প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে বাড়তি মূসক ও শুল্ক কমানোর জন্য এনবিআর-এর সঙ্গে বৈঠক করেও কোনো ফল আসেনি। ফলে
এসব পণ্যের দাম বাড়ানোর কথা ভাবছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারীরা।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) নেতারা সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
এনবিআর সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্যে বাড়তি মূসক ও শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে দ্বিতীয়বারের মত বৈঠক করা হলো। বৈঠকে এনবিআর থেকে আশ্বাস পেলেও আগামী বাজেট পর্যন্ত অপেক্ষা আভাস দেন। একই দাবিতে অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠকে বর্ধিত ভ্যাট ও অন্যান্য কর কমানোর আশ্বাস পাওয়ার দাবি করেছিলেন ব্যবসায়ীরা।
সভা শেষে বাংলাদেশ ফুড অ্যাগ্রো-প্রসেসর অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি এম এ হাশেম বলেন, ফিনিশড প্রোডাক্টের ওপর যখন ট্যাক্স বাড়বে, অটোমেটিক্যালি দাম বাড়বে। দাম বাড়লে ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের বিক্রি কমে যায়, আমরা ট্যাক্স কম দিতে বাধ্য হই। শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হই। পুরো অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়ে। পুরো জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটা চেয়ারম্যানকে বুঝিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে যদি এর সমাধান না হয়, তাহলে আমরা আমাদের পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হবো। আর কতদিন লস দিবো।
প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী বলেন, আমার মনে হয় রেগুলেটরদের ভালো করে বোঝাতে সক্ষম হচ্ছি না। আমরা সরকারকে বুঝাতে চেষ্টা করছি ফুড আইটেমের ওপর ভ্যাট ও সাপ্লিম্যান্টারি ডিউটি বাড়ানো যৌক্তিক নয়। এনবিআর চেয়ারম্যানকে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করেছি। আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েও পুরানো দামে পণ্য সামগ্রী রেখেছি। যদিও ভ্যাটের বেড়েছে।
তিনি বলেন, আমি মনে করছি না যে এনবিআর-এর বৈঠকটা ফলপ্রসূ হয়নি। উনারা (এনবিআর) আমাদের কাছে থেকে সময় নিচ্ছেন। বাজেটের কথা বলছেন। আমরা কাজ করে যাব। যখন পণ্যের দাম বাড়াতে হয়, ভোক্তার জন্য খারাপ তো লাগেই।
এনবিআর, অর্থমন্ত্রণালয়কে বার বার বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, যদি ট্যাক্স বাড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে প্রসেসড পণ্যের চাহিদাও কমে যাবে।
বাংলাদেশ বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, আমরা এনবিআরকে বার বার বিরক্ত করার চেষ্টা করছি। চেয়ারম্যানকে বললাম কিন্তু কার্যকারিতা বাস্তবে দেখতে না পেয়ে আমরা আপনাদের আবার বিরক্ত করার জন্য এসেছি।
তিনি বলেন, বিস্কুটের প্যাকেটে আর কত ছোট করবো। আমরা অন্য অ্যাকশনে যেতে পারি। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে চাই না। বিস্কুট যত ছোট আছে, আর ছোট করতে চাই না। প্রাইজ অ্যাডজাস্ট না হলে, বাধ্য হয়ে এটা করতে হয়। আমরা চাই ভোক্তার যা প্রাপ্য সেটাই যেন সে পায়, যোগ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শতাধিক পণ্যের উপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বসানো হয়। এর ফলে বিস্কিট, কেক, আচার, চাটনি, টমোটো পেস্ট, টমেটো কেচাপ, টমেটো সস, আম, আনারস, পেয়ারা ও কলার পাল্পের মত পণ্যের উপর মূসক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলের রস ও ফ্রুট ড্রিংসের উপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। কৃত্রিম /ফ্লেভার ড্রিংস ও ইলেকট্রোলাইট ড্রিংস পণ্যের উপরের ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। আর ব্যবসায়ী পর্যায়ে ৫ শতাংশ মূসক বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান, এনবিআর সদস্য ড. মো. আবদুর রউফ (মূসক নীতি), দ্বিতীয় সচিব (মূসক) মো. বদরুজ্জামান মুন্সী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০২০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৫
জেডএ/এমএম