ঢাকা: স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য নির্বাচন করার তাগিদ দিয়েছেন রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলেছেন, আস্থার পরিবেশের অভাবে মানুষ বিনিয়োগে ভরসা পাচ্ছে না।
বুধবার (১ জানুয়ারি) রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি কনফারেন্স হলে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন আয়োজিত ‘নতুন বছরের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
গোলটেবিল বৈঠকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, সামাজিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে না আনলে সম্পদ সৃষ্টি সম্ভব হবে না। এজন্য মানুষের সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত করতে হবে এবং তা নিশ্চিত করবে রাজনৈতিক সরকার।
তিনি বলেন, এখন না বিনিয়োগের জন্য সহায়ক, না উৎপাদনের সহায়ক। এ জন্য যেটুকু সংস্কার না হলেই না, সেটুকু করে সংস্কার করে নির্বাচন দিয়ে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে, যাতে বিনিয়োগ হয়, কর্মসংস্থান হয়, উৎপাদন হয় এবং মানুষের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করা যায়।
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হলে ভুল বোঝাবুঝি হবে। অনৈক্য তৈরি হবে বলেও মনে করেন আবদুল আউয়াল মিন্টু।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ড. ইউনূস অনেক বড় ফুলবল মাঠে নেমেছেন। তিনি ঠিক করতে পারছেন না কোনটা আগে করবেন। সংস্কার অনেক বড় কাজ, অনেক দিন ধরে চলবে। আগে ঠিক করুন কোনটা আগে করবেন।
তিনি বেলন, আমি সমালোচনা করি রেখে ঢেকে। কারণ বেশি সমালোচনা করলে এ সরকার চলে যেতে পারে। তাহলে বড় সমস্যা হবে। ভোট দিয়ে চলে যান, পরের সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে।
ভাবতে হবে সংস্কৃতি বদলের। তা না হলে আবার আগের মতো সরকার আসবে, আবার বিপ্লব করতে হতে হবে। এমনটা আমরা চাই না। এমন একটা ব্যবস্থা চাই যেখান মানুষের চাওয়ার প্রতিফলন হতে হবে, বলেন মাহমুদুর রহমান মান্না।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এখন পর্যন্ত সরকার সংবিধান অনুযায়ী চলছে। আবার সংবিধান নিয়ে আলোচনা আছে, কথা আছে। এগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকতে হবে। এটা যেমন সরকার, তেমন আন্দলোনের জন্য খারাপ হবে। চাপিয়ে দেওয়া হলে আখেরে খারাপ হবে।
দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ বলেন, আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে মানুষের জীবন ও জীবিকা নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছে। সবার আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এটা ২৩ জন উপদেষ্টা দিয়ে সম্ভব নয়, দরকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব।
বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গত ১৫ বছরে সরকারের স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচন হয়নি আর এটাই আমাদের ব্যর্থতা। নির্বাচন করতে না দেওয়ার ফলে একটি সরকারের পতন হয়েছে।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে শিল্প কারখানাকে কঠিনভাবে ভুগতে হচ্ছে। একটি মহল মনে করছে, তারা যা ইচ্ছা তাই করবে, তাদের কেউ কিছু বলবে না। এ সময়ে ৫০টির উপরে কারখানা বন্ধ হয়েছে, লাখো শ্রমিক বেকার হয়েছে। আগের সরকারের ব্যাংকিং নীতির কারণে আরও কারখানা বন্ধ হবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কোনোদিন মানুষের মঙ্গলের জন্য পরামর্শ দেয় না উল্লেখ করে এই উদ্যোক্তা নেতা বলেন, আইএমএফ-এর পরামর্শ বেছে বেছে নিতে হবে। প্রয়োজন নেই, এমন পরামর্শ বাদ দিতে হবে।
১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, গ্রিক বীর ৩০ বছরের জঞ্জাল দূর করেছিলেন। ১৫ বছরের জঞ্জাল ড. ইউনূসের সামনে। গ্রিক বীরের মতো শক্তি, সামর্থ ও বুদ্ধিমত্তা ইউনূসের কাছে নেই। তবে ছাত্র-জনতা ১৫ বছরের জঞ্জাল দূর করেছে। তাদের ওপর যতটুকু সম্ভব ততটুকু প্রত্যাশা করা উচিত। বাকিটুকু করবে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার। যত দ্রুত সম্ভব একটি লিমিটেড লক্ষ্য ঠিক করে তা বাস্তবায়ন করে নির্বাচন দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সরে যাওয়া প্রয়োজন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, যারা বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিয়েছে, বিদেশে সম্পদ পাচার করেছে, গুম-খুন করেছে, তাদের বিচার করে বাংলাদেশকে সাজানোর পথ পরিষ্কার করে নির্বাচন হতে হবে।
তিনি বলেন, ৩১ ডিসেম্বর তরুণরা সেই কথা জানিয়ে গেছে, যা জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে থাকবে। আর সরকার সেই কাজ করবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রটারি জেনারেল হামিদূর রহমান আজাদ বলেন, রাজনৈতিক সীমা ’৪৭-এ পেয়েছি, সেটা থেকেই এই সীমানা। এ জায়গা থেকে আগামীর বাংলাদেশের চিন্তা করতে হবে।
আগে সংস্কার, নাকি আগে নির্বাচন, এখন এই বির্তক চলছে। সুন্দর নির্বাচনের জন্য আমরা অতীতে একসাথে আন্দোলন করেছি। কিন্তু সেই নির্বাচন আমরা পাইনি উল্লেখ কর তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কার হতে হবে। যে সংস্কার টাকা ভাগাভাগি ও রাতের নির্বাচনের পথ বন্ধ করবে।
জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা আরও বলেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। সংস্কার কমিশনে সবাই আমরা মতামত দিয়েছি। এখন আমাদের সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত করতে হবে। আমাদের সাথে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। আর সার্বভৌম মূল্যবোধের জায়গা হলো আমাদের ঐকমত্যের ভিত্তি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলি আহসান জুনায়েদ বলেন, আগের কোটাবিরোধী আন্দোলন শেখ হাসিনা সরকার দমন করে। সব কিছু আবর্তিত হয়েছে এক ব্যক্তি হাসিনার কারণে। ফলে আন্দোলনটাই আমাদের রূপ নেয় হাসিনার পতনের আন্দোলনে এবং ৫ আগস্ট সেই লক্ষ্য পূরণ হয়।
তিনি বলেন, হাসিনার পতনের পর বিপ্লবের সকল দল-মত যাতে আমাদের সাথে থাকতে পারে, সেই চিন্তা থেকে দেশব্যাপী কমিটি গঠন করি। সেখান থেকে আমরা দল গঠনে মানুষের আকাঙ্ক্ষা দেখতে পাই। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সংগঠিত হচ্ছি।
একটি স্বৈরাচার ক্ষমতা থেকে গেছে, আরেকটি দল ক্ষমতায় যেতে চাইছে, আগের দলের লোকরা যে সিন্ডকেট করেছিল, এখনও সেই সিন্ডিকেট রয়ে গেছে। শুধু বদল হয়েছ মানুষ। এ জন্য গণমানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজনৈতিক দলেরও সংস্কার প্রয়োজন, বলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলি আহসান জুনায়েদ।
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবু তাহেরের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাদের গনি চৌধুরী, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের সম্পাদক লুৎফর রমান হিমেল। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২৫
জেডএ/এমজেএফ