শরীয়তপুর: শরীয়তপুর সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পে গিয়াসউদ্দিন নামে এক ইউপি মেম্বারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে শরীয়তপুর সদর উপ-আংগারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ও সদস্য গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আলিমুল মোল্যা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে রোববার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে আঙ্গারিয়া ইউপি কার্যালয়ে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলার সময় তিন সাংবাদিকের মাইক্রোফোন, ক্যামেরা, মোটরসাইকেলের লুকিংগ্লাস ও হেলমেট ভাঙচুর করা হয়েছে। দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি শরিফুল আলম ইমনসহ ৫ সাংবাদিককে জীবন নাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিকরা জানান, কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিনের অনিয়মের বিষয়ে চেয়ারম্যানের বক্তব্য জানতে শরীয়তপুরের কর্মরত ৫ সাংবাদিক রোববার দুপুরে আংগারিয়া ইউপি কার্যালয়ে যান। তার কাছে ঘটনাটির সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হন। তখন তাদের ওপর হামলা করেন ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ও ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আলিমুল হক। তারা এখন টেলি়ভিশন ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের মাইক্রোফোন ছুঁড়ে মারেন, ক্যামেরা ফেলে দেন। এ সময় প্রথম আলো প্রতিনিধির মোটরসাইকেলের লুকিংগ্লাস ও হেলমেট ভেঙে ফেলেন। ওই দুই ব্যক্তি সাংবাদিকদের গালাগালি দিয়ে জীবন নাশের হুমকি ও চাঁদাবাজি মামলা দেওয়ার ভয়ও দেখান।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রামের দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তারই একটি 'ইজিপিপি' প্রকল্প। ওই প্রকল্পের আওতায় বছরে দুই দফা ৪০ দিন করে দরিদ্র মানুষ কাজ করার সুযোগ পান। প্রকল্পের শ্রমিকরা মাটি কাটা,রাস্তার ঘাস পরিস্কার, ডোবার কচুরিপানা পরিস্কারসহ বিভিন্ন কাজ করেন। এ কাজের জন্য শ্রমিকদের প্রতি দিন ৪০০ টাকা মুজরি দেওয়া হয়। স্থানীয় ইউপি থেকে তালিকা প্রস্তুত করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়। ওই তালিকা যাচাই-বাছাই শেষ করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় থেকে ওই শ্রমিকদের বিকাশ নম্বরে কাজের টাকা পরিশোধ করা হয়। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ইজিপিপি'র কাজ শুরু হয়েছে। আংগারিয়া ইউনিয়নে ৬৮ শ্রমিকের অনুকূলে ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ২ নম্বর ওয়ার্ডের চরচটাং গ্রামে ১৪ জন শ্রমিক দিয়ে একটি মাটির রাস্তা সংস্কার চলছে। ওই প্রকল্পের সভাপতি করা হয়েছে ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন।
ওই ১৪ শ্রমিকের নামের তালিকায় ইউপি সদস্যর স্ত্রী নাছিমা বেগম, ছেলে আলিমুল হক মোল্যা, মেয়ে সোনিয়া বেগম, ছেলের স্ত্রী হালিমা আক্তার, ভাই আবু সিদ্দিক মোল্যা, ছেলের শাশুরি, শ্যালিকাসহ ১১ জনের নাম রয়েছে। তাদের নামের বিকাশ নম্বরে শ্রমিকের মুজরি দেওয়া হচ্ছে।
কিন্ত ইউপি সদস্যর পরিবারের কেউ মাটি কাটা শ্রমিকের কাজ করেন না। ২০২১-২২ অর্থ বছরে চরচটাং গ্রামে ইজিপিপি’তে ২০ জন শ্রমিকের বিপরীতে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন তার পরিবারের সদস্যদের নামের তালিকার বিকাশ নস্বর দিয়ে ওই টাকা উত্তোলন করেছেন। সেই প্রকল্পে ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি ধান ক্ষেতে ৫০ মিটার রাস্তা সংস্কার করে বাকি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে।
নতুন প্রকল্পে কাজকরা শ্রমিক আব্দুল সরদার বলেন, আমরা ৭ জন শ্রমিক ৬ দিন কাজ করে একটি রাস্তা সংস্কার করেছি। আরেকটি রাস্তার ৯০ মিটার সংস্কার করছি। ওই দুইটি রাস্তায় আমাদের ৮০ হাজার টাকা বিল দেওয়া হবে। ইউপি মেম্বারের ছেলে আলিমুল চুক্তি অনুযায়ী আমাদের টাকা দিচ্ছেন।
ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন বলেন, বিষয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এছাড়া কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
এ ব্যাপারে আঙ্গারিয়া ইউপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, নিয়ম নীতি যা আছে তা সরকার বুঝবে, এটা সাংবাদিকদের কাজ না। ‘সাংবাদিকরা সব ধান্দাবাজ’ আমার জানা আছে। আপনারা কার অনুমতি নিয়ে আসছেন এখানে। এই ইউনিয়নে কোনো সাংবাদিক ঢুকতে আমার অনুমতি লাগে।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান প্রকল্পে কোনো অবস্থায় এক পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নাম থাকা যাবে না। এক্ষেত্রে ইউপি মেম্বারের কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে পালং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আক্তার হোসেন বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হাওলাদার কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর হামলা করেছেন এমন তথ্য পেয়েছি। তারা লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০২২
এসআরএস