পিরোজপুর: ‘টাকা দিয়া কী অবে? আমার বাবা-ই (ছেলে) বাঁইচা নাই, নাতী-নাতনী-বৌমা বাঁইচা নাই। মোর চোখের সামনে চাইরডা জীবন চলে গেল।
শুক্রবার ( ১১ অক্টোবর) দুপুরে এসব বলতে বলতে কাঁদছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শাওনের মা কহিনুর বেগম। এদিন তার হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরূপ রতন সিংহ। এ সময় মৃত শাওনের বড় ভাই জাহিদুল ইসলামসহ স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
গত বুধবার রাত সোয়া ২টার দিকে পিরোজপুর-নাজিরপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পিরোজপুরের সদর উপজেলার নুরানী গেট নামক স্থানে প্রাইভেট কার খালে পড়ে দুই পরিবারের আটজন নিহত হন।
নিহতরা হলেন, জেলার নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের হোগলাবুনিয়া গ্রামের মৃত আছাব মৃধার ছেলে মো. শাওন মৃধা (৩২), স্ত্রী আমেনা বেগম (২৫), দুই ছেলে শাহাদাত (৭) ও আব্দুল্লাহ (৩)।
আরেক পরিবারের নিহতরা হলেন, শেরপুর জেলার সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের নাজিম উদ্দিনের ছেলে মোতালেব (৪৫), স্ত্রী সাবিনা (৩৬), মেয়ে মুক্তা (১০) ও ছেলে শোয়াইব (২)।
নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ তুলে দিলাম। পরে এ ক্ষতিগ্রস্ত পবিরারকে চাল দেওয়া হবে। এ ছাড়া বিআরটিএর মাধ্যমে আরও অর্থ সহায়তা পাবে এ পরিবার।
বৃহস্পতিবার রাতে শাওনসহ তার পরিবারের চার সদস্যের জানাজা হয়। জানাজা শেষে পাশাপাশি তাদের কবর দেওয়া হয়।
নিহত শাওনের বড় ভাই জাহিদুল ইসলাম বলেন, দুই সন্তান নিয়ে সুখে-শান্তিতে ছিল আমার ভাই। এ দুর্ঘটনা আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। শাওন ঢাকার ভাসানটেক এলাকায় বসবাস করতেন।
নাজিরপুরের একটি কলেজ থেকে বিএ পাস করে তিনি নিজের গাড়ি ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সেনাবাহিনীর সিভিল বিভাগের এক অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে (সিএইচডি) কাজ করতেন। আর সেখানে মোতালেবের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) মো. মুকিত হাসান খাঁন বলেন, পিরোজপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পরিবারের আটজনের মারা যাওয়ার ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে দুর্ঘটনার কারণ জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে চালকের অসতর্কতা কিংবা ঘুমিয়ে পড়ার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২৪
আরএইচ