ঢাকা, রবিবার, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০২ জুন ২০২৪, ২৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

প্রান্তিক পেশাজীবীদের ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে: সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২২
প্রান্তিক পেশাজীবীদের ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে: সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী 

ঢাকা: প্রান্তিক পেশাজীবীদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু।

তিনি বলেন, সমাজের পিছিয়ে পড়া গোষ্টিকে ঋণ দিলে তারা জীবনমান আরও উন্নিত করতে পারবে।

অনেকে বলতে পারেন এই ঋণের জন্য তো এনজিও আছে। কিন্তু এনজিওর ঋণে সুদের হার বেশি; প্রায় ৪০ শতাংশ। তবে সরকারি ভাবে ঋণ নিলে কোনো সুদ দিতে হয় না। সামান্য কিছু সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। সুতরাং এভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করা যাবে। আর তাহলেই আমাদের অর্থনীতিতে প্রান্তিক পেশাজীবীরা বড় ভূমিকা রাখবে।

শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও সামাজসেবা অধিদফতরের মধুমতি মিলনায়তনে ‘প্রান্তিক পেশাজীবীদের জীবনমান উন্নয়নে বিরাজমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পরিকল্পনা প্রণয়ন’ শীর্ষ কর্মশালায় সমাপনী পর্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।  

যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে টেকনিক্যাল ট্রেনিং নিয়ে অনেক যুবক স্বাবলম্বী হচ্ছেন পাশাপাশি অর্থনীতিতে তো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সবাইকে কাজ দেবে। তার মানে এই নয় যে সবাই সরকারি চাকরি পাবে। সব জেলা এবং উপজেলায় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করে দিয়েছে সরকার। যেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুবকরা নিজেদের ট্রেইন করে বিভিন্ন কাজ করবে। যার মাধ্যমে তারা নিজেরাই স্বাবলম্বী হবেন।  
তিনি বলেন, আপনি যেখানেই যাবেন টেকনিক্যাল কাজের গুরুত্ব অনেক। এসব পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীকে যদি আমরা দক্ষ করে তুলতে পারি তাহলে আমাদের অর্থনীতিতে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে তারা।  

‘বিএনপিসহ বাকি দলগুলো প্রান্তিক জনগোষ্টির কথা কখনো চিন্তা করেনি,’ কর্মশালায় এমন দাবি করেছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।  

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের জন্য বিএনপিরসহ অন্য দলগুলো কি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এদের কথা তারা (বিএনপি) কোনোদিনও চিন্তা করেনি। এসব সাধারণ মানুষের কথা প্রেসিডেন্ট জিয়া, বেগম খালেদা জিয়া এমনকি প্রেসিডেন্ট এরশাদও কখনো চিন্তা করেনি। কেউ যদি এসব সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে থাকে তা শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু এবং পরবর্তীতে ‘৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে চিন্তা করেছেন।

তিনি বলেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্টিকে আরও সচেতন করতে হবে। কারণ প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন তাদের ভাগ্য যেন পরিবর্তন হয়। একই সঙ্গে বলব প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কাজ যারা ষড়যন্ত্রের করছেন জনগণই তাদের প্রতিহত করবেন।  

সভাপতির বক্তব্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য সাড়ে পাঁচ বছরের যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তার সময় যদি আরও বাড়াতে হয় তাহলে সে ব্যবস্থা করা হবে। এজন্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এর ভালো দিকগুলো তুলে ধরা হবে।  

উল্লেখ্য, প্রান্তিক পেশাজীবীদের জীবনমান উন্নয়নে চলমান প্রকল্পের চালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে ভবিষ্যৎ কি করণীয় তার উপর গুরুত্বারোপ করেন কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা বক্তারা। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো একসঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করলে প্রান্তিক পেশাজীবীদের জীবনমান উন্নয়ন সহজ হবে বলেও জানান বক্তারা।  

প্রান্তিক পেশাগুলোকে টেকসই করতে ভবিষ্যতে প্রকল্পের ২য় পর্যায় গ্রহণে কথাও বলা হয় কর্মশালায়। সেখানে পেশাজীবীদের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি, আধুনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং পর্যাপ্ত পুঁজির ব্যবস্থা করা এবং প্রকল্পের আওতায় দেশব্যাপী অনলাইন জরিপভুক্ত সবাইকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনার বিষয়ে কর্মশালায় গুরুত্বারোপ করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রান্তিক পেশাজীবী জাতিগোষ্ঠীর দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মান বাড়ানোসহ তাদের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিসহ সমাজের মূল শ্রোতধারায় সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। মোট সাড়ে পাঁচ বছর এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৭০ কোটি ৮৪ লাখ বাইশ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের অধীনে ৮টি বিভাগের ২৭টি জেলার মোট ১১৭টি উপজেলা শহরের সমাজসেবা কার্যালয় অন্তর্ভূক্ত ছিল।  

এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১০টি পেশায় নিয়োজিত প্রান্তিক জনগোষ্টির সঠিক সংখ্যা বের করার লক্ষ্যে সারাদেশে জরিপ কাজ পরিচালনা করা।
পাশাপাশি প্রকল্পের আরেকটি লক্ষ্য ছিল আদি ক্ষুদ্র পেশায় নিয়োজিত ২৬ হাজার তেতাল্লিশ জন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ দীর্ঘ মেয়াদি (৬ মাস) হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া।  

প্রকল্পে অনুদান হিসেবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাজের সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রকল্পের নির্বাচিত ২৬ হাজার চল্লিশ জন উপকারভোগীকে মূলধন হিসেবে ১৮ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুগল ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে মনিটরিং ও পেশা বিকাশে সহায়তা করা হয়।

কর্মশালাটি আয়োজন করে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প ও সমাজসেবা অধিদফতর এবং সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়।  

কর্মশালাটির সভাপতিত্ব করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২২
ইএসএস/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।