ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

শিবচরের আলীর স্বপ্ন ডুবল ভূমধ্যসাগরে!

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৯ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২৪
শিবচরের আলীর স্বপ্ন ডুবল ভূমধ্যসাগরে!

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার আলী হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে ভূমধ্যসাগরে। লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ট্রলারের ইঞ্জিন ব্লাস্ট হয়ে ট্রলার ডুবে তার মৃত্যু হয়।

পরিবারের স্বচ্ছলতার আশায় ইতালীর উদ্দ্যেশে বাড়ি ছাড়েন আলী হাওলাদার। গ্রামে ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন আলী। পরে ধার-দেনা করে টাকা গুছিয়ে ইতালির উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়েন। মাদারীপুর এলাকার এক দালালের মাধ্যমে ১৬ লাখ টাকা চুক্তিতে গত মাসে প্রথমে লিবিয়া পৌঁছান। ওই ১৬ লাখেই ইতালি পৌঁছে দেওবার কথা ছিল।  

নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর হাত বদল! মাফিয়াদের হাতে বন্দী হতে হয়। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আরও ১১ লাখ টাকা দিতে হয় দালালের হাতে। এরই মাঝে একবার সাগর পথে রওনা হন আলী। ব্যর্থ হয়ে আবার অপেক্ষা করেন গেম ঘরে। এরপর সোমবার (১৭ জুন) রাতে সাগর পথে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা হয় আলীসহ আরও অনেকে। ট্রলারের ইঞ্জিন বিস্ফোরণ হয়ে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটলে মারা যান শিবচরের আলী হাওলাদার। নিহত আলী হাওলাদার মাদারীপুর জেলার শিবচর পৌরসভার খানকান্দি এলাকার ইউনুস হাওলাদারের ছেলে।

বুধবার (১৯ জুন) বিকেলে উপজেলার ভান্ডারিকান্দি নিহতের শ্বশুর গোলাম মোস্তফা মাতুব্বরের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজনের আহাজারি। ছয় বছর বয়সী অবুঝ সন্তান রাব্বী ও এক বছর বয়সী রাবেয়া এখনও বুঝে উঠতে পারেনি তার বাবা আর নেই!

নিহত আলী হাওলাদারের মামা শ্বশুর আব্দুস সালাম উকিল বলেন, সোমবার (১৭ জুন) রাতে সাগরে আলী মারা যায়। আমরা মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাতে ওর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হই। আলীদের পরিবার দরিদ্র। আমার ভাগ্নির সাথে প্রেমের সম্পর্ক থেকে ওদের বিয়ে হয়। এরপর আলী ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালাতেন। বেশ ভালোই ছিল। আরেকটু স্বচ্ছলতার জন্য বিদেশ যেতে চায়। পরে শ্বশুরবাড়ি থেকেই টাকা-পয়সা সংগ্রহ করে দালালের মাধ্যমে বিদেশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে সাগরে ডুবে ও মারা যায়। ওর পরিবারের সব স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো!

নিহতের স্ত্রীর চাচাতো ভাই বিপ্লব বলেন, দুই দফায় ২৭ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। সোমবার রাতে যখন রওনা হয় তখন আলীসহ অন্যরা বোটের নিচে ইঞ্জিনরুমের কাছাকাছি ছিল। রওনা দেওয়ার আগে বাড়িতে শেষ কথা হয়। আমরা শুনেছি ইঞ্জিন ব্লাস্ট হয়ে ওদের মৃত্যু হয়েছে। ওর সাথে মাদারীপুরের আরও দুইজন ছিল। তারাও মারা গেছে।  

নিহত আলী হাওলাদারের স্ত্রী রোমেনা আক্তার বলেন, দেশে থাকালীন ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালাতেন আলী। ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে গিয়ে এভাবে মৃত্যু হবে মেনে নিতে পারছি না। পরিবারে ৬ বছরের এক ছেলে ও এক বছরের এক মেয়ে রয়েছে।

নিহত আলীর বাবা ইউনুস হাওলাদার জানান, আমার ছেলে আর নাই। ছেলের মুখ আর দেখতে পাইলাম না। বিদেশ যাইয়া অনেক টাকা কামাই করবে। এই আশায় মরণপথে গেল! এখন আমার ছেলের লাশ যাতে দেশে ঠিকমতো আনা হয় সরকারের কাছে এই দাবি জানাই।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে মারা যাওয়া শিবচরের একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে মাদারীপুর জেলার তিনজন রয়েছে। এদের মধ্যে শিবচরের আরও এক থাকতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, জুন ২০,২০২৪
এএটি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।