সিলেট: পবিত্র রমজান মাসের শুরু থেকে ক্রেতাদের মন তুষ্ট করতে সিলেটে বাহারি ইফতার আয়োজন লক্ষ্য করা গেছে। প্রতিবছরের মতো এবারও নগরের নামিদামি রেস্তোরাঁ থেকে মধ্যম সারির রেস্তোরাঁয় এমনকি পথের ধারেও রয়েছে মুখরোচক ইফতারের সমাহার।
প্রতিটি রেস্তোঁরায় অন্তত শত রকমের রকমারি ইফতার তৈরি করা হচ্ছে প্রতিদিন। ইফতার কিনতে ক্রেতাদের আড়ম্বরপূর্ণ ভিড় রমজানের বৈচিত্র্যের জানান দেয়। ঘরের আয়োজনের পাশাপাশি অনেকে বাইরে থেকেও নানা জাতের ইফতার কিনে নিতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন বিকেল থেকে সরগরম হয়ে ওঠে সিলেটের ইফতারির বাজার। রেস্তোরাঁ ও অস্থায়ী দোকান বসানো হয়েছে শামিয়ানা টানিয়ে। ঐতিহ্যের দিক থেকে সিলেটে রোজাদারদের কাছে অতি পছন্দের পাতলা খিঁচুড়ি, গরুর মাংসের আখনি (তেহারি), মোরগ পোলাও, চিকেন, বিফ, ছোলা, পাকুড়া, পিঁয়াজো, শাকের বড়া, জিলাপি, আমিতি (শাহি জিলাপি) রয়েছে রোজাদারদের পছন্দের তালিকায়।
পানসী রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এবারো সিলেটের ঐতিহ্যবাহী রকমারী সব ইফতারের সর্বোচ্চ সংখ্যক আইটেম রেখেছি। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিফ আখনী, চিকেন আখনী, ভুনা খিঁচুড়ি, পাতলা খিঁচুড়ি, সুতাঁ জিলাপি, ছানার জিলাপি, শাহি জিলাপি, মাজারি ও ছোট জিলাপি, বেগুনি, আলুর চপ, ডিমচপ, পিঁয়াজু, লাল শাঁকের বড়া, ছোলা ভুনা, খিঁচুড়ি প্যাকেট, চিকেন বটি কাবাব, চিকেন বল, বিফ চাপ, বটি কাবাব, জালি কাবাব, শামী কাবাব, চিকেন পাকুড়া, চিকেন উইংস,শিক কাবাব, চিকেন বিরিয়ানি, কাচ্চি বিরিয়ানি, শাহী হালিম, বিফ নেহারি হালিম, চিকেন সাসলিক, ফিস কাবাব, চিকেন ড্রাম স্টিক, ফ্রাই চিকেন, চিকেন বারবিকিউ লেগ, চিকেন শর্মা, শরবত, পুডিং, দই,ফালুদা, ফিরনির আয়োজন রয়েছে।
পানসি’র ন্যায় সব রেস্তোঁরায় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ইফতারের রকমারী আয়োজন ও প্যাকেজের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। ২০০ থেকে হাজার টাকা দামের প্যাকেজও আছে রেস্টুরেন্টগুলোতে।
সিলেটে সুলতান ডাইন, নয়সড়ক নবাব রেস্টুরেন্ট, কুমারপাড়ায় আব্বাস রেস্টুরেন্ট, তাঁতিপাড়ায় ম্যাজিশিয়ান, উপশহরে ফুড হাট, মদিনা মার্কেটে, চিলি রেস্টুরেন্টের মতো রেস্টুরেন্টগুলোতে অভিজাত শ্রেণীর মানুষের ভিড় করতে দেখা গেছে।
শিবগঞ্জের লাযযাত রেস্টুরেন্টে ইফতার ম্যানুতে রাখা হয়েছে ৩০টির মতো বাহারি আইটেম। প্যাকেজে রাখা হয়েছে ২৩০, ২৫০ ও ২৭০ টাকার তিনটি প্যাকেজ।
