কমলাপুর স্টেশন থেকে: চলমান অবরোধে ট্রেনের শিডিউলে দেখা দিয়েছে চরম বিপর্যয়। একদিকে ট্রেনে নাশকতা, অন্যদিকে যাত্রা বাতিল।
শনিবার (১০ জানুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশনে উপস্থিত থেকে দেখা যায়, বেশিরভাগ ট্রেনই নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা পর স্টেশনে এসেছে এবং ঢাকা থেকে ছেড়েছে।
খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা ছেড়েছে দুপুর ১২টা ২০মিনিটে। চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী সকাল ৭টা ৪০মিনিটের বদলে ছেড়েছে ১২টায়। জামালপুরগামী অগ্নীবীণা ৯টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও তা ছেড়েছে ১১টায়।
সিলেটের উদ্দেশ্যে জয়ন্তিকা দুপুর ১২টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা সন্ধ্যা ৭টার আগে কমলাপুর স্টেশনে আসার কোনো লক্ষণ দেখছেন না বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। ট্রেনটি এলেও ঠিক কয়টায় ছেড়ে যাবে তাও জানাতে পারছেন না রেলওয়ে কর্মকর্তারা।
সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেসকে দুপুর পৌনে ২টা পর্যন্ত ছাড়তে দেখা যায় নি।
এদিকে দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস সকাল ১০টায় ছাড়ার কথা থাকলেও স্টেশন থেকে জানানো হয় রাত সোয়া ১০টায় ট্রেনটি ছাড়বে।
শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামগামী মহানগর গোধূলি ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে রেললাইন উপড়ে ফেলার কারণে তার যাত্রা বাতিল করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী মহানগর প্রভাতীরও যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে শিডিউল বিপর্যয় আর যাত্রা বাতিলের কারণে কমলাপুর স্টেশনে দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টার সাখাওয়াত হোসেনকে দেখা গেছে যাত্রীদের প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে। পরবর্তী ট্রেনগুলো ঠিক কয়টায় ছাড়বে- যাত্রীদের এমন প্রশ্নেরও সঠিক উত্তর হিসাব করে সঠিক দিতে পারছেন না তিনি।
বাংলানিউজকে সাখাওয়াত বলেন, আমরা চেষ্টা করছি এমন পরিস্থিতিতেও ট্রেনের চাকা সচল রাখতে। কিন্তু ট্রেন দুর্বৃত্তের কবলে পড়ায় শিডিউলে এদিক-ওদিক হচ্ছে।
কমলাপুর স্টেশন ঘুরে আরও দেখা যায়, হাজারো যাত্রী ট্রেনের জন্য অপেক্ষমাণ। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে।
সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের যাত্রী খন্দকার সোহরাব হাসান বাংলানিউজকে বলেন, দুপুর ১২টায় ট্রেনটি আসার কথা, কিন্তু স্টেশনে পরিবার নিয়ে দেড়ঘণ্টা বসার পর জানলাম সন্ধ্যার পর ট্রেনটি কমলাপুরে পৌঁছাতে পারে।
চট্টগ্রামগামী মহানগর গোধূলির যাত্রা বাতিল হওয়ায় এর টিকিট ফেরতের হিড়িক দেখা গেছে কাউন্টারের সামনে। টিকিট ফেরত দিতে কাউন্টারের সামনে উপছে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা অবরোধের মধ্যে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে রেললাইন কেটে ফেলায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী লাইনচ্যুত হয়।
শনিবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে নাঙ্গলকোট রেল স্টেশনের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে ঘটনার পর থেকে প্রায় ছয় ঘণ্টা বন্ধ থাকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগ।
জানা যায়, ভোর রাতে দুর্বৃত্তরা স্টেশনের পাশে তিন ফুটের মতো রেললাইন কেটে ফেলে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর গোধূলি এক্সপ্রেস সেখানে পৌঁছালে ইঞ্জিন ও একটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
লাইনচ্যুত বগি ও ইঞ্জিন উদ্ধার এবং লাইন মেরামতের পর বেলা পৌনে ১১টার দিকে ফের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অবরোধের প্রথম দু’দিনে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক থাকলেও তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার ভোররাতে জয়পুরহাটে ৩০ ফুটের বেশি রেল লাইন উপড়ে ফেলা হয়। একই রাতে মৌলভীবাজারেও একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে কয়েকজন আহত হন, লাইনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচনের দাবিতে ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসের’ কর্মসূচিতে বাধা পাওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশজুড়ে টানা অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। শনিবার অবরোধের ৬ষ্ঠ দিন চলছে।
এর আগে ২০১৩ সালের প্রথমার্ধে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটের হরতাল-অবরোধে দেশের বিভিন্ন স্থানে রেললাইন ধরে নাশকতার চেষ্টা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৪