ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিভাগ বিভাজন নয়, শিক্ষা কমিশন করতে হবে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০২৪
বিভাগ বিভাজন নয়, শিক্ষা কমিশন করতে হবে ছবি: ডি এইচ বাদল

ঢাকা: নবম শ্রেণির পরিবর্তে একাদশ শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন রাখা এবং দিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষা কমিশন’ গঠন করা যেতে পারে বলে মত এসেছে শিক্ষা সংক্রান্ত বেসরকারি পর্যায়ের পলিসি ব্রিফিংয়ে।

বুধবার (২ অক্টোবর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গণসাক্ষরতা অভিযান আয়োজিত ‘বৈষম্য দূরীকরণে শিক্ষায় নিরবিচ্ছিন্ন রুপান্তর: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ শীর্ষক পলিসি ব্রিফ অনুষ্ঠানে একথা জানান প্রাথমিক শিক্ষা সংষ্কারে কনসালটেন্ট কমিটির আহ্বায়ক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. মনজুর মোরশেদ।

পলিসি ব্রিফ অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধয়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।

মনজুর মোরশেদ বলেন, নবম শ্রেণি থেকে বিভাজন বিভাজন সিদ্ধান্ত হয়েছিলো দশম শ্রেণি পর্যন্ত। এত অল্প বয়সে একটি বিভাজন অন্যান্য দেশ এখান থেকে সরে গেছে। আমাদের জন্যও এটি উপযুক্ত নয়, একাদশ থেকে হবে। এভাবে ঢালাও ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা ঠিক নয়, একটা বিচার বিবেচনা করে করা উচিত সেটাই আমরা বলতে চাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, একটি কমিশন হোক, আলাপ-আলোচনা শুরু হোক, তারপর একটা পরামর্শ দেবে কীভাবে করতে হবে, মধ্যবর্তী ও লম্বা সময়ের জন্য। এখন নেই সেটির দরকার। কী মেয়াদে হবে সেটা সংসদে সিদ্ধান্ত হতে পারে। সেটার জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হতে হবে।

মনজুর মোরশেদ বলেন, আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দেখছি। বৈষম্য সৃষ্টি করছে শিক্ষা ব্যবস্থা, বৈষম্য সৃষ্টির হাতিয়ার করা হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি, শিক্ষাকে অগ্রাধিকারে রাখা হয়নি। শিক্ষা সাইডলাইনে চলে গেছে। বিভন্ন মেগা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে কিন্তু চার কোটি শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষায় কোনো মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়নি। শিক্ষার বৈষম্য ও বিভ্রান্তির দূর করতে কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ নয়, নিয়মতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষার কনসালটেন্ট কমিটির সদস্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ইরাম মরিয়ম বলেন, শিশুদর খেলার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। খেলার মাধ্যমে তাদের বিকাশ ঘটে। শিশুদের মানসিক অবস্থা বোঝার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, মন ভালো না থাকলে শিখন ভালো হয় না। প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থের যে বড় বিষয় সেটার স্বীকৃতি দিতে হবে। সেটার জন্য প্রস্তুতি দরকার।

তিনি আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের অনেকেই যুক্ত ছিলেন, তাদের অনভূতি কাজ করছে। সেটা চিহ্নিত করা দরকার, কাজ করা দরকার।

নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা জৌতি এফ গমেজ বলেন, স্কুলে শিশুদের জন্য যদি পরিবেশ তৈরি করতে না পারি তাহলে হবে না। স্কুলগুলোতে শিশু উপযোগী উপকরণ নেই। টয়লেটর অবস্থা আরও খারাপ।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, লালমাটিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আকমল হোসেন, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি শাহিনুর আল আমিন, এডুকেশন ওয়াচের আহ্বায়ক ড. আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।  

প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষা কাঠামো তৈরি জরুরি

অনুষ্ঠানে লিখিত প্রস্তাবনায় বলা হয়, শিক্ষায় রুপান্তর এখন শুধু শিক্ষাক্রম বা নতুন পাঠ্যবই ছাপানোর কার্যক্রম নয়। একটি সার্বিক রূপান্তর প্রক্রিয়ায় শিখন-শেখানো পদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিখন-শেখানো সমগ্রী প্রস্তুত, মূল্যায়ন প্রক্রিয়া প্রণয়ন এবং শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিকল্পিত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এ নিরবচ্ছিন্ন এবং শিক্ষার সব স্তরে সামগ্রিকভাবে। শিক্ষার সর্বস্তরে সামঞ্জস্য বাজায় রেখে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত একটি নিরবিচ্ছিন্ন শিক্ষা কাঠামো তৈরি অতীব জরুরি।

একক মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব প্রয়োজন

শিক্ষা প্রশাসন, ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগ বিষয়ের সুপারিশে বলা হয়, সমন্বিত চাহিদা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষা বিষয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের বদলে একক মন্ত্রণালয়ে নেতৃত্ব প্রয়োজন। বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা ও গবেষণালদ্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি জাতীয় শিক্ষা রুপান্তর কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের পরামমর্শ নেওয়া যেতে পারে।

মানসম্মত শিক্ষক ছাড়া শিখ্ষায় কোনও উন্নয়ন টেকসই হবে না। এ জন্য একটি সমন্বিত জাতীয় শিক্ষক উন্নয়ন রূপরেখা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে শিক্ষকতা পেশার জন্য প্রস্তুতি, নিয়োগ, পদোন্নতি, ক্ষমতায়ন, বেতন কাঠামো, মাননিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।

শিক্ষকদের বছরব্যাপী হাইব্রিড ট্রেনিংয়ের আয়োজন

বাংলাদেশের শিক্ষকদের মান নিয়ে যথেষ্ট উদ্দ্বিগ্নতা রয়েছে। কাজেই অনেক শিক্ষক শিক্ষাক্রমের যেকোনও রূপান্তর বাস্তায়ন করার জন্য প্রস্তুত নন। তাই বছরব্যাপী হাইব্রিড ট্রেনিংয়ের আয়োজন করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা এবং বেতনবৃদ্ধির ব্যবস্থা খুবই জরুরি। কারণ শিক্ষায় যেকোনও সংস্কার বাস্তবায়নে শিক্ষকদের মোটিভেশনের বিকল্প নেই।

শিক্ষায় সংস্কার প্রসঙ্গে বলা হয়, যেসব সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তার কোনওটিই ঠিকমত করা সম্ভব হবে না, যদি শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানো না হয়। শিক্ষায় রুপান্তও বা সংস্কার টেকসই করতে হলে জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বিনিয়োগ করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০২৪
এমআইএইচ/জেএইচ

 


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।