ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

সৈয়দপুর সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৭ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২৪
সৈয়দপুর সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগ

নীলফামারী: নীলফামারীর প্রথম শ্রেণির সৈয়দপুর পৌরসভায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার বাসাবাড়িতে উঠছে পানি।

ফলে বৃষ্টি হলেই পৌরবাসীর দুর্ভোগ ও কষ্টে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে শহরের মুন্সিপাড়া, নতুন বাবুপাড়া, পুরাতন বাবুপাড়া, বাঁশবাড়ি, মিস্ত্রিপাড়া, বাঙালিপুর নিজপাড়া ও নিচু এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতার কবলে পড়ছেন। প্রতিবছরই সামান্য বৃষ্টিপাতেই শহরজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। শহরের প্রধান সড়ক শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কও হাঁটু পানিতে ডুবে থাকছে।

পৌরবাসী আতিয়ার রহমান ও সবুর গোসেন অভিযোগ করে বলেন, পৌরসভার মেয়র পৌরবাসীর সমস্যা সমাধানের জন্য কোনো উদ্যোগই নেন না। কাউন্সিলর ও পৌর মেয়রের পক্ষ থেকে জলাবদ্ধতার শিকার লোকজন সহযোগিতাও পান না বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদ নূর মোহাম্মদ স্ট্রিটের উভয় পাশের মানুষ ও মুন্সিপাড়া, বাঁশবাড়ির সাদরা লেন এলাকাসহ ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শত শত পরিবার। এছাড়া শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে জলাবদ্ধতার কারণে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েন। মাত্র ১ ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় পুরো এলাকা। বৃষ্টির পানি নালা-নর্দমা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আউটলেট সুবিধা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে ড্রেনের পানি উপচে ঢুকে যায় ব্যবসায়ীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ও বসবাসকারী মানুষের ঘরে ঘরে। এছাড়া বেশকিছু সড়ক মেরামত ও সংস্কার না করায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।  

শহরের বাঙালিপুর নিজপাড়ার (৮ নম্বর ওয়ার্ডের) কৃষি অধিদপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা আলতাব হোসেন ও পান দোকানদার মনসুর আলী বলেন, পুরো বর্ষাকাল এখানকার হাজারো পরিবারকে জলাবদ্ধতার কারণে পানিবন্দি হয়ে থাকতে হয়। জলাবদ্ধতা যেন আমাদের বিধিলিপিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলের কাছে আমরা একটি মাস্টার ড্রেনের জন্য বহুবার ধরনা দিয়েছি। প্রতিবারই তিনি সমস্যা সমাধানে শুধু আশ্বাসই দিয়েছেন কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেননি। যার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই ড্রেনের পানি উপচে তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি।

একই অবস্থা ১ নম্বর রেলগেট থেকে হাতিখানা কবরস্থান যাওয়ার রাস্তাটি। ওই এলাকার ফল ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা ওই রাস্তাটি একাধিকবার উঁচু করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।  

ফল ব্যবসায়ী বাদশা বলেন, আমাদের সমস্যার কথা পৌর কর্তৃপক্ষকে বলে বলে বিরক্ত হয়ে গেছি। তাই নিজেরাই সমস্যা সমাধানের জন্য মাটি দিয়ে উঁচু করার চেষ্টা করেছি।  

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সময় মেয়র ফল মার্কেটর সড়কসহ সৈয়দপুর শহরকে মডেল শহরে রূপান্তরিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অথচ প্রতিবছরই শহর উন্নয়নে ১০০ কোটি টাকারও বেশি বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে সৈয়দপুর পৌরসভায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পৌর কাউন্সিলর বলেন, সৈয়দপুর পৌর শহরের দূষিত পনি নিষ্কাশনের নালাগুলোতে পলিথিনসহ নানা কিছু আটকে থাকে। পরিষ্কারও করা হয় না মাসের পর মাস। ফলে পানি তাৎক্ষণিক নামে না। এছাড়া পৌর এলাকার রেলওয়ে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকার নালা-নর্দমা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করায় সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে ব্যর্থ হয় পৌর কর্তৃপক্ষ। যার ফলে মাত্র ১ ঘণ্টার বৃষ্টিতেই সৈয়দপুর শহর তলিয়ে যায় ২ থেকে ৩ ফুট পানির নিচে।

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সহিদুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমাদের নিজস্ব টিম আছে। কিন্তু মাস্টার ড্রেন নির্মাণ বা সংস্কার করতে বাজেট ঘাটতি থাকায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেক কিছুই সম্ভব হয়নি।

সৈয়দপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, পৌর মেয়র দায়িত্বে আছেন প্রায় ৪ বছর। এ ৪ বছরে সময় তিনি সৈয়দপুরের উন্নয়নে কোনো কাজই করেননি। তিনি যদি শহরের প্রধান ৩টি সড়কও সংস্কার করতেন তাহলে শহরবাসীর কাছে মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারতেন। এছাড়া মেয়র ও কাউন্সিলরদের দ্বন্দ্বের কারণে পৌরসভার উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে।  

এ ব্যাপারে পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহানের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। পরে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে জলাবদ্ধতা নিয়ে কোনো কথাই বলবেন না বলে জানান।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৬ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২৪
আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।