ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বিদেশি ফল বিক্রি ‘তলানিতে’

ইফফাত শরীফ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০২২
বিদেশি ফল বিক্রি  ‘তলানিতে’ ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: দেশি ফলের পাশাপাশি বিদেশি ফলের বড় বাজার তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে৷ নানা দেশের বাহারি জাতের এসব ফল যুক্ত হয়েছে নাগরিকদের পছন্দের তালিকায়। তবে দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে অতিষ্ঠ জনজীবন।

এরই মধ্যে এসব ফলের দামও বেড়েছে প্রায়ই দ্বিগুণ। যার ফলে বিলাসী পণ্য হয়ে উঠছে এসব ফল। আবার স্থানীয়ভাবে এসব ফলের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদেশি ফলের বাজারও সংকুচিত হচ্ছে। যার ফলে বন্ধ রয়েছে বিদেশি ফলের আমদানি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই মাসে বাজারে বিদেশি ফলের চাহিদা কমেছে অর্ধেকের বেশি। একই সঙ্গে দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। আগে একটি খুচরা ফলের দোকানে আমদানি করা বিভিন্ন ফল যেখানে গড়ে ১০০ কেজি বিক্রি হতো। দাম বাড়ার কারণে এবং ক্রেতার চাহিদা কমায় সেখানে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ কেজি ফল। বেচা-বিক্রি কমার কারণে ফল বিক্রেতাদের মধ্যে একধরনের হতাশা দেখা দিয়েছে।  

বিদেশি ফলের আমদানি বন্ধ রয়েছে বলে বাংলা নিউজকে জানান বাদামতলী ঢাকা মহানগর ফল আমদানি ও রপ্তানিকারক আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুল করিম। তিনি বলেন, বিদেশি ফল আমদানি বর্তমানে বন্ধ আছে। বিদেশি ফল বিলাসবহুল পণ্যের ক্যাটাগরিতে হিসাব করা হচ্ছে। যে কারণে সরকার আপাতত বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এখন বাজারে যেসব আমদানি করা ফল পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো আগের স্টকের। এ স্টক হয়তো আর বেশি হলে দেড় থেকে দুই মাস চলবে। তারপর বাজারে আর পাওয়া যাবে না।

বর্তমানে স্টকে মাল্টা ও আপেল আছে দেড় মাসের। আগে যেখানে অনেক পরিমাণে ড্রাগন ফল আমদানি করা হতো, এখন তা আর আমদামি করা হয় না। কারণ ড্রাগন ফল এখন দেশেই উৎপাদন হয়।

এ আমদানি কবে নাগাদ পুনরায় চালু হতে পারে এমন  প্রশ্নের জবাবে বাদামতলী ফল আড়তের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কবে নাগাদ চালু হতে পারে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। আপনারা নিজেরাই দেখেন বহির্বিশ্বে যে অবস্থা বিরাজ করছে। সে তুলনায় দেশের অবস্থা কেমন আছে। আমরা আশা করছি জানুয়ারি নাগাদ সরকার এ সংকটের সমাধান দিতে পারবে৷ বহির্বিশ্বের অবস্থা যদি ভালো হয়ে তাহলে আমদের অবস্থাও ভালো হবে। তখন আবার বাজারে সব বিদেশি ফল পাওয়া যাবে।  

অন্যদিকে বাজারে চাল, ডাল, তেলসহ সব নিত্য পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্ব গতি বিরাজ করছে। মূলত রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিশ্ব মন্দার এ প্রভাব এখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে এবং দ্রব্যমূল্যের উপর পড়েছে। ডলার সংকটের কারণে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) জটিলতায় ফল আমদানির খরচ বেড়েছে। এ কারণে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ফল আমদানির বিষয়ে ব্যবসায়ীদের নিরোৎসাহিত করা হচ্ছে। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিদেশি ফলের পাইকারি ও খুচরা বিক্রিতে।

পল্টনের আজাদ প্রোডাক্টটের সামনের ফুটপাতে ফল বিক্রেতা মো ওমর ফারুক।  ৫ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আগে আমরা অনেক বেশি ফল রাখতাম আমদানিকারকদের কাছ থেকে। কিন্তু এখন দাম বাড়ার কারণে ক্রেতাদের চাহিদা কমে গেছে। যেমন, আগে আমি প্রতিদিন ১০০ কেজি রামভূটান লিচু রাখতাম। আর এখন বিক্রি কম হয় বলে এখন ২০-৩০ কেজি রাখি। আমরা লাভ করি সীমিত। ক্রেতা যদি বেশি হয় তাহলে বিক্রিও বাড়ে সঙ্গে লাভও ভাল হয়। দাম কমলে আমাদের জন্যই ভাল। আগে যেখানে এভাকাডো ফল ৫০০ টাকা কেজিতে কিনে ৫৫০ টাক বিক্রি করতাম। আর এখন এই একই ফল কিনতে হচ্ছে ৯০০ টাকায় আর বিক্রি করি ৯৫০-১০০০ টাকায়। সেখানে আমাদের লাভ কিন্তু একই থাকে।

বেচা-বিক্রি এবং ব্যবসার অবস্থা খারাপ বলে মনে করেন পাশের আরেক ফল ব্যবসায়ী মো আলতাফ মিয়া। আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের জীবন চালানো এখন অনেক কষ্ট কর হয়ে উঠেছে। এ বৃদ্ধ বয়সে অন্য কোনো কাজ করার ক্ষমতা নেই। বেশির ভাগ দিন হাজিরা বাবদ দুইজনের এক হাজার টাকা খরচ ও উঠে না। প্রতিদিনই লোকসানে থাকতে হচ্ছে। এখন আর মানুষ আগের মতো ফল কিনছে না।

জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ দৈনন্দিন খরচ কমাতে এখন এসব পণ্য বাদ দিয়ে অতি প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার চেষ্টা করছেন।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জন্মদিন, বিয়ে এবং সভা-সেমিনারসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে আপ্যায়নের জন্য আগে বাহারি ফলের ব্যবস্থা থাকত। কিন্তু দাম বাড়ার কারণে এখন সেসব অনুষ্ঠানে ফলের বিকল্প চিন্তা করছেন অনেকেই।  

আরও জানা গেছে, গত দুই- তিন মাসের ব্যবধানে আমদানি করা ফলের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। চায়না কাঠ লেচু বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকা, যার আগে দাম ছিল ৩৫০-৪০০ টাকা। আগে ১৫০-১৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া মাল্টা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৫০টাকায়। আগে চায়না আপেল বিক্রি হত ১৫০-১৮০ টাকায়, দুই মাসের ব্যবধানে তা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। গোল্ড আপেল ৩০০-৩২০, যা আগে ছিল ২৮০ টাকা করে। এভাকাডো ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৫০০ টাকা। কিউই ৮৫০ যা আগে ছিল ৫৫০ টাকা। রামভুটান লিচু ১ হাজার টাকা যা আগে ছিল ৫৫০ টাকা। লোকমা ফল ১২০০ টাকা।  

মোহাম্মদ এমরান নিজ বাসার জন্য রামবুটান লিচু কিনতে বাদামতলী ফল আড়তে এসেছেন। দাম বেশি থাকায় এ ফলটি না কিনে বাসায় ফেরত যায়। যাওয়ার সময় তিনি বাংলা নিউজকে বলেন, এক মাস আগেও এ রামবুটান লিচু ৫৫০ টাকা কেজিতে কিনেছি। আর আজকে এসে শুনি ১২০০ টাকা। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করছে বলে দাবি করেন এ ক্রেতা।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০২২
ইএসএস/জেএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।