বরগুনা: গত পাঁচ বছর কাতারে প্রবাস জীবন কাটিয়েছেন ইলিয়াস মাদবর (৩৯)। দেশে ফিরে এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে ড্রাগন ফল চাষের ভিডিও দেখতে শুরু করেন।
স্বপ্নিল পরিপাটি এ বাগানটি এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তার। বাগানটিতে সবুজ গাছে শোভা পাচ্ছে গোলাপি, লাল আর সবুজ ফল। এ বছর খরচ বাদে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, বরগুনার আমতলী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া গ্রামে ড্রাগন চাষে সফলতা পেয়েছেন মো. ইলিয়াস মাদবর নামের এক প্রবাসী। আধুনিক কৃষির ওপর ভিত্তি করে নির্মিত বিভিন্ন ভিডিও দেখে আত্মকর্মসংস্থান ও স্বাবলম্বী হওয়ার অনুপ্রেরণা পায় মো. ইলিয়াস। প্রায় ২ একর ৫০ শতাংশ জমিতে তিনি এক হাজার সিমেন্টের খুঁটির ওপর বিশেষ পদ্ধতিতে ড্রামের মধ্যে নানা প্রজাতির ড্রাগন কাটিং রোপণ করেন। ড্রাগনের কাটিং থেকে প্রায় ১৮ মাসের মধ্যে ফল পেতে শুরু করেন। ইউটিউব দেখেই তিনি ড্রাগন চাষে উদ্বুদ্ধ হন। এর পাশাপাশি তিনি মাল্টা, থাই পেয়ারা, উন্নত জাতের লেবু, আম ও সবেদা ফলের চারা রোপণ করেন। এতে তিনি সফলতা পেয়েছেন।
ইলিয়াস মাদবর জানান, আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তুলতেই আমার এ প্রচেষ্টা। নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছি। দীর্ঘ ৫ বছর প্রবাস জীবন শেষে ২০১৮ সালে কাতার থেকে দেশে ফির এসে আধুনিক কৃষিতে মনোনিবেশ করি। আজ আমি সফল কৃষক ও উদ্যোক্তা।
ড্রাগন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি আরও জানান, ফুল ফোটার ৩০ দিন পরে ড্রাগন ফল তোলার উপযোগী সময়। ড্রাগন চাষে খামারে উৎপাদিত কেঁচো সার ব্যবহার করা জরুরি। তবে ড্রাগন চাষে তেমন কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। ছত্রাকনাশক স্প্রে করলেই ফলকে শতভাগ নিরাপদ রাখা সম্ভব। সতর্কতার বিষয় হচ্ছে ড্রাগন ফল গাছে রেখে পাকা অবস্থায় হারভেস্ট করতে হয়। এতে ফল মিষ্টি হয় ও ক্রেতাদের ক্রয় করার আগ্রহ দেখা যায়। বাজারে প্রতি কেজি ড্রাগন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বিক্রি করা যায়।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিম বলেন, আধুনিক কৃষিতে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষকদের সকল প্রকার টেকনিক্যাল সহযোগিতা করা হবে। ড্রাগনের বহু জাত রয়েছে। এর মধ্যে সাদা ও লাল ড্রাগন দেখতে যেমন সুন্দর তেমন খেতেও সুস্বাদু। তাছাড়া একটি ড্রাগন গাছ থেকে ৪০ কেজি ফল আহরণ করা সম্ভব এবং প্রায় ২০ বছর যাবত ফল দিয়ে থাকে। শীতকালে ফল উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। তাই কৃষকের প্রচণ্ড শীতে লাইটিং ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। অনাবাদি নীচু জমিতেও ড্রাগন আবাদ করা যায়।
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. এম এ কাদের মিয়া বলেন, প্রবাসী মো. ইলিয়াস মাদবরের মতো তরুণ বেকার যুবকেরা আধুনিক কৃষিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে উদ্যোগ নিলে উপজেলা পরিষদ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০২৩
এসএম