ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

গডফাদার হিসেবে পরিচিতদের সংসদের প্রার্থী হিসেবে চাই না: কাদের গণি চৌধুরী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫
গডফাদার হিসেবে পরিচিতদের সংসদের প্রার্থী হিসেবে চাই না: কাদের গণি চৌধুরী বক্তব্য রাখছেন কাদের গণি চৌধুরী

ঢাকা: যাদের পরিচয়ে ‘গডফাদার’ খেতাব আছে তাদের জাতীয় সংসদের প্রার্থী হিসেবে চান না বলে জানিয়েছেন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী।

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা স্কুল অব লিডারশিপ (এসওএলই-ইউএসও) আয়োজিত ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেমন প্রার্থী চাই’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে তিনি এ কথা জানান।

কাদের গণি চৌধুরী বলেন, আমার চাওয়া একজন সুস্থ প্রার্থী। যিনি তার মেধা মননে, চিন্তা চেতনায়, কর্ম পরিকল্পনায়, দেশাত্মবোধে সুস্থ হবেন। তাদের দায়বদ্ধতা থাকবে দেশ ও জনগণের কাছে। যাদের উদ্দেশ্য হবে জনবান্ধব আইন প্রণয়ন করা। যারা সংসদে নিয়মিত উপস্থিত থেকে আইন প্রণয়নে ভূমিকা রাখবেন। আমি অন্তত এমন প্রার্থী চাই না, যাদের নামের আগে ইয়াবা, গডফাদার যুক্ত। যারা গুম-খুনে জড়িত, যারা ছাত্র হত্যায় জড়িত, যারা ধর্ষণে জড়িত অথবা উৎসাহদাতা। তাদের অন্তত আমি দেখতে চাই না। আমি দেখতে চাই প্রকৃত রাজনীতিবিদেরা দেশ পরিচালনা করবে, যা থেকে আমরা যোজন যোজন মাইল দূরে।

ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলেন, গত পার্লামেন্টের ৬৭ শতাংশ সংসদ সদস্য ছিলেন ব্যবসায়ী। ১৫১ জন সংসদ সদস্য ছিলেন ব্যবসায়ী। তার ফলে জাতীয় সংসদ আর সংসদ থাকলো না, তারা ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল, গত সংসদ যেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) অফিস হয়ে গিয়েছিল। সেই ধরনের সংসদ আমি দেখতে চাই না।

বিএফইউজে মহাসচিব বলেন, সংসদ হলো সরকারের আইন প্রণয়নকারী সংস্থা। আমরা কি সংসদকে আইন প্রণয়নকারী সংস্থা হিসেবে দেখতে পারছি? আমাদের সংসদ সদস্যরা আইন প্রণয়নে ভূমিকা রাখতে পারছেন না। তারা সংসদে উপস্থিত থাকেন না। এর জন্য বহুলাংশে সংবিধান দায়ী। সংসদ সদস্যদের হাত-পা বেঁধে যখন বলা হয়, আপনি আপনার দলের বাইরে ভোট দিতে পারবেন না। দল থেকে যখন সাইবার সিকিউরিটি আইন করতে যায়, কেউ তার বিরোধিতা করতে চাইলেও, পারে না। সংসদ সদস্যদের যে দায়িত্ব, তারা সেটা না করে গায়ের জোরে ক্রমাগতভাবে প্রশাসনিক এবং নির্বাহী ক্ষমতাগুলো দখল করে নিচ্ছেন, এটা মোটেই তাদের কাজ না।

কাদের গণি চৌধুরী আরও বলেন, সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী এলাকার রাজা। তারা রাজনীতি থেকে টেন্ডার সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন। আমরা আগামীতে সেই ধরনের কোনো সংসদ সদস্য চাই না। স্থানীয় পর্যায়ের, কাজের বিনিময়ে খাদ্য, বয়স্ক ভাতা, নানা ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ প্রায় ৪০ ধরনের প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্প থেকে কারা সুবিধা পাবেন সেসব স্থানীয় সংসদ সদস্য ঠিক করে দেন। স্থানীয় সরকারের এখানে কোনো কাজই নেই। টেন্ডার কে পাবেন সেটিও ঠিক করে দেন সংসদ সদস্য। এলাকার শিক্ষা স্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে পুরোপুরি সম্পৃক্ত থাকেন সংসদ সদস্য। অথচ, এগুলো তাদের কাজ না। স্কুল-কলেজের শিক্ষক থেকে পিয়ন পর্যন্ত নিয়োগ এমপিদের দ্বারা হয়। আমরা পত্রিকায় পাতায় দেখেছি পিয়ন নিয়োগের জন্য এমপিরা টাকা নেন। এই কলঙ্ক আমরা ঘোচাতে চাই।