হযরত শাহজালাল দরগা সংলগ্ন কাশ্মীরি কাচ্চি এবং বিরিয়ানি হাউজের ম্যানেজার হাম্মাদ সাদী নাঈম বলেন, এ বছর আগের তুলনায় পর্যটক কম। হোটেল রেস্তোরাঁর ব্যবসা পর্যটক কেন্দ্রিক। তাই, অন্য বছরের তলনায় এ বছর বিক্রি কম। এক প্যাকেজে আছে চিকেন তেহরি,খেজুর,পিঁয়াজু, আলু চিপস, শাকের পাকুড়া ছোলা, বেগুনি, জিলাপি। গত বছরের মতো এবারো ১৫০ টাকাতেই বিক্রি করা হচ্ছে। পৃথক প্যাকেজে আছে চিকেন,খেজুর,পিয়াজু, আলু চিপস,শাকের পাকুড়া ছোলা, বেগুনি, জিলাপির গত বছরের মতো এবারো ১৩০ টাকাতেই বিক্রি করছি। তবে গত বছরের চেয়ে এ বছর জিলাপির চাহিদা বেড়েছে বলে জানান তিনি।
সিলেট বিরিয়ানি ও ভুনা খিচুরি হাউজের মালিক জয়নাল আবেদিন বলেন, এ বছর গত বছরের তুলনায় বিক্রি কিছুটা বেড়েছে মনে করছেন। তবে রাস্তার কাজ চলার কারণে গত বছর বিক্রি কম ছিলো। এবার ছোট বাখরখানির দাম একটাকা বাড়িয়ে ৬ টাকা বিক্রির করা হচ্ছে। তবে জিলাপির দাম গত বছরের মতো থাকলেও চাহিদা সামান্য বেড়েছে লাগছে।
এছাড়া সিলেটের আম্বরখানা,মদিনা মার্কেট,শাহজালাল ইউনিভার্সিটি গেইট, সুবিধবাজার, টিলাগড়,শিবগঞ্জ, উপশহর,বন্দরসহ সব জায়গায়ই স্থানীয়দের কেনাকাটার ভিড়। সিলেটে সচারাচর প্রচলিত আখনি, পোলাও,খিচুড়ি, নেহারি, তেহরি ইত্যাদি ইফতারি পণ্য ছাড়াও অভিজাত মিষ্টির দোকানগুলো যেমন ফুলকলি, মধুবন, স্বাদ,দুধওয়ালা, মিঠাই, রাজমহলসহ প্রায় প্রতিটি রেস্টুরেন্টেই বেড়েছে ভিড়। ৪০ থেকে ৬০ পদের বাহারি ইফতার সামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানে।
মিঠাই বেকারি অ্যান্ডস সুইটস এর শিবগঞ্জ শাখার ম্যানাজার খলিলুর রহমান জানান, মিঠাই সারা দেশের মতো সিলেটও রমজান উপলক্ষে বিশেষায়িত আখনি প্যাকেজ রেখেছে। এছাড়াও দই, ফিরনি, রসমালাই মিষ্টিতো আছেই। ঈদকে সামনে রেখে নিদিষ্ট খাদ্যপণ্যের পর থাকছে ‘লাকি উইনার প্রাইজ ইভেন্ট অফার’।
রাজবাড়ী রেস্টুরেন্টে ইফতার সামগ্রী কিনতে আসা যুবক আহমেদ মাহফুজ বলেন, জিনিসপত্রের দামের তুলনায় ইফতারের দাম মোটামুটি স্বাভাবিক আছে। তবে এ বছর অন্য বছরের তুলনায় আয়-রোজগার কম, তাই চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছেমতো ইফতার কিনতে পারছি না।
পানসী রেস্টুরেন্টে আসা আমেরিকা প্রবাসী বদরুল ইসলাম সাজু ও তার বন্ধু সোহেল আহমেদ বলেন, এ বছর রমজানে আবহাওয়া ভালো যাচ্ছে। তাই বন্ধু ও পরিজন নিয়ে বাইরে ইফতারি খেতে আসছি। এবার অনেকের আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় রেস্টুরেন্টগুলোতে অন্য বছরের তুলনায় ভিড় কম মনে হচ্ছে।
ফুড পান্ডার ফুড ডেলিভারিতে কর্মরত রাইডার রনি দাস জানান, ইফতারে অনেক কলেজ ভার্সিটির স্টুডেন্টরা পিজ্জা, বার্গার, চাউমিন, স্পেশাল বিরিয়ানির অডারো করেন। রমজান উপলক্ষে রাইডারদের ডেলিভারির পরিমাণ যেমন বাড়ে, তেমনই ডেলিভারি চার্জ ও বাড়তি রাখা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৫
এনইউ/জেএইচ