ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মালামাল সোজা চলে যাবে নেপাল-ভুটান-সেভেন সিস্টার্সে: ড. ইউনূস

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫
মালামাল সোজা চলে যাবে নেপাল-ভুটান-সেভেন সিস্টার্সে: ড. ইউনূস

ঢাকা: সমুদ্রবন্দর ও হিমালয়ের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও ভারত, বিশেষ করে ভারতের সেভেন সিস্টার্সের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বলয় গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন  প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, যদি এ অঞ্চলে যৌথ অর্থনীতি গড়ে তোলা যায়, মালামাল সোজা চলে যাবে নেপাল, ভুটানে, সেভেন সিস্টার্সে।

 রমরমা ব্যবসা হবে। আমাদের সবার অর্থনীতি এক সঙ্গে জাগবে।

রোববার (ফেব্রুয়ারি ১৬) সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস 
অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের যে অবস্থান, এটা খুব চমৎকার অবস্থান। দুই পাশে দুই মহাশক্তি আমাদের। ভারত আর চীন। তারা দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে। আমরা যেহেতু মাঝখানে আছি। আমাদেরকে ফেলে যেতে পারবে না। তাদের বাতাসেই আমরা উড়তে থাকবো। এ থেকে আমার বধ্যমূল ধারণা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অতি চমৎকার। তার অবস্থানের কারণে।

ড. ইউনূস বলেন, তখন জায়ান্টের কথা বলেছিলাম, দুই মহাশক্তি। এখন আবার দুই মহাশক্তির কথা বলি না, একই সঙ্গে, চার মহাশক্তি। আমাদের কি অপূর্ব সুযোগ, আমাদের সামনে বিস্তির্ণ মহাসাগর, সাগরের সঙ্গেই লাগোয়া উপকূল ভূমি, এ এক মস্তবড় সুযোগ। পৃথিবীর দরজা আমাদের সামনে খোলা। আমরা এতদিন ব্যবহার করতে জানিনি। এখন যে মূহুর্তে আমরা এটার ব্যবহার শুরু করবো, আমাদের অর্থনীতিকে লোহার দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখলেও বেঁধে রাখা যাবে না।

তিনি বলেন, আমাদের উত্তরে হলো, বিখ্যাত হিমালয় পর্বতমালা, যেখানে জমে আছে আমাদের প্রয়োজনীয় শক্তি, জলবিদ্যুৎ, কত শক্তি দরকার বাংলাদেশের ওখানে সব জমা আছে। হারিয়ে যাচ্ছে না। শুধু নেবার অপেক্ষায়। শুধু প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে একটা সম্পর্ক করা যাতে করে আমরা, নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে যে দূরুত্বটুকু আছে ঐটুকু অতিক্রম করা। আর কিছু না।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ওরা এক পায়ে খাড়া, নেপাল বারে বারে বলছে আমাদেরটা নিয়ে যাও, আমরা এক পায়ে খাড়া নেবার জন্য। মাঝখানে ঐটুকু পথ আমাদের অতিক্রম করতে হবে। আশা করি তাদেরই কারণে, তাদের অর্থনৈতিক কারণে আমাদেরকে দেবে। এটা সবার মঙ্গলের জন্য। একজনের উপকার, একজনের অপকার এ রকম কিছু না। যদি আমরা সেই পথটা খুঁজে পাই, এখন সামান্য কিছু পাই এটা কিছু না, বড় আকারে যদি পাই, বাংলাদেশকে আটকে রাখার ক্ষমতা কারো নাই।

