নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আলী আজগরের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এক মাস আগে সোনারগাঁ সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তিনি নানা অনিয়মে জড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন দলিল লেখকরা।
এই সাব রেজিস্ট্রারের অনিয়মের কারণে সরকার শত শত কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তিনি সব ধরনের দলিলে খাজনা, নামজারি, ডিসিআর ছাড়া দলিল নিবন্ধন করেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি সময়ক্ষেপণ করে দলিল নিবন্ধন করায় বিকেল তিনটার পর প্রতি দলিলে অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন। তার অনিয়মে সহযোগিতা করেন সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কেরানি সবিতা রানী দত্ত ও নকলনবিশ অজিত চন্দ্র দাস।
সাব রেজিস্ট্রারের এসব কর্মকাণ্ডে দলিল লেখক থেকে শুরু করে দলিলদাতা ও গ্রহীতারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। এছাড়া সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। ফলে সরকার বিশাল অংকের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।
অভিযোগ পাওয়া যায়, সোনারগাঁ সাব রেজিস্ট্রার আ ন ম বজলুর রশিদ মণ্ডল ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর বদলি হওয়ার পর থেকে এই সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কোনো সাব রেজিস্ট্রারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে জমি কেনাবেচা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২২ ডিসেম্বর আড়াইহাজার সাব রেজিস্ট্রার মো. আলী আজগরকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে কয়েকদিনের দলিল জমে থাকার কারণে দলিল নিবন্ধন সংখ্যা দীর্ঘ হয়। তিনি সোনারগাঁ সাব রেজিস্ট্রি অফিসে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের প্রথম দিন বিকেলে সোনারগাঁ থানা পুলিশের সহযোগিতায় দলিল নিবন্ধন করেন। বিশৃঙ্খলা এড়ানোর অজুহাত দেওয়া হলেও দলিল লেখকদের দাবি তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করার জন্য পুলিশের সহযোগিতা নিয়েছেন। বেলা তিনটার পর কোনো দলিল না করার ভয় দেখান। তার সহকারী ওমেদার হাফেজুর রহমান হাফেজের মাধ্যমে প্রতি দলিলে ৩ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত আদায় করে রাত ১০টা পর্যন্ত দলিল নিবন্ধন করেন।
সূত্র জানায়, ২০০৪ সালের রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ মোতাবেক আরএস রেকর্ড মূলে মালিক হলে দলিল নিবন্ধনে কোনো খাজনা, নামজারি ও ডিসিআর লাগবে না। দলিল মূলে মালিক হলে শুধু ডিসিআর ও নামজারি জমা ভাগ লাগবে। আমমোক্তার, বিনিময়, বণ্টন, দানের ঘোষণা, হেবা ঘোষণা, বিলওয়াজ হেবা, অছিয়ত, ভুল সংশোধন, ঘোষণাপত্র, না দাবি ক্ষেত্রে খাজনা, নামজারি ও ডিসিআর লাগবে দলিল নিবন্ধনে এমন কোনো অধ্যাদেশ জারি হয়নি।
সাব রেজিস্ট্রার মো. আলী আজগর অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি নিজের মনগড়া আইন তৈরি করে দলিল লেখক, দাতা ও গ্রহীতাকে চাপিয়ে দিয়েছেন। সাব রেজিস্ট্রারের নিয়মমতো কোনো দলিল না হলেই তিনি দলিল নিবন্ধনে টালবাহানা শুরু করেন। তার দাবিকৃত টাকা কেরানি সবিতা রানী দত্ত ও নকলনবিশ অজিত চন্দ্র দাসের কাছে জমা করার পর পেন্সিলের মাধ্যমে নম্বর সংকেত দিলেই তিনি দলিল নিবন্ধন করেন। এতে করে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন দলিল লেখক, দাতা ও গ্রহীতারা।
আমির হোসেন নামে এক ব্যক্তি জানান, ১৭ কোটি টাকার একটি বন্ধকি দলিল নিবন্ধন করতে সাব রেজিস্ট্রার সরকারি ফি বাদে ওমেদার হাফেজুর রহমান হাফেজের মাধ্যমে অতিরিক্ত এক লাখ টাকা উৎকোচ নিয়েছেন।
মানিক মিয়া নামে আরেক ব্যক্তির অভিযোগ, বায়নারত দলিল বাতিল করার জন্য এক সপ্তাহ ঘুরিয়ে অবশেষে ২৫ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে দলিল নিবন্ধন করেন সাব রেজিস্ট্রার আজগর আলী।
ললিল লেখক আলী হায়দার বলেন, সাব রেজিস্ট্রারের সংকেত ছাড়া কোনো দলিল নিবন্ধন হয় না। সরকারি আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে তিনি তার মনগড়া আইন তৈরি করে করে হয়রানি করছেন।
সোনারগাঁ দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদ সরকারের কাছে সাব রেজিস্ট্রারের অনিয়ম ও উৎকোচ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাব রেজিস্ট্রার সকল দলিলে এমন করেন না। তবে কিছু কিছু দলিলে এমন সমস্যা সৃষ্টি করেন।
ঘুষ নেওয়া বিষয়টি অস্বীকার করে সোনারগাঁ সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কেরানি সবিতা রানী দত্ত বলেন, আমি শুধু সিরিয়াল নম্বর দিয়ে স্যারের কাছে দলিল পাঠিয়ে দিই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সোনারগাঁ উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার আলী আজগর অভিযোগ অস্বীকার করে আগামী বুধবার সকালে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সরাসরি কথা বলার জন্য আমন্ত্রণ জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৩
এমআরপি/এমজেএফ