ফরিদপুর: ফরিদপুর শহরের নিলটুলী মুজিব সড়কের রূপালী ব্যাংকের কর্পোরেট শাখা থেকে চুরি যাওয়া এক কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে এক কোটি ২২ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
রোববার বিকেলে এ টাকা উদ্ধার হয় বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পুলিশ সুপার জামিল হাসান।
তিনি জানান, ফরিদপুর শহরের উপকণ্ঠে রূপালী ব্যাংকের অফিস সহকারী আবুল কালাম আজাদের বাড়ির উঠানে গর্ত করে ড্রামে রাখা মাটিচাপা অবস্থায় এ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ব্যাংকের ভোল্ট থেকে টাকা চুরির পর রোববার সকালে ব্যাংকের দুই কর্মচারী এবং তিন আনসার সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এই জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতেই আবুল কালাম আজাদ স্বীকার করেন যে, তিনিই এ টাকা চুরি করে তার বাড়ির উঠানে গর্ত করে ড্রামে ভরে মাটি চাপা দিয়ে রেখেছেন।
পুলিশ সুপার জামিল হাসান জানান, আবুল কালাম আজাদ বৃহস্পতিবার অফিস ত্যাগের আগে ভোল্টে তালা না লাগিয়ে চলে যান। এরপর শুক্রবার রাতে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে ব্যাংকের ভেতরে ঢোকেন। পরে তিনি সেখান থেকে এক কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যান।
এ ছাড়া চুরি করা টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা তিনি আবুল কালাম আজাদ তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রাখেন।
এর আগে সহকারী পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, রূপালী ব্যাংকের ভোল্টে থাকা দুই কোটি টাকার মধ্যে এক কোটি ৫৭ লাখ টাকা চুরি গেছে। এ টাকা ফরিদপুর শহরের উপকণ্ঠ শিবরামপুরে আছে বলে আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।
টাকা উদ্ধারে সেখানে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ব্যাংকে টাকা চুরির ঘটনায় রোববার সকালে ব্যাংকের দুই কর্মচারী ও ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত তিন আনসার সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। আটকরা হলেন- ব্যাংকের অফিস সহকারী আবুল কালাম আজাদ, ব্যাংকের গার্ড ফারুক হোসেন, তিন আনসার সদস্য- লুৎফর, রফিক ও আশিকুল।
এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক খান শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটির পর রোববার সকালে ব্যাংকের ভোল্ট থেকে টাকা বের করতে গিয়ে ভোল্টের তালা খোলা দেখতে পান কর্মকর্তারা।
পরে খবর দিলে পুলিশ আসার পর তাদের নিয়ে তারা ভেতরে প্রবেশ করেন।
তিনি জানান, কর্পোরেট শাখা হওয়ায় ব্যাংকে বিভিন্ন শাখার দুই কোটির বেশি টাকা ছিল। সেখান থেকে বড় নোটের ব্যান্ডিলগুলোসহ (এক হাজার টাকার নোট) কত টাকা নিয়েছে, সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তবে দ্রুতই হিসাব করে তা বের করা হবে। বাকি টাকা (ছোট নোট) পুলিশ জব্দ করেছে।
ব্যাংকের গেট ও ভোল্টের কোনো তালা না ভাঙা থাকায় টাকা চুরির বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে করার পর পুলিশ ব্যাংকের দুই কর্মচারী ও পাহারার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়।
এদিকে, ঘটনা জানাজানির পর পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তবে টাকা খোয়া যাওয়ায় সকাল থেকেই ব্যাংকে লেনদেন বন্ধ রয়েছে। দুপুর তিনটা পর্যন্ত ব্যাংকে কোনো লেনদেন হয়নি।
বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রাহকরা লেনদেন করতে এসে ফিরে গেছেন। টাকা তুলতে আসা গ্রাহকেরা বেশি বিপদে পড়েন।
গ্রাহক ড. নজরুল ইসলাম টাকা তুলতে এসে বলেন, ব্যাংকে চুরি হওয়ায় টাকা তুলতে পারিনি। ছেলে ঢাকায় লেখাপড়া করে। তার খরচের টাকা পাঠানো জন্য টাকা তুলতে এসেছিলাম।
ফরিদপুরের সালথা উপজেলা থেকে জমির দলিল করার জন্য টাকা তুলতে আসা মাহফুজা বলেন, আজ জমি দলিল করার জন্য টাকা তুলতে এসেছিলাম। কিন্তু ব্যাংকে লেনদেন বন্ধ থাকায় আমাকে ফিরে যেতে হচ্ছে।
মাহফুজার মতো শত শত গ্রাহক লেনদেন না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মোহসিনুল হক জানান, ব্যাংকের গেট ও ভোল্টের কোনো তালা না ভাঙা থাকায় টাকা চুরির বিষয়টি রহস্যজনক।
তিনি বলেন, সন্দেহভাজন পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন আনসার সদস্য ও দুইজন ব্যাংক কর্মচারী রয়েছেন।
এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৫/আপডেটেড: ১৮৫৩ ঘণ্টা
** ফরিদপুরে রূপালী ব্যাংকের দেড় কোটি টাকা চুরি, আটক ৫