তিনি বলেন, আমরা মহাসৌভাগ্যবান এক জাতি। তার অবস্থানের কারণে। সেই জাতির দুঃখ কেন থাকবে আমি বুঝতে পারি না। এটা আমাদের কপালের দোষ, নাকি আমাদের চরিত্রের দোষ, না আমাদের চিন্তার দোষ। যদি হয়ে থাকে সেগুলো থেকে আমরা মুক্ত হই। আমরা তো তড়িৎ গতিতে এগিয়ে যেতে চাই। এটা একটা মহা শক্তিধর অর্থনীতি তৈরি হবে। আজকে কুমিরা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত যে উপকূল ভূমি। সেখানে যদি কাতারে কাতারে সব নৌবন্দর স্থাপন হয়, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত যদি আমরা দুনিয়ার সব জাহাজকে আমরা আশ্রয় দিতে পারি, কাজ করার জন্য সুযোগ সুবিধা দিতে পারি। আমাদেরকে আটকাবে কে? শুধু সমুদ্র বন্দর আমরা ব্যবহার করবো, আমাদের মালামাল যাবে তা তো না।

যৌথ অর্থনীতি গড়ে তুললে সবাই লাভবান হবে জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমাদের নিজস্ব একটা অর্থনৈতিক অঞ্চল আছে, সেই অঞ্চলকে আমরা এখনো খুলতে পারি নাই। কিন্তু এ অর্থনৈতিক অঞ্চল অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। আমাদের অঞ্চল হলো, উত্তরে নেপাল আমাদের অঞ্চল, নেপালের সৌভাগ্য তারা হিমালয় পর্বতের পাদদেশে আছে। দুর্ভাগ্য হলো সমুদ্রের দেখা তাদের হয় নাই। তাদের সমুদ্র দেখতে হলে আমাদের মাধ্যমে দেখতে হবে। সে পথ আমরা করে দেই, যৌথ অর্থনীতি গড়ে তুলি। তার সমুদ্রের অভাব আছে, আমাদের হাইড্রো পাওয়ারের অভাব আছে—এই দুই অভাব একসঙ্গে পূরণ করি।  

তিনি বলেন, ভুটান, একই কাণ্ড, তারও সমুদ্র দর্শন হয় নাই। তাদের সমুদ্র দেখতে হলে আমাদের মাধ্যমে আসতে হবে। আমরা তাকে স্বাগত জানাই। তেমনিভাবে ভারতের পূর্বাঞ্চল, নেপাল-ভুটানের মতো একই অবস্থা, ভারতের সেভেন সিস্টারস এরও অবস্থা। তার সমুদ্র দর্শন হয় না।  তার সঙ্গেও আমরা যোগ দেই এক সঙ্গে, আমরা একসঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে পারি। আমাদের যে সমুদ্রবন্দর দিয়ে তাদের মালামাল আনা-নেওয়া হবে, আমাদের মালামাল আনা নেওয়া করবে। তাদের কাছে যাবে  চলবে।  তাদের অর্থনীতি, আমাদের অর্থনীতি এক সঙ্গে জাগবে। তারাও খুব কষ্টের অবস্থায় আছে, তারা খুব ভালো অবস্থায় নাই। এই সুযোগ পেলে তারাও আনন্দিত, তাদের ব্যবসা, আমাদের ব্যবসা, রমরমা ব্যবসা হবে। এক সঙ্গে ব্যবসা হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশায় ভুগি। হতাশার তো কোনো কারণ নেই। এটা আনন্দের বিষয় আমাদের যে অবস্থান, সুযোগ সুবিধা। শুধু এগুলোকে আহরণ করা, কাজে লাগানো দরকার। প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এই প্রক্রিয়াকে জোরদার করতে হবে। যাতে আমরা এই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে পারি। মালামাল সোজা চলে যাবে নেপালে, সোজা চলে যাবে ভুটানে, সোজা চলে যাবে সেভেন সিস্টার্সে।  তাদের মালামাল আমাদের মধ্যে দিয়ে যাবে। আমাদের ব্যবসা তাদের ওখানে যাবে, তাদের ব্যবসা আমাদের এখানে আসবে। এটাই তো হলো অর্থনীতি। কাজেই প্রাকৃতিক দিক থেকে আমরা খুবই সৌভাগ্যবান।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫
এমইউএম/এমএম
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।