ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কির লেইগা ফাতেমারে স্কুলে নিলাম না রে...

মফিজুল সাদিক ও ঊর্মি মাহবুব | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৫
কির লেইগা ফাতেমারে স্কুলে নিলাম না রে... ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: আমার ফাতেমা নাই রে, আমার ফাতেমা কই গেছে রে! আর্মি-বিডিআর কেউ আমার ফাতেমার খবর দিতে পারে না রে, ফাতেমা পুইড়া কইলা হইয়া গেছে, অনেক বিচরাইছি (সন্ধান) রে, কোথাও পাই নাই রে।

রোববার (১১ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাটাসুর এলাকার পুলপাড় বস্তিতে লাগা আগুনে পুড়ে মারা যায় তিন বছর বয়সের ফাতেমা।

সন্তান ফাতেমার ছবি হাতে নিয়ে এভাবেই শোকের মাতমে চারপাশ ভারী করে তুলছিলেন মা আসমা বেগম। রায়ের বাজার হ্যাবলা ম্যানেজারের বাসায় আসমার আহাজারি-বিলাপে সান্ত্বনা দিতে যাওয়া লোকজনকেও চোখের পানি মুছতে দেখা যায়।

রোববার (১১ জানুয়ারি) সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও ততক্ষণে পুড়ে গেছে ফাতেমা। দুপুর সাড়ে ১২টার সময় উদ্ধার করা হয় তার মরদেহ।

সকাল ৭টার সময় আসমা বেগম তার বড় মেয়ে জয়নবকে নিকটস্থ জাফরাবাদ আদর্শবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিতে যান। যাওয়ার আগে তালাবদ্ধ ঘরে ছোট শিশু ফাতেমাকে কম্বলের নিচে ঘুম পাড়িয়ে দেন। আগুন লাগার খবরে বস্তিতে ছুটে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তার বসত ঘর, সঙ্গে কলিজার টুকরো ফাতেমাও।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফাতেমা যে ঘরে ছিল তার পাশের ঘর থেকেই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। শুধু ফাতেমা পুড়ে ছাই হয়নি, তার মতো আরও কয়েকজন শিশুকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

ফাতেমার বাবা আব্দুল জয়নাল রিকশাচালক। কাক ডাকা ভোরেই তিনি রিকশা নিয়ে বেরিয়ে গেছেন। তার বাড়ি শরীয়তপুর সদরে।

বারবার ফাতেমার কথা মনে করে মূর্ছা যাচ্ছিলেন আসমা। রঙিন ফ্রেমে বেঁধে রাখা বড় মেয়ে জয়নব ও ছোট মেয়ে ফাতেমার ছবি দেখিয়ে আহাজারি করে বলেন, আমি এইডা কী করলাম, কির লেইগা ফাতেমারে স্কুলে নিলাম না। স্কুলে নিলে মাইয়াডা বাঁইচা যাইতো। আমার মাইয়ার জোড় বেজোড় হয়ে গেল রে!

পুড়ে প্রায় কয়লা হয়ে যাওয়া মেয়ের শরীরটা বুকে জড়িয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন বাবাও, খোদা আমারে নিয়া যাইতা। আমার ফাতেমাডারে ক্যান নিলা রে।

বেলা পৌনে একটায় আরও একটি শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। তবে শিশুটির পরিচয় এখনও পাওয়া য়ায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।