তিনি আরও বলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পার্লামেন্ট ওয়াচ নামে প্রতিবেদনে দেখা যায়- একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট কর্মঘণ্টার ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ ব্যয় হয়েছে আইন প্রণয়নে। অথচ, সংসদ সদস্যের কাজই হচ্ছে আইন প্রণয়ন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই হার ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ। ভারতের লোকসভায় এটা ৪৫ শতাংশ। আর আমাদের দেশে মাত্র ১৬ শতাংশ। একটি রাষ্ট্রের জাতীয় সংসদ যদি তার মোট কর্মঘণ্টার ৮২ শতাংশের অধিক সময় আইন প্রণয়ন বহির্ভূত কাজে ব্যয় করেন। তাহলে সেই সংসদ কি নিছক একটি আলংকারিক প্রতিষ্ঠান নয়? আমি সংসদকে কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চাই, সংসদকে আলংকারিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চাই না। এখান থেকে অনেকে এমপি-মন্ত্রী হবেন তাদের উদ্দেশ্যে আমার নিবেদন, বায়ান্ন বছর ধরে জাতীয় সংসদে যে কাজগুলো হয়ে আসছে, সেগুলো জাতীয় সংসদের কাজ নয়।

বিএফইউজে মহাসচিব বলেন, টিআইবির তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, সংসদ পরিচালনায় প্রতি মিনিটে ব্যয় হয় ২ লাখ ৭২ হাজার টাকা। সেই হিসেবে আমরা ৮৩ শতাংশ আইন প্রণয়ন বহির্ভূত কাজ করেছি, তাতে আমাদের কি পরিমাণ অর্থের অপচয় হয়েছে? বাংলাদেশের পার্লামেন্টে আইন প্রণয়নের ব্যয় করেছে মাত্র ১২ শতাংশ সময়। এই ১২ শতাংশ সময়ে তারা বিল উত্থাপন করছেন। বিলের ওপর আলোচনা করছেন, মন্ত্রীরা তাদের বক্তব্য রাখছেন, বিল পাস হয়ে যাচ্ছে। অবাক হওয়ার মতো ঘটনা। অথচ বিল পাস হতে আরও অনেক বেশি সময় লাগার কথা ছিল।

তিনি আরও বলেন, ভারতের লোকসভায় প্রতিটি বিল পাস হতে সময় লাগে ১৪১ মিনিট। বাংলাদেশে যেটা লাগে মাত্র ৩১ মিনিট। এই একত্রিশ মিনিটে কীভাবে আপনি আলোচনা করেন, কীভাবে সিদ্ধান্ত নেন এবং বিল পাস করে ফেলেন? আমাদের সংসদ ভবনকে আমরা একটি খেলার জায়গা বানিয়ে ফেলেছি। এই জায়গাটায় আমাদের যারা আছেন, নজর দেবেন। দশম সংসদে ৭৫ শতাংশের অধিবেশনে সংসদে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৩১ শতাংশ সংসদ সদস্য, মন্ত্রীরা মাত্র ১৭ শতাংশ উপস্থিত ছিলেন। জাতির সঙ্গে এর চেয়ে বড় প্রতারণা, শপথ ভঙ্গের কাজ আর কিছুই হতে পারে না। এগুলো যদি সমাধান করা না যায়, তাহলে সংস্কার কিংবা বিপ্লব যাই বলেন না কেন- সেটা কার্যকর হবে না।

সংলাপে স্কুল অব লিডারশিপের ভাইস প্রেসিডেন্ট মেজর (অব.) রুহুল আমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ডক্টর জামিল আহমেদ। সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসনের অধ্যাপক এ কে মতিনুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য  ড. সেলিমা রহমান, গণ সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজসহ রাজনীতিবিদ, গবেষক, সুশীল সমাজ, পেশাজীবী এবং সাংবাদিকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫
আরকেআর/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।