ঢাকা, রবিবার, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

রাঙামাটিতে ছাত্রলীগের ‘আয়না ঘরে’র সন্ধান

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫
রাঙামাটিতে ছাত্রলীগের ‘আয়না ঘরে’র সন্ধান

রাঙামাটি: পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে এবার ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের ‘আয়না ঘর’ এর সন্ধান মিলেছে। এ ঘরে সাধারণ মানুষদের বন্দি করে চাঁদা আদায়, মাদক কারবার, ভারতীয় অবৈধ সিগারেটের ব্যবসা, ইভটিজিংসহ নানা অপকর্ম পরিচালনা করা হত।

এ আয়না ঘরটি জেলা শহরের লেকার্স পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ সড়কের আলম ডক ইয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত। আয়না ঘরটির পরিচালনা করতেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জেলা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান বাপ্পী, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন কায়সার এবং বাপ্পীর দুই সহোদর ছাত্রলীগ নেতা মো. রাব্বী এবং মো. রাকিবসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন।

অভিযোগ রয়েছে, এ গ্যাংটি পুরো এলাকায় অর্ধকোটি টাকারও বেশি চাঁদাবাজি করেছে। যেখানে নতুন ভবন গড়ে ওঠে সেখানেই হানা দিতেন তারা। চাঁদা না দিলে কাজ বন্ধ রাখা হত।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, গ্যাংটি ওই এলাকায় সাবা টাওয়ারের মালিক প্রবাসী মো. ইউনুছকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দশ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। শুধু তাই নয়; ওই ভবনের নিচতলায় আয়না ঘর বানিয়ে সাধারণ মানুষদের আটক করে মারধর করে চাঁদা আদায় করে যাচ্ছে।

সাবা টাওয়ারের কেয়ারটেকার মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, আমার মালিকের থেকে সন্ত্রাসীরা চাঁদা আদায় করলেও কত টাকা দিয়েছে তা আমি জানি না। আমরা ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারিনি।

মাফিয়া গ্যাংটির অত্যাচারের শিকার ভুক্তভোগী শ্রমিক মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ২০২৪ সালের ২৮ জুন ঠেলা গাড়ি করে মাশরুম নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে এবং তার দুই সঙ্গী  মো. মনির ও মো. হাফিজকে আটক করে সন্ত্রাসী বাপ্পী এবং তার ক্যাডাররা তাদের আয়না ঘরে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে। প্রাণে বাঁচতে তিনি আটক থাকা অবস্থায় তার স্ত্রীকে ফোন করে চার লাখ টাকা দিয়ে ওইদিন রাতে মুক্তি পান।

জাহাঙ্গীর বলেন, চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি চক্রটির বিরুদ্ধে রাঙামাটির কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।

ওই এলাকার স্থানীয় ভুক্তভোগী মো. করিম এবং রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মরহুম শাহ আলমের কেয়ারটেকার রবিউল হোসেন বাবলু বলেন, সন্ত্রাসী বাপ্পীর গ্যাংয়ের সদস্যরা আয়না ঘরে আমাদের ভবন তৈরির মিস্ত্রিদের তুলে নিয়ে বেধড়ক মারধর এবং নগদ টাকা ও মোবাইল ছিনতাই করে। এরপর চাঁদা দাবি করে। থানায় অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি বলে জানান তিনি।

ভুক্তভোগী রং মিস্ত্রী আকতার হোসেন বলেন, এই এলাকায় নির্মিত একটি ভবনে রং করার কাজে বাধা দেয় সন্ত্রাসী বাপ্পীর ছোট ভাইরা। ভবন মালিক পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিলে কাজ করা যাবে বলে জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয় দোকানদার আব্দুল হক বলেন, চাঁদা না দেওয়ায় সন্ত্রাসী বাপ্পী গংরা আমার দোকানের জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে।

এলাকার স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী বদিউল আলম বলেন, সন্ত্রাসী বাপ্পী এবং তাদের গ্যাংয়ের সদস্যদের চাঁদা না দেওয়ায় আমাদের জায়গায় ঘর করতে দেয়নি।

স্থানীয় ব্যক্তি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক নেতা জয়নাল আবেদীন জুনু সওদাগর এবং রাঙামাটি আসবাবপত্র ব্যবসায়িক কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের এর সাবেক সভাপতি হাজী কামাল উদ্দিন চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে আন্দোলনের পাশাপাশি এসব কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

তবে সম্প্রতি আনোয়ার হোসেন কায়সারকে চট্টগ্রাম থেকে পুলিশ আটক করলেও গ্যাংটির সন্ত্রাসী কার্যক্রম এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে।

রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মারুফ আহমেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার জন্য বিশেষ অভিযান চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাঙামাটি জেলা পুলিশ কর্তৃক এ অভিযান অব্যাহত আছে। যারা ভুক্তভোগী রয়েছে তারা অভিযোগ দিলে আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।