়সা চুরি হয়েছে বলে দাবি তাদের।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চিকিৎসা নিতে আসা নারীদের টার্গেট করে চোরদের উপদ্রব বাড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন সময়ে সেবা নিতে এসে শুধু এই হাসপাতাল থেকেই অর্ধশতাধিক নারীর স্বর্ণের চেইন ও মোবাইল খোয়া গেছে।
জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন এক নারী। ছিনতাইকারীরা তার লক্ষাধিক টাকার স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। এ ঘটনা হাসপাতাল জুড়ে আলোচিত হয়।
একাধিক রোগীদের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে চোর ও ছিনতাইকারীদের হাতেনাতে ধরে থানা পুলিশে দেওয়া হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট থানাতে কোনো অভিযোগ কিংবা মামলা দায়ের করেন না। এতে সহজেই তারা ছাড়া পেয়ে পুনরায় এ কাজে লিপ্ত হয়।
এছাড়া হাসপাতাল প্রশাসনকে মৌখিকভাবে জানানো হলেও তারা প্রতিনিয়তই এড়িয়ে যাচ্ছেন বিষয়টি। ফলে দিন দিনই বাড়ছে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা।
এ ব্যাপারে হাসপাতালটির পরিচালক ডা. এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালে কিছু চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে শুনছি। তবে, ভুক্তভোগী কেউ লিখিত কোনো অভিযোগ না দেওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়ায় একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে, চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের এ ব্যাপারে বারবার সতর্কতা দেওয়া হচ্ছে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশ প্রশাসন কিংবা জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে লিখিত কোনো অভিযোগ দিয়েছে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে এ পরিচালক বলেন, আমি এ হাসপাতালটিতে নতুন যোগদান করেছি। তাই এখনও প্রশাসনকে জানানো হয়নি।
তবে এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন এ পরিচালক।
উল্লেখ্য, হাসপাতালটিতে উন্নত চিকিৎসার আশায় বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচ জেলাসহ অন্তত ৮-১০টি জেলার রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৬ ঘণ্টা, ৩ ডিসেম্বর, ২০২২
এসআইএ