ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বুড়িতিস্তা সেচ প্রকল্পের রিজার্ভার খননকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ

ডিষ্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২২
বুড়িতিস্তা সেচ প্রকল্পের রিজার্ভার খননকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ

নীলফামারী: নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় বুড়ি সেচ প্রকল্পের রিজার্ভার (জলাধার) খননে এলাকাবাসীর বাধার মুখে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।  
শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে ডিমলা উপজেলার কালিগঞ্জে অবস্থিত সেচ প্রকল্পটির রিজার্ভার এলাকার কুঠিরডাঙ্গা গ্রামে এমন বাধায় ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটে।

 

এসময় অগ্নিকাণ্ডে তিনটি মোটরসাইকেল, মাটি কাটার একটি এস্কেভেটর, বালু কাটার তিনটি ড্রেজার মেশিন ও প্রকল্প এলাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নির্মিত একটি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খবর পেয়ে ডিমলা দমকল বাহিনীর সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনে। কোনো ধরনের হতাহতের ঘটনা ছাড়াই সেখানে উপস্থিত ডিমলা থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বুড়িতিস্তা নদীর ওপর ওই সেচ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয় দেশ স্বাধীনের পূর্বে ১৯৬৮ সালে। এসময় কালিগঞ্জ নামক স্থানে ৩০০ ফুটের একটি ব্যারাজ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সে সময়ে এলাকার পাঁচটি গ্রামের প্রায় এক হাজার ৩০০ একর জমিতে জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পরবর্তীতে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় জলাধারের ওই পরিমাণ জমি সরকার অধিগ্রহণ করেনি। ফলে এলাকার পাঁচ গ্রামের কৃষক দীর্ঘদিন ধরে মালিকানার এসব জমি নিজ দখলে রেখে কৃষিকাজ করে আসছেন। সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড জমির মালিকানা দাবি করে পুণরায় জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করলে এলাকার কৃষকরা নিম্ন আদালতে তিনটি এবং উচ্চ আদালতে দুই মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে এসব মামলা চলমান। মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগে কাজ শুরু করতে চাইলে এলাকাবাসী বাধা দেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিমলা উপজেলার কুঠিরডাঙ্গা গ্রামের এক কৃষক বলেন, জলাধার নির্মাণের নির্ধারিত স্থানটি পুরোটাই কৃষি জমি। নিজ মালিকানায় গ্রামের মানুষ বাপ-দাদার আমল থেকে ওই জমিতে কৃষি কাজ করে আসছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন ধরনের অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করে ওই জমি তাদের বলে দাবি করছে। এ কারণে এলাকার কৃষকদের পক্ষে নিম্ন আদালতে তিনটি এবং উচ্চ আদালতে দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলা নিস্পত্তি হওয়ার আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড রির্জাভার খননের কাজ শুরু করতে চাচ্ছে। এতে করে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এলাকাবাসী। শনিবার পানি উন্নয়ন বোর্ড সীমানা নির্ধারণ করতে আসলে বিক্ষুদ্ধ লোকজন সেখানে গেলেও কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি করেনি। বরং পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং ঠিকাদারের লোকজন এলাকাবাসীকে ধাওয়া করে হামলা চালায়।  

তিনি বলেন, কৃষকের এসব জমির মালিকানার কোনো ধরনের পরিবর্তন হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড আইনি কোন প্রক্রিয়া না মেনে জলাধার খনন করতে চায়। এ কারণে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে এলাকাবাসী।

নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, প্রকল্প এলাকায় পাঁচটি গ্রামের এক হাজার ২১৭ দশমিক ৬১ একরের মধ্যে বুড়িতিস্তা সেচ প্রকল্পের রিজার্ভার রয়েছে। এসব গ্রাম হলো ডিমলা উপজেলার পচারহাট, রামডাংগা, কুঠিরডাংগা এবং জলঢাকা উপজেলার খারিজা গোলনা ও চিড়াভিজা গোলনা। ওই পরিমাণ জমির মধ্যে সম্প্রতি ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচটি প্যাকেজে ৬৬০ একর জমিতে রিজার্ভার (জলাধার) খননের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এখনো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে জমির সীমানা নির্ধারণের কাজ চলছে।

এ বিষয়ে নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল সরকার বলেন, আমরা সেখানে জলাধার খননের জন্য যাইনি। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে শনিবার ওই জমির সীমানা নির্ধারণের দিন ছিল। এজন্য এলাকায় মাইকিং করা হয়েছিল। সেখানে আমরা উপস্থিত হলে এলাকার লোকজন অর্তকিতভাবে বাধা সৃষ্টি করে হামলা চালায়। যারা সরকারি সম্পত্তি দখল করে আছেন তারাই বাধার সৃষ্টি করেছেন বলে জানান তিনি।

তিনি জানান, টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে এখনো কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। সরেজমিনে সার্ভে করে রিজার্ভারের সীমানা নির্ধারণ করার পর সেটি অনুমোদন সাপেক্ষে খনন কাজ শুরু হবে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ রয়েছে।

ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লাইছুর রহমান বলেন, শনিবার পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে সীমানা নির্ধারণ করতে গেলে এলাকাবাসী অতর্কিত হামলা চালায়। উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ প্রাপ্তি সাপেক্ষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২২
এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।