ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর মেনে নেওয়ার আহ্বান ইলিয়াস কাঞ্চনের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর মেনে নেওয়ার আহ্বান ইলিয়াস কাঞ্চনের

ঢাকা: সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি মেনে নিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে শুরু হওয়া মহাসমাবেশে সংহতি জানিয়ে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের প্রতি এ আহ্বান জানান।

সমাবেশে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শত রক্তের বিনিময়ে আমরা দ্বিতীয়বার যে নতুন স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সেখানে আমাদের সবার আশা আকাঙ্ক্ষা ছিল এ রাষ্ট্রের মধ্যে আর কোনো বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু এখনো চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫ এর জন্য আমার সন্তানরা কষ্ট পাবে, বৃষ্টি উপেক্ষা করে দাবি আদায়ের জন্য দাঁড়াতে হবে এটা আমি কখনো আশা করিনি। আমার সন্তানরা কষ্ট করে লেখাপড়া করার পর আবার কষ্ট নিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে? তার (শিক্ষার্থী) যদি যোগ্যতা থাকে, তার যদি চাকরির বয়স এক বছরও বাকি থাকে, তাহলেও শেষ পরীক্ষার মধ্যে সে অংশগ্রহণ করবে। কারণ আমি মনে করি, একটি ছাত্র তার যোগ্যতা দিয়ে চাকরি অর্জন করবে। তারা কারো কাছে কোনো চাকরি চায় না, দয়া চায় না, সাহায্য-সহানুভূতি চায় না। তারা চায় তাদের অধিকার। যে অধিকার কোটা বৈষম্যের অধিকারের মধ্য দিয়ে নতুন স্বাধীনতা এসেছে, সেখানে কেন এখনো কেন এ বৈষম্য রয়েছে? তাদের এ যৌক্তিক দাবি এখনো কেন পূরণ হচ্ছে না।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আপনারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে দেশকে এ জায়গায় নিয়ে এসেছেন। তাহলে আবার কেন এ বৈষম্য (চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করা) থাকবে? এ বৈষম্য থাকতে পারে না। এটি অত্যন্ত একটি যৌক্তিক দাবি৷ আপনারাও ছাত্র ছিলেন, ছাত্র থেকে আন্দোলন করেছেন। আজকে এ ছাত্রদের প্রতি আপনাদের কেন সহমর্মিতা নেই? কেন দয়া নেই। আমি এটি আপনাদের কাছে জানতে চাই। কেন আপনারা কালক্ষেপণ করছেন? কেন তাদের দাবিকে মেনে নিচ্ছেন না। আমি আশা করবো, আপনারা এ যৌক্তিক দাবি মেনে নেবেন।

তিনি আরও বলেন, একটি ছাত্র এত কষ্ট করে, পরিশ্রম করে লেখাপড়া করার পর রুজি-রোজগারের জন্য যদি কোনো সুযোগ না পায়, তাহলে তার জীবনটাই শেষ। আমি চাই না, তারা ধুকে ধুকে কষ্ট পাক। আমি চাই, তাদের এই যৌক্তিক দাবি আপনারা (অন্তর্বর্তীকালী সরকার) মেনে নেন। আমার সন্তানদের যেনো আর এই দাবি নিয়ে দাঁড়াতে না হয়৷ চাকরির বসয়সীমা ৩৫ বছর মেনে নিন।

এর আগে সকাল ১০টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে 'চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ (শর্ত সাপেক্ষে উন্মুক্ত)' ব্যানারে এ মহাসমাবেশ শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায়। এ সময় তাদের চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

সমাবেশের অন্যতম সমন্বয়ক মো. জিয়াউর রহমান খান বাংলানিউজকে বলেন, চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি নতুন নয়। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ দাবি জানিয়ে আসছি। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তাই আমরা আজ মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছি।

মহাসমাবেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, আজকে সারা বাংলাদেশে থেকে শিক্ষার্থীরা আমাদের এ মহাসমাবেশে যোগ দেবেন। এরই মধ্যে ১৪টি জেলা থেকে শিক্ষার্থী এসেছেন। আরও অনেক জেলা থেকে শিক্ষার্থীরা আসবেন। আমরা এ সমাবেশ থেকে সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি, দ্রুত আমাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে যেন পরিপত্র জারি করে। দাবি আদায় না হলে আমরা প্রয়োজনে আজকে এখানে অবস্থান নেবো।

তবে জনদুর্ভোগ হয় এমন কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই বলে জানান জিয়াউর রহমান খান। তিনি বলেন, আমাদের সড়ক অবরোধের কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের সমাবেশ করবো। কিন্তু সমাবেশে জনসম্পৃক্ততা অনেক বেশি হলে সড়ক বন্ধ হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই আজকেই আমাদের দাবি পূরণের বিষয়ে সরকার থেকে ঘোষণা দেওয়া হোক। কারণ আমাদের বয়স থেমে নেই। আমরা আমাদের মেধা কাজে লাগিয়ে দেশের সেবা করতে চাই। তাই সরকারের পক্ষ থেকে আজ কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমাদের এখানে অবস্থান করার পরিকল্পনা রয়েছে।

মহাসমাবেশে মোশাররফ পাঠান, মামুনুর রশিদ রতন, মো. হারুন, মো. রাসেল, বিন্দু, মো. সাদসহ অনেক চাকরি প্রত্যাশী উপস্থিত রয়েছেন।

এদিকে এ মহাসমাবেশ ঘিরে শাহবাগে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের ব্যাপক সতর্ক অবস্থান দেখা গেছে। কয়েকশ পুলিশ সদস্য প্রস্তুতিসহকারে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করছেন। একটি রায়ট কার ও জলকামানও দেখা গেছে।

এ বিষয়ে পুলিশের রমনা জোনের এডিসি হাসান মাহমুদ নাছের বাংলানিউজকে বলেন, সমাবেশকারীরা তাদের আন্দোলন করতে পারেন, দাবি জানাতে পারেন। এতে আমাদের কোনো বাধা নেই। তবে জনদুর্ভোগ ও জননিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য আমরা অবস্থান নিয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
এসসি/জেএইচ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।