মাদারীপুর: কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ সার্কেল অফিসের দুই রাজস্ব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে দর-কষাকষির অভিযোগ উঠেছে। মাদারীপুরে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে।
ফাঁস হওয়া ভিডিও ব্যপ্তি ১০ মিনিট ১৩ সেকেন্ড। এতে দেখা গেছে, দুই রাজস্ব কর্মকর্তা এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে দর-কষাকষি করছেন। চাহিদা মতো প্রতি মাসে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাসোয়ারা টাকা চাইতেও দেখা যায় তাদের।
অভিযোগ ওঠা দুই কর্মকর্তা হলেন- কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগ মাদারীপুর সার্কেল অফিসের রাজস্ব কর্মকর্তা (সার্কেল -১) মো. ইমরান কবীর ও (সার্কেল-২) রফিকুল ইসলাম। অফিস কক্ষে বসেই তারা ঘুষের টাকা লেনদেন করেছেন।
যে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তারা ঘুষ নিয়েছেন তাকে বিভিন্ন কথাও বলতে শোনা যায় এ দুই কর্মকর্তাকে। ভিডিওতে দেখা যায় রাজস্ব কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ওই ব্যবসায়ীকে বলছেন, ‘এইডা কি আনছেন?’ এ সময় কয়েকটি ৫০০ টাকার নোট নিতে দেখা যায় তাকে। টাকাগুলো গুণে নিজের পকেটে নিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে রফিকুল বলেন, ‘কি যে করেন আপনারা? মানে.. মাদারীপুরের লোক এত ধনী, দেশের মধ্যে তৃতীয় ধনী জেলা। আপনারা কেন এমন করেন?’
কিছুক্ষণ পরে ওই ব্যবসায়ীর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় সার্কেল-২ রাজস্ব কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামকে। তিনি বলেন, ‘যা দিছেন আমি এটা নিতে পারবো না। ইমরান সাহেবকে কি দেব? আমি কীভাবে বুঝাবো? স্যারে তো বকবো! আমি এটা নিতে পারবো না। এই ৩ (তিন হাজার) আমি নিতে পারবো না। বাকিটা কখন দিবেন? আপনারা স্যারকে বলে যান, দেখা করে যান। কারণ, তিনি (ইমরান কবীর) আপনার অরিজিনাল স্যার। সেই আপনাকে বাঁচাতে পারবো, মারতে পারবো। বুঝচ্ছেন!’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি মাসে অফিস খরচ ১ হাজার টাকা দিয়ে যাবেন। এটা যেন আর না বলা লাগে। কথা যেন নড়চড় না হয়। মাসের ১০ তারিখের মধ্যে টাকা আমার কাছে দিয়ে যাবেন। ’
ভিডিওটির ৮ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডে পরে দেখা যায় রাজস্ব কর্মকর্তা (সার্কেল-১) মো. ইমরান কবীরকে। তিনি ওই ব্যবসায়ীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনার দোকানের আশপাশে যারা দিচ্ছে ওয়েল অ্যান্ড গুড। আর যারা দিচ্ছে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আপনার নম্বর দিয়ে যান। ’ পরে ওই ব্যবসায়ী এক হাজার টাকা ইমরান কবীরের টেবিলে রাখলে তিনি সেটি নিয়ে নেন।
ঘুষ দেওয়া ব্যবসায়ীর নাম অমিত হাসান। তিনি মাদারীপুর পুরান বাজারে পোশাকের ব্যবসা করেন। ঘুষের ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘আমার পোশাকের দোকানটি ছোট। প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভ্যাট দিতে বলেন স্যারেরা। পরে অফিসে গেলে তারা এক হাজার টাকা করে ভ্যাট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু শর্ত হলো, প্রতি মাসে অফিসে তিন হাজার টাকা দিতে হবে। ’
ঘুষ ও ফাঁস হওয়া ভিডিও নিয়ে সার্কেল কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলে বাংলানিউজ। এ ব্যাপারে রাজস্ব কর্মকর্তা (সার্কেল -১) মো. ইমরান কবীর বলেন, ‘ভিডিওটি আমাদের নয়, এটি সাজানো। এ বিষয় আমার আর কোনো মন্তব্য নাই। ’
রাজস্ব কর্মকর্তা (সার্কেল-২) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ব্যবসায়ী আমার কাছে আসার পর তাকে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে বলেছিলাম। তার কাছে কোনো অনৈতিক দাবি করা হয়নি। ’
ঘুষ দাবির ভিডিও প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কথোপকথনগুলো ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ। ’
কাস্টমস ও এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ মাদারীপুর সার্কেল অফিসের বিভাগীয় কর্মকর্তা ও ডেপুটি কমিশনার মো. এনামুল হক বলেন, ‘আপনারা তো আসছিলেন, নিউজ করে দেন। অসুবিধা নাই। ’
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন বলেন, ‘দুই রাজস্ব কর্মকর্তা ঘুষ গ্রহণের ভিডিওটি আমি দেখেছি। পুরো ঘটনাটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২২
এমজে