ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়ক নির্মাণ কাজে ধীর গতি

ঠিকাদার ও সড়ক বিভাগের গাফিলতিতে গাংনী এখন ধুলার শহর 

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪
ঠিকাদার ও সড়ক বিভাগের গাফিলতিতে গাংনী এখন ধুলার শহর 

মেহেরপুর: মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের গাংনী উপজেলা শহর এখন ধুলার শহরে পরিণত হয়েছে। সড়ক বিভাগের গাফিলতির কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার ও প্রতিদিন পানি না ছিটানোয় দিনের বেলায় অন্ধকার মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে অবস্থিত গাংনী উপজেলা শহর।

ধুলার কারণে গাংনী উপজেলা শহরে বেড়েছে বায়ু দূষণের মাত্রা। রাস্তায় নেমেই নাকাল হচ্ছেন শহরবাসী। নাকে-মুখে, চোখে ধুলা ঢুকে দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম। দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে জনজীবন। দূষিত পরিবেশে বাড়ছে রোগ-বালাই। বিশেষ করে অ্যাজমা, এলার্জি, কাশিসহ শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। হাসপাতাল, ক্লিনিক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বারে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

এমন দূষণে চরম হুমকির মুখে উপজেলার জনস্বাস্থ্য। এদিকে রাস্তা নির্মাণ কাজের ধীরগতিতেও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন এলাকাবাসী। সড়ক ও জনপদের কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। অনেকে অতিষ্ঠ হয়ে বলেছেন এ অবস্থা দেখার কি কেউ নেই?

গাংনী সিনেমা হলপাড়া এলাকার বাসিন্দা আরোজ আলী ও দোকানি বাদল মিয়া বলেন, প্রধান সড়কের পাশে হাঁটু পর্যন্ত ধুলা জমেছে। যানবাহন চলাচলের সঙ্গে সঙ্গে ধুলোয় অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে এলাকা। দোকানের মধ্যে এমন কি বাসা বাড়িও ধুলায় ভর্তি হয়ে যাচ্ছে।
 
স্কুল শিক্ষক আবু হোসেন ও ব্যাংক কর্মকর্তা বাবু বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলাফেরা করছি। ব্যবসায়ী আনারুল মিয়া ও সেন্টু আলী বলেন, আমাদের ট্যাক্সের টাকায় সরকারের কর্মকর্তারা গাড়িতে এসি লাগিয়ে চলাফেরা করেন। এগুলো তাদের চোখে পড়েনা? প্রশ্ন করে বলেন, ট্যাক্সের টাকা যদি জনগণের কাজেই না লাগে তাহলে, কেন আমরা ট্যাক্স দেব?

গাংনী হাসপাতাল বাজার এলাকার রিন্টু মিয়া বলেন, রাস্তার উন্নয়ন কাজ চলছে একটু সমস্যা হবে সেটা আমরা জানি। কিন্তু, রাস্তার পাশে খুড়ে সেখানে বালি খোয়া ভরাট না করে ফেলে রেখেছে। খোয়া নির্দিষ্ট পরিমাণ না দিয়ে শুধু স্থানীয় বালি দেওয়ার কারণে ধুলাবালির সৃষ্টি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সেদিকে খেয়াল নেই।

রিকশাচালক হান্নান মিয়া বলেন, অনেক দিন ধরেই রাস্তার এ অবস্থা। আমরা রিকশা চালকরা সবচেয়ে বেশি বিপদে আছি। ধুলাবালির কারণে রিকশা চালাতে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। ধুলাবালিতে মাস্ক ব্যবহার করি, কিন্তু কতক্ষণ আর মাস্ক পড়ে থাকা যায়?

গাংনী শহরের ব্যবসায়ী মিনারুল ইসলাম ও ফুটপথের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, সড়কটির কাজ হচ্ছে  একেবারেই কচ্ছপ গতিতে। কাজে গতি আনতে নিতে হবে।
 
রাস্তা সংস্কারের জন্য যে পরিমাণ ধুলা হয় সেটা বন্ধ করতে হলে সড়ক ও জনপদ অফিসের মাধ্যমে দিনে অন্তত তিন বার পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রায় ৫/৬ মাস এ অবস্থায় থাকলেও মাসে একদিন পানি ছিটানো হচ্ছে না।

দ্রুত সড়কটি মেরামতের কাজ শেষ করে ধুলা থেকে মুক্তি চান গাংনীবাসি। সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা যায়,প্রায় আট শ কোটি টাকা ব্যয়ে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের তিনটা প্যাকেজে  আট কিলোমিটার ফোর লেনসহ নির্মাণ কাজ চলছে।
 
যা মেহেরপুরের গাংনী অংশে প্রায় ৯০ কোটি টাকার উপরে ব্যায় ধরা হয়েছে। গাংনী উপজেলা শহরে প্রায় পৌণে চার কিলোমিটার ফোরলেন রাস্তা নির্মাণ হবে।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আব্দুল আল মারুফ বলেন, ধুলাবালি মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ধুলাবালির কারণে অ্যাল্যার্জিক রাইনাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সাইনোসাইটিস, অ্যাজমা, বাধাজনিত শ্বাসরোগ, চোখ ওঠা, নিউমোনিয়া, রেসট্রিকটিভ লাঞ্চ, ডিজিজ, ফুসফুস বা শ্বাসনালীর অন্য যে কোনো রোগ থাকলে তার প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে পারে।  

এবিষয়ে মেহেরপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, রাস্তায় ধুলাবালি রোধ করতে নিয়মিত পানি ছিটানোর নির্দেশ রয়েছে, আমি ঠিকাদারকে বলে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করছি।

ধুলাবালির বিষয়ে কথা বলতে, ঠিকাদার জাহিরুল লিমিটেডের মালিক জহিরুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলে একবার কল রিসিভ করলেও কথা না বলে কেটে দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪
এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।