ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

যে অনুষ্ঠানের অতিথি ফেরিওয়ালা, ঝালমুড়ি ও বাদামবিক্রেতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২২
যে অনুষ্ঠানের অতিথি ফেরিওয়ালা, ঝালমুড়ি ও বাদামবিক্রেতা

যশোর: ব্যতিক্রমী এক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে যশোরে ভিন্নধর্মী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা”।  যে অনুষ্ঠানের অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজের খেটে খাওয়া মানুষ ঝালমুড়িওয়ালা, বাদামবিক্রেতা ও বিভিন্ন পণ্যের ফেরিওয়ালা।

মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে শহরের খড়কি পিঠাপার্কে আয়োজিত “শীতবস্ত্র-মশারি বিতরণ উৎসব ও বঞ্চিতের সংলাপ” শীর্ষক অনুষ্ঠানের ওই চার সংগ্রামী হতদরিদ্র কর্মজীবী অতিথি ছিলেন। তারাই ছিলেন অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ।  

ভিন্নধর্মী এ অনুষ্ঠানের অতিথিরা তাদের জীবন সংগ্রাম আর বঞ্চনার গল্প শোনান। পরে সানাবিল ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় তাদের মতো শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের মাঝে উন্নতমানের কম্বল ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ মশারি বিতরণ করেন এই অতিথিরা।

অনুষ্ঠানের অতিথি পঞ্চাশোর্ধ্ব আলেয়া বেগম। শহরের খড়কি এলাকায় একটি বস্তিতে দুই ছেলে সংসারে থাকেন তিনি। জীবন সায়াহ্নে এসেও পরের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন তিনি।  

অনুষ্ঠানে তিনি জানান, তার সংগ্রামের কথা। এই অনুষ্ঠানে এসে সম্মানিত হয়েছেন জানিয়ে আলেয়া বেগম বলেন, ‘গরিব বলে আমাদের চেয়ারে ভালো জায়গায় কেউ বসতেও দেয় না। আর আমার মতো দিনমজুর অসহায় এ ধরনের সম্মান পাব তা স্বপ্নেও ভাবিনি। এখানে এসে সবাই খুশি। এমন অনুষ্ঠান আয়োজকদের আল্লাহ মঙ্গল করুন।  

বাদাম বিক্রেতা জালাল বলেন, ‘ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করি। গরিব বাদামবিক্রেতা বলে  ভালো ব্যবহার পাই না তেমন। এরা যে আমাদের সম্মান দিয়েছে আসলেই আমরা সম্মানিত।  

জহিরুল ইসলাম গ্রামে গ্রামে ফেরি করে চাদর-থ্রিপিস-শাড়ি বিক্রি করতেন। অসুস্থতার কারণে সেটিও এখন বন্ধ প্রায়। ঠিকমতো ফেরি করতে পারেন না তিনি। ফেরি করে জিনিস বিক্রি করার সময়ে এই সমাজে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন তিনি।  

তিনি বলেন, শীতের সময় অনেক কষ্ট পাই। অনেকেই এই শীতে অনেক কিছু দেবে। কিন্তু আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার এভাবে আমার মতো মানুষরা সম্মানের সাথে শীতবস্ত্র পাব কখনও কল্পনাই করিনি। আমি বিশ্বাস করি আমার মতো এখানে সবাই সম্মানিত হয়েছেন।

আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থার স্বপ্নদ্রষ্টা যশোর সরকারি এমএম কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, এসব সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরাই আমাদের দেশের একটা অংশ। এটা আমরা অনেকেই ভুলে যাই। সব পেশাই সম্মানের। প্রত্যেক মানুষ তার নিজ পেশার জায়গা থেকে ঠিকমতো কাজ করলেই তার চেয়ে ভালো কাজ আর হয় না। সব সময় এসব বঞ্চিত মানুষরাই মানুষের কথা শুনে। অথচ এদের কথা কেউ শুনে না। তাই এদেরও যে গল্প আছে সেটা জানানো আর উচ্চ নিম্নবিত্তের ভেদাভেদ ভাঙার জন্যই এই আয়োজন।  

অনুষ্ঠানে অনুভূতি প্রকাশ করেন যশোর প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মিলন রহমান, দৈনিক যুগান্তরের যশোর ব্যুরো প্রধান ইন্দ্রজিৎ রায়, আইডিয়া যুব উন্নয়ন কেন্দ্রের সভাপতি তানজিয়া জাহান মমতাজ।

বাংলাদেশ সময় : ১১৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪,  ২০২২
ইউজি/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।