ঢাকা: ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পরিচালনা ও সফটওয়্যার ম্যানেজমেন্টের জন্য ভারতের কারিগরি সহায়তা নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য শিগগিরই তথ্য ও প্রযুক্তি (আইসিটি) শাখার একটি টিম ভারত পাঠানো হবে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ইভিএম ম্যানেজমেন্টে কোনো সহায়তা না দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মূলতঃ নির্বাচনে হঠাৎ সৃষ্ট যান্ত্রিক ত্রুটির সমাধান বের করাসহ বিভিন্ন কারিগরি জ্ঞান নিতেই কর্মকর্তাদের ভারত পাঠানো হবে। কেননা, ২০১০ সালে এই ভোটযন্ত্র দেশের নাগরিকদের কাছে পরিচয় করানো হলেও এখন পর্যন্ত ইসির নিজস্ব কোনো কারিগরি টিম নেই। কেবলমাত্র ২০১৩ সালের নির্বাচনে ইভিএম পরিচালনার জন্য বুয়েটের কাজ থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া হয়েছিলো।
জানা গেছে, প্রথমবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছাড়া পরবর্তী প্রত্যেক নির্বাচনেই এই মেশিনে ত্রুটি দেখা দিয়েছিলো। নরসিংদী পৌরসভা, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন, রংপুর সিটি নির্বাচন ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনের সময় কয়েকটি মেশিন নষ্ট হয়ে যায়। যে জন্য ব্যাপক চাপের মুখেও পড়তে হয়েছিলো ইসিকে।
এছাড়া রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় একটি ভোটকেন্দ্রে একটি মেশিন বিকল হলে সেটি আজও মেরামত করা যায়নি। এছাড়া সমস্যার কারণও খুঁজে পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানিয়েছে, ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রাজশাহীর টিচার ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেওয়া হয়। ওইদিন একটি ইভিএমের ভোট গণনা করা যায়নি। মেশিনটির কন্ট্রোল ইউনিটে কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছিলো। এতে ফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। শুধু তাই নয়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের নেতৃত্বে একটি টিম রাত ২টা পর্যন্ত ইসিতে এসে বসেছিলেন। পুরো ঘটনার বিস্তারিত জানার পর তারা সেদিন শান্ত হয়েছিলেন।
এছাড়া তাড়াতাড়ি ফল প্রকাশের জন্য নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজকে খালেদা জিয়া ফোন দিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে ইসির সিস্টেম ম্যানেজার রফিকুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বুয়েটের সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা লিখিভাবে ত্রুটি সমাধানে কোনো সাড়া দেয়নি। গত ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি ও বুয়েটের সঙ্গে একটি বৈঠক করা হয়েছে। সে বৈঠকেও এই ত্রুটির কারণ ও সমাধান নির্ণয় করা যায়নি।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, মেশিনগুলো তৈরির চুক্তির সময় প্রশিক্ষণের বিষয়ে কোনোকিছু বলা হয়নি। যে কারণে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা মেশিনটি পরিচালনা ছাড়া আর কিছু জানেন না।
ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, বুয়েটের সঙ্গে চুক্তিটি ছিলো ওয়ান ম্যান শো। সেজন্য পরে আর তারা সহযোগিতা করেনি। তাই নিজেরাই যাতে এই মেশিনটি চালানো যায়, এজন্য একটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠনে কাজ চলছে। কর্মকর্তাদের শিগগিরই ভারত থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হবে। কেননা, ভারত ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এই যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ভারতের ইভিএমের সঙ্গে আমাদের ইভিএমে অনেক দিক থেকেই মিল রয়েছে। ইসির আইসিটি শাখার ৫ থেকে ৬ জন কর্মকর্তার একটি টিম যাবে প্রশিক্ষণ নিতে। তবে এখানো বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। ভারতের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারা সম্মতি দিলেই পাঠানো হবে।
সচিব সিরাজুল ইসলামও ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, কোনো প্রতিষ্ঠান ভোট উপযোগী ইভিএম তৈরি করলে বিনিয়োগ করবে ইসি। এ ভাবনার অংশ হিসেবে এরইমধ্যে সিলেট মেট্রোপলিট্রন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুত করা ইভিএমও খতিয়ে দেখছে কমিশন।
বিগত নির্বাচন কমিশন ২০১০ সালে এ যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট নেওয়ার প্রচলন সীমিত আকারে চালু করে। সে সময় বুয়েটের কাছ থেকে দু’দফায় ৫৩০টি এবং বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে ৭০০টি ইভিএম কেনা হয়েছিলো।
অদূর ভবিষ্যতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করবে ইসি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৫