ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

হিজড়াদের নিয়ে চলচ্চিত্রে আরও সতর্কতা ও বিনিয়োগের আহ্বান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২৩
হিজড়াদের নিয়ে চলচ্চিত্রে আরও সতর্কতা ও বিনিয়োগের আহ্বান

ঢাকা: হিজড়াদের নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্কতার সঙ্গে কাজের আহ্বান জানিয়েছেন এই অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা। তাদের মতে- ভালো কিছু করতে গিয়ে যেন ভুল বার্তা সমাজে না ছড়ায় সেটিই প্রত্যাশা।

এছাড়া এই ধরনের চলচ্চিত্র বা অন্যান্য নির্মাণের ক্ষেত্রে সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সকলে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহীম মিলনায়তনে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি (বন্ধু) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী আঞ্চলিক আর্ট ও চলচ্চিত্র উৎসব রিইনকার্নেটের এক অধিবেশনে বক্তারা এসব মন্তব্য করেন।

হিজড়া জনগোষ্ঠিদের নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্রের আলাপ বিষয়ক এই সেশনে অংশ নেন যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট লেখক-চিত্রকর এবং উন্নয়নকর্মী তেরেসা অ্যালবার, ভারতের বিশিষ্ট লেখক-চিত্র পরিচালক এবং সমাজ উন্নয়ন কর্মী প্রদীপ্ত রায়, ভারতের হামসাফার ট্রাস্টের অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার তিনেশ চোপড়ে, শ্রীলঙ্কার চিত্রপরিচালক ও অনোমা রাজাকরুণা এবং নেপালের উন্নয়ন কর্মী শেরেহান নবীন সিমরান। সেশন পরিচালনা করেন উন্নয়ন কর্মী ফাহাদ রিয়াজ খান।

আলোচনায় তেরেসা অ্যালবার বলেন, হিজড়া বা ট্রান্সজেন্ডার চলচ্চিত্র নিয়ে পৃথিবীর বহু দেশে বহু কনটেন্ট আছে এবং তৈরি হচ্ছে। তারপরও যত কনটেন্টই থাকুক না কেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটা যে- আমরা যে জায়গায় যে জনগোষ্ঠির প্রতিনিধিত্ব করছি, সেই জায়গা অনুযায়ী কনটেন্ট বা চলচ্চিত্রগুলো ঠিকঠাক হচ্ছে কি না। এদের নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে তাদের ভাষা, তাদের সংস্কৃতি, তাদের অনুভূতি-দুঃখ-বেদনাগুলো ঠিকঠাক মতো উঠে আসা প্রয়োজন। সেটি ঠিকমতো বুঝতে এবং করতে পারলেই উন্নয়ন হবে।  

প্রদীপ্ত রায় বলেন, একটি চলচ্চিত্র বানাতে অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়। সাধারণ একটি চলচ্চিত্রের পেছনে অনেকে ইনভেস্ট করলেও হিজড়াদের নিয়ে যখন চলচ্চিত্র বানানো হয়, তখন কাউকে পাওয়া যায় না। এই ধরনের সিনেমার জন্য প্রযোজক পাওয়া খুবই কঠিন। ফলে এগুলো বানাতে হয় নিজের টাকা দিয়েই। তবে আমাদের আসলে এই ক্ষেত্রেও ইনভেস্ট করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমেই পরিবর্তনের বার্তাটা সকলের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। এটা নিয়ে সরকার কাজ করছে সত্য, কিন্তু শুধুমাত্র সরকারের চেষ্টায় তো হবে না। আমাদের এগিয়ে আসতে হবে, আমাদের নিজেদেরও প্রচেষ্টা থাকতে হবে।

নির্মতাদের সঠিক বিষয় মাথায় রেখে কাজ করার অনুরোধ জানিয়ে তিনেশ চোপড়ে বলেন, এই ধরনের ছবি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি যে, অনেকেই আগ্রহী। বিশেষ করে অনেকেই হিজড়াদের জীবনটা ভালোভাবে না জেনেই এই বিষয়ে নিজের মতো করে সিনেমা তৈরি করে ফেলে। এর ফলে কিন্তু ওদের জন্য আসল কাজটা করা হলো না। আবার অনেক সময় এ ধরনের নির্মাণের ফলে সমাজে ভুল মেসেজও যায়।  

শ্রীলঙ্কার চিত্রপরিচালক অনোমা রাজাকরুণা বলেন, শ্রীলঙ্কাতে এই ধরনের উৎসব যখন হয়, তখন উৎসব শেষ হয়ে গেলেও আমরা তাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাই। এখানে বন্ধু সংগঠন অনেক দিন ধরে কাজ করছে। আমরা আশা করি তারা আরও কাজের মধ্য দিয়ে এই পিছিয়ে পড়া হিজড়াদের উন্নয়নে আরও ভূমিকা রাখবে।

বক্তারা বলেন, প্রচলিত সমাজে যখন তাদের ঠাঁই মেলে না, তখন হিজড়ারা গড়ে তোলেন নিজেদের সমাজ। সেখানেও তাদের মৌলিক অধিকারই যখন প্রতিষ্ঠিত নয়, তখন অন্য মানবিক চাহিদাগুলোর সংস্থান আরও কঠিন। সবাই চাই হিজড়াদের জীবনমানে পরিবর্তন আসুক, আরও ভালো মানের কাজ হোক তাদের নিয়ে, এটাই প্রত্যাশা।

সেশনের আগে দিনব্যাপী চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। চলচ্চিত্র নিয়ে আলাপ শেষে স্টেজ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করে বহ্ণিশিখা এবং হিজড়াদের বাউল দল বাঁচার আশা সাংস্কৃতিক সংগঠন।

এর আগে বুধবার শুরু হয়েছে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি (বন্ধু) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী আঞ্চলিক আর্ট ও চলচ্চিত্র উৎসব রিইনকার্নেটের তৃতীয় উৎসব। আয়োজকরা জানান, এই আয়োজনের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো শৈল্পিক মাধ্যমের পরিসরে হিজড়াদের বা হিজড়া সম্পর্কিত সৃজনশীলচর্চায় জড়িত থাকা এবং মতামত প্রকাশ করার জন্য একটি নিরাপদ স্থান তৈরি করা।

এবারের উৎসবে দক্ষিণ-এশীয় অঞ্চলের ৬টি দেশের ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়া জনগোষ্ঠী নিয়ে নির্মিত ২৫টি চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র প্রদর্শীত হবে। পাশাপাশি ২৫টি শিল্পকর্মের একটি প্রদর্শনী মিলনায়তনের গ্যালারিতে তিন দিনব্যাপী চলবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২৩
এইচএমএস/